র‌্যাব পরিচয়ে তিন মাসে ৩০ ডাকাতি-ছিনতাই, ১০ কোটি টাকা লুট

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৫০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি ব্যাংকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা জমা দিতে যান শিক্ষার্থী ইসরাফিল। ব্যাংকে প্রবেশের আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে চারজন তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে একটি গাড়িতে তোলেন। এসময় ওই শিক্ষার্থীর কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল, মানিব্যাগ কেড়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে আগারগাঁও স্কুলের পাশে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তিদের গায়ে ছিল র‌্যাব লেখা কটি।

এই ঘটনার পর ইসরাফিলের দুলাভাই মোর্শেদ ভুঁইয়া বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। সোমবার পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হন এই চক্রের পাঁচ সদস্য। তারা হলেন- সুমন মিয়া, মো. মাসুদ রানা, আশরাফুল ইসলাম আপেল, ইকবাল হোসেন ইসলাম এবং সাইদুল হক। এর মধ্যে সুমন চক্রের হোতা। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে।

মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, তিন মাস আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে পুনরায় র‌্যাব পরিচয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি ও ছিনতাই করছিল চক্রটি। গেল তিন মাসে চক্রটি ৩০টির বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এভাবে হাতিয়ে নিয়েছে দশ কোটির বেশি টাকা। আলোচিত এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পেয়েছে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগ।

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর শ্যামলীতে তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, সম্প্রতি ইসরাফিল নামের এক ব্যক্তি শ্যামলী ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার টাকা তুলে রিং রোড পূবালী ব্যাংকে জমা দিতে আসছিলেন। রিং রোডের মারুফ অপটিকস নামক চশমার দোকানের সামনে পৌঁছালে একটি প্রাইভেটকারে থাকা র‌্যাবের কটি পরা ৩-৪ জন ব্যক্তি তার গতিরোধ করেন। র‌্যাব সদস্য পরিচয়ে তারা ওই ব্যক্তিকে টানা হেঁচড়া করে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জোরপূর্বক প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। পরে ইসরাফিলের চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা। একপর্যায়ে তাকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে ব্যাগে থাকা সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে শেরেবাংলা নগর এলাকার একটি স্কুলের পাশে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান।

আজিম বলেন, 'র‌্যাব পরিচয়ে এমন স্পর্শকাতর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শ্যামলী এলাকা ও আশপাশের প্রায় দুই শ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। এসময় একটি সন্দেহজনক গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয়।'

অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানতে পারে, রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন প্রাইভেটকার ব্যবহার করে র‌্যাব পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা তোলা ব্যক্তিদের গতিরোধ করত। পরে তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে সবকিছু লুট করে পালিয়ে যেত। এই ধরনের ঘটনায় তুরাগ, গাজীপুর সদর, কালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন থানায় তাদের বিরুদ্ধে অপহরণসহ দস্যুতার ঘটনায় মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

মোহাম্মদপুরে পুনরায় ডাকাতি করতে এসে ধরা:

পুলিশ বলছে, ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের ঘটনার পর পুনরায় সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) টাউন হল ইউসিবি ব্যাংকের সামনে প্রাইভেটকারে অবস্থান করছিল চক্রটি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এমন তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ তাদেরকে আটক করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া নম্বর প্লেট লাগানো একটি প্রাইভেটকার, ভুয়া নম্বর প্লেট, র‌্যাব লেখা কালো রংয়ের দুইটি কটি, একটি কালো ক্যাপ, একটি খেলনা পিস্তল, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি লাঠি ও পুলিশ লেখা দুইটি স্টিকার উদ্ধার করা হয়।

তিন মাসে ২৫টি ডাকাতি-ছিনতাইয়ের স্বীকারোক্তি

পুলিশ বলছে, তিন মাস আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে অভিযুক্তরা ৩০টির বেশি ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন। তারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বের হওয়াদের টার্গেট করে র‌্যাব পরিচয়ে সর্বস্ব লুটে নিতেন। তারা গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানা এলাকায় তিনটি, টাংগাইলের মির্জাপুর থানা এলাকায় একটি, হবিগঞ্জের মাধবপুর থানা এলাকায় একটিসহ ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় বিগত ৩ মাসে মোট ২৫টি ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। বাকিগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এসব ঘটনায় সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে ১১টি, মাসুদ রানার নামে ছয়টি, আশরাফুল ইসলাম আপেলের নামে ১১টি, ইকবাল হোসেন ইসলামের নামে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/এসএস/ইএস)