আজ বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস

২০২২ সালে সাড়ে চার লাখের বেশি রোগী বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকা পেয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:২৮

আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে দিবসটি।

এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্কের অবসান, সকলে মিলে সমাধান’।

এবারের প্রতিপাদ্যে জলাতঙ্ক নির্মূলে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা, সমতার গুরুত্ব এবং সামগ্রিক ব্যবস্থাকে ওয়ান হেলথ এর মাধ্যমে সম্পন্ন করার বিষয়গুলোতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

গত বছর প্রাণির কামড়-আঁচড়ে আক্রান্ত প্রায় সাড়ে চার লাখেরও বেশি রোগীকে সরকার বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকা প্রদান করেছে। এতে জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে ২০১০ সালের আগে জলাতঙ্ক রোগে ২০০০ এর বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করতো যা ২০২৩ সালের জুন মাসে কমে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৭।

মরণঘাতী জলাতঙ্ক বহু পুরোনো সংক্রামক রোগ। এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে মৃত্যু অনিবার্য। তবে সময়মত সঠিক ব্যবস্থা তথা টিকা নিলে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। কুকুর, বিড়াল, বানর, বেজী ও শিয়ালের কামড় বা আঁচড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষারযুক্ত সাবান পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধৌত করতে হবে। এরপর যথাসময়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার জলাতঙ্ক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করে। স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রাণিসম্পদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ২০১১-১২ সাল থেকে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। জলাতঙ্ক রোগ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কৌশলপত্র প্রস্তুত করে দেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করার অঙ্গীকার নিয়ে এবং তা বাস্তবায়নে রোডম্যাপ তৈরি করা হয়। আর এসব বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করছে জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারাদেশে সব জেলা সদর হাসপাতাল ও ৩৩৮টির বেশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমের দেশের সব উপজেলায় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

রাজধানীর মহাখালীতে সংক্রামক ব্যধি হাসপাতাল ও ঢাকাস্থ পাঁচটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে জলাতঙ্কের আধুনিক চিকিৎসা কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। কুকুর বা অন্যান্য প্রাণির কামড়ের ঘটনায় এসব কেন্দ্রে আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্নভাবে বিনামূল্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা প্রদান করা হচ্ছে।

জাতীয় গাইডলাইন অনুসারে বর্তমানে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের পূর্ণ ডোজ তিনটি (০, ৩ ও ৭) দিনে নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় রোগীদের অর্থ ও সময়, দুই-ই সাশ্রয় হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সব সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। যা দক্ষিণ এশিয়ায় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ল্যাবে প্রাণিদেহে জলাতঙ্কের জীবাণু নিশ্চিতকরণের কাজ করছে। এতে নির্দিষ্ট স্থানে এ রোগের উপস্থিতি ও প্রাদুর্ভাব নির্ণয় করে মানুষ ও প্রাণিদেহে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর নির্ভর করে পরিবেশে জলাতঙ্কের প্রধান উৎস কুকুরের মধ্যে ব্যাপকহারে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে। ব্যাপকহারে কুকুরের টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতিমধ্যে দেশের ৬৪টি জেলায় ১ম রাউন্ড, ৩৭টি জেলায় ২য় রাউন্ড এবং ৮টি জেলায় ৩য় রাউন্ড ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে কুকুরকে প্রায় ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডোজ জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা প্রদান করা হয়েছে, যা মানুষ ও প্রাণিদেহে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস ২০২৩ উপলক্ষে তার বাণীতে বলেছেন ‘জলাতঙ্ক বিষয়ক গ্লোবাল স্ট্রাটেজিতে ২০৩০ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক মুক্ত বিশ্ব গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’

জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কারক বিখ্যাত বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর ১৮৯৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার প্রয়াণ দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০০৭ সাল থেকে এই দিনটি বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস হিসেবে পালিত হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :