মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান: হিমাগার থেকে জব্দ আলু মাইকে ডেকে ৩৩ টাকা কেজিতে বিক্রি

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:১৫

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস

সরকার নির্ধারিত আলুর দাম কেজিপ্রতি ৩৫-৩৬ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫০ টাকা। এই পরিস্থিতিতে অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। তিন হিমাগার থেকে ৬৭৫ বস্তা কার্ডিনাল আলু জব্দ করা হয়। পরে এগুলো ৩৩ টাকা কেজিতে মাইকে ডেকে বিক্রি করা হয়। এ ঘটনা বগুড়ার মহাস্থান হাটের।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে বিক্রি শুরু হয় এসব আলু। সরকারের নির্ধারণ করা মূল্যে আলু কিনতে পেরে খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা অনেক খুশি।

শিবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তাসনিমুজ্জামান জানান, বুধবার সকালে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় সাহা হিমাগার লিমিটেড ও হিমাদ্রি হিমাগার লিমিটেডে অভিযান চালানো হয়। সেখান তিন মজুতদারের কাছে ৬৭৫ বস্তা কার্ডিনাল আলু পাওয়া যায়। প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি করে মোট ৪০ হাজার ৫০০ কেজি।

দিনভর খোঁজ নিয়ে সাহা হিমাগার লিমিটেডে মজুতদার পরিতোষ কুমারের কাছে ১৯০ বস্তা ও অর্জুন সরকারের কাছে ২৮৫ বস্তা এবং হিমাদ্রি হিমাগার লিমিটেডে আফজাল হোসেনের কাছে ৩০০ বস্তা আলু পাওয়া যায়। পরে মহাস্থান হাটের ৯ জন পাইকারি ব্যবসায়ীকে ডেকে এনে ওই পরিমাণ আলু পাইকারি সাড়ে ২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই ব্যবসায়ীরা মহাস্থান হাটে মাইকে ডেকে ৩৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু করেন।

 

তাসনিমুজ্জামান জানান, মহাস্থান হাটের পাইকারি ব্যবসায়ীরা ৩৩ টাকা দরে খুচরা ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছে আলু বিক্রি করেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা এ আলু হাট-বাজারে বা দোকানে সরকার নির্ধারিত ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবেন।

 

বগুড়ার মহাস্থান হাটে পাইকারি আলু ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, সাড়ে ২৮ টাকায় আলু কিনে ৩৩ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এতে খুচরা ও ক্রেতা ও ব্যবসায়ী উভয়ই কম দামে আলু কিনতে পেরেছেন। গত বুধবার প্রতি কেজি ৩৬ টাকায় কিনে ৩৮ টাকায় বিক্রি করেছেন।

 

ওই ব্যবসায়ী বলেন, প্রশাসনের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে আলুর সিন্ডিকেট থাকবে না।

 

হাটে আলু কিনতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী ফরিদুল হক, মিজানুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, খোরশেদ আলম প্রমুখ জানান, গত দুইদিন আগেও পাইকারি ৩৮ টাকা দরে আলু কিনেছেন। বৃহস্পতিবার ৩৩ টাকা কেজি দরে এক বস্তা আলু কিনতে পেরে খুশি। তিনি এ আলু খুচরা ক্রেতাদের কাছে ৩৬ টাকা দরে বিক্রি করবেন।

 

হাটে কথা হয়, ব্যাংকার নিজাম সরকারের সঙ্গে। তিনি জানান, বাড়িতে খাওয়ার জন্য ৩৩ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি আলু কিনেছেন। অন্য হাট-বাজারে এ আলু ৪৫ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কম দামে আলু কিনতে পেরে তিনি খুশি হয়েছে। এই ব্যাংকার বলেন, বাজারে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাবেচায় প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং প্রয়োজন। তা হলে অবৈধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট থাকবে না।

 

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার জানান, বৃহস্পতিবার ২৭০ বস্তা আলু (১৬ হাজার ২০০ কেজি) আলু ৩৩ কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অবশিষ্ট আলু শুক্র ও শনিবার একই দরে বিক্রি করা হবে। তিনি বলেন, অবৈধ মজুতদারদের ধরতে পর্যায়ক্রমে সব হিমাগারে অভিযান চলবে।

 

শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ রিজু বলেন, তিন মজুতদারের কাছে পাওয়া আলু সরকার নির্ধারিত দামে মহাস্থান হাটে বিক্রি করা হয়েছে। সকাল থেকে হাটে থেকে বিক্রি তদারকি করেছেন। তিনি বলেন, আলুর দাম কমলেও অন্যান্য সবজির উপর চাপ কমবে। এতে ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরবে।

 

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, চলতি বছর ৫৩ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ২৪ হাজার ১২০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে কৃষকরা ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে দেশি পাকড়ি ও হাগড়াই জাতের আলুর চাষ করেন। অবশিষ্ট জমিতে বিদেশি ও উফশি কার্ডিনাল, গ্রানালু, ডায়মন্ড জাতের আলু চাষ হয়েছে। কৃষকরা প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ২৫ মেট্রিক টন করে এই জাতের আলুর ফলন পেয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/কেএম)