অন্যের স্বত্ব নিয়ে দুর্নীতি: কপিরাইট অফিসের দুই কর্মচারী এখন অঢেল বিত্ত ভৈববের মালিক

দৈনিক ১২০ টাকা বেতনে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে পিয়ন পদে যোগ দেন আব্দুল গাফফার। ২০১১ সালে কম্পিউটার অপারেটর পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ঢাকার সাভারে বাড়িসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি। বর্তমানে গাফফার সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে কর্মরত।
গাফফারের মতো কপিরাইট অফিসের আরেক কর্মকর্তা এ এন এম শাহজাহান ভূইয়াও অল্প দিনে করে ফেলেছেন বিপুল ধনসম্পদ। স্টেনোগ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি শুরু করে শাহজাহান এখন প্রধান সহকারী হিসেবে কর্মরত। তিনি কেনাকাটায় ১০টি মাউসের দাম ৬০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। এই হলো তার দুর্নীতির একটি ঘটনার নমুনা।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) তাদেরকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নিয়োগ ও টেন্ডারবাণিজ্য, জাল সনদ বাণিজ্য, অফিসে আসা সেবা গ্রহিতার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আছে, ২০২১ সালে কম্পিউটারের ১০টি মাউসের দাম ধরা হয় ৬০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে বিষয়টি তৎকালীন রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরীর নজরে এলে তিনি বিষয়টি লিখিতভাবে সমাধানে আব্দুল গাফফার ও শাহজাহান ভূইয়াকে চিঠি দেন। পরবর্তীতে জাফর রাজা চাকরি থেকে অবসরে গেলে বিষয়টি সেভাবেই পড়ে থাকে। এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন দুজন ভুক্তভোগী। এরপরই তদন্ত শুরু হয়।
কপিরাইট অফিসের বর্তমান রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত সচিব) মো. দাউদ মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। এটা নিয়ে মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’
অভিযোগের তদারকি কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) মো. মোখলেছুর রহমান বিদেশে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
প্রযোজক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, কপিরাইট অফিসের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারি ঘুষ নিয়ে একজনের কপিরাইট সনদ আরেকজনকে দিচ্ছে। এতে শতশত ছবি ডিজিটাল প্লাটফর্মে (ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে) দিয়ে তারা টাকা উপার্জন করছে। অথচ সিনেমার যারা মূল প্রযোজক ও পরিচালক তারা বিষয়টি জানেনই না। সালমান শাহ-শাবনুর অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র বিক্ষোভ, এই মন তোমাকে দিলাম, ঝড়, কাজী হায়াতের ইতিহাসসহ শতশত ছবির ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। বছরের পর বছর তারা অসাধু চক্রকে ভুয়া সনদ দিয়ে সিনেমাগুলো ইউটিউবে ছাড়ছে; এবং লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছে। এতে প্রযোজক বা নির্মাতারা কিছুই পাচ্ছেন না।’
এদিকে বিষয়গুলো তুলে ধরে একজন প্রযোজক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে তদন্ত করছে মন্ত্রণালয়।
অভিযোগ সম্পর্কে যা জানা গেল:
দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কপি ঢাকাটাইসের হাতে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, দুর্নীতি বাড়ছে কপিরাইট অফিসে। শাহজাহান ভূইয়া মাত্র ৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করেও কয়েক বছরের ব্যবধানে মালিক হয়েছেন অঢেল সম্পত্তির। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে কিনেছেন কোটি টাকার ফ্ল্যাট। রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র। একইভাবে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন আরেক কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার। করেছেন তিন তলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদ। অভিযোগ রয়েছে, তাদের দুজনের মদদেই যত অপকর্ম চলে কপিরাইট অফিসে।
পিয়নের পদে যোগ দেওয়া আব্দুল গাফফার কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে পদোন্নতি পেলেও তিনি ইসলামের ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন। এই পদে পদোন্নতি পেতে হলে আইটি বা কম্পিউটার সাইন্সের শিক্ষার্থী হতে হয়। তারপরও পদোন্নতি পান গাফফার। বর্তমানে তিনি সহকারী প্রোগ্রামার।
এই গাফফার বর্তমানে অবৈধভাবে সফটওয়্যার ও ওয়েবসাইট পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্বে আছেন। অভিযোগ আছে, টাকার বিনিময়ে তিনি কয়েকটি লেভেল কোম্পানির এজেন্ট হয়ে সনদ দিচ্ছেন। এতে প্রযোজকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এছাড়া আরেক কর্মকর্তা শাহজাহান ভূইয়া শুধু সনদ বাণিজ্যই নয়, কপিরাইট অফিসের যন্ত্রাংশ কেনায় ব্যাপক অনিয়ম করেন। এর মাধ্যমে তিনি লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ঢাকায় গড়েছেন ফ্ল্যাট ও অঢেল সম্পদ।
গ্রিনফিল্ড করপোরেশনের নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা করেন শাহজাহান ভূঁইয়া। অভিযোগ আছে, ভুয়া বিল দেখিয়ে তিনি এখান থেকে টাকা আত্মসাৎ করেন। কপিরাইট অফিসের কেনাকাটায় গ্রীনফিল্ড করপোরেশন নামে প্রতিষ্ঠানটির যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে তার ঠিকানা ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে যাওয়া অভিযোগ সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও মন্ত্রণালয় তাতে সন্তষ্ট নয়। পুনরায় অধিক তদন্তের জন্য একজন যুগ্মসচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কম্পিউটারের মাউস কেনায় দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া শাহজাহান ভূইয়া সেই টাকা ফেরত দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির হিসাবরক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘২০২১ সালে ১০টি মাউসের দাম ৬০ হাজার টাকা দেখানোর পর বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। তৎকালীন রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী তাকে শোকজের পাশাপাশি বাড়তি টাকা ফেরত দিতে বললেও অদ্যাবধি শাজাহান টাকা ফেরত দেননি।’
অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল গাফফার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যে বিষয় নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সেগুলো নিয়ে সিনিয়ররা তদন্ত করছেন। এখন এ বিষয় নিয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
আরেক কর্মকর্তা এএনএম শাহজাহান ভূইয়াও বলেন, ‘জ্বি তদন্ত চলছে। আমাদের কিছু সহকর্মী আছে, তারাই আমার বিরুদ্ধে লেগেছে।’ এই বলে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/কেএম)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

গারদের শিকের ফাঁক দিয়ে হাতকড়া পরা বাবাকে ছোঁয়ার চেষ্টা শিশু জান্নাতের

ঢাকা টাইমসকে একান্ত সাক্ষাৎকার: রাজাবাড়ি ব্রিজটি অক্টোবরেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম

রাজনৈতিক অস্থিরতার ছাপ দেশের অর্থনীতিতে

ডিবি পরিচয়ে বাড়ছে অপরাধ

আমরা আগে নগর গড়ি, তারপর পরিকল্পনা করি: অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল

যুদ্ধের ক্যাম্পে পরিবারের কারও কথা মনে ছিল না

ফিডের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় খামারিরা

গ্রেপ্তার এড়িয়ে কেমন আছেন আদম তমিজী হক?

এইচএসসির ফল বিশ্লেষণ: প্রতিবার ফলাফলে মেয়েরাই যে কারণে এগিয়ে
