গ্রিসের এক গুহা পরীক্ষার পর চোখ কপালে গবেষকদের

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:২০

গ্রিসের থেসালি অঞ্চলের মেটেওরায় প্রাচীন থিওপেট্রা গুহায় হাজার বছর আগে মানুষের বসবাস ছিল বলে এতাদিন মনে করতেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। তবে সম্প্রতি সে গুহার রেডিয়োকার্বন নমুনা পরীক্ষার ফল দেখে চমকে গেছেন গবেষকরা। কারণ, সেখানেই মিলেছে মানুষের তৈরি প্রাচীনতম পরিকাঠামো।

নমুনায় এক লাখ ৩০ হাজার বছর আগের মানুষের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা জেনেছেন, মধ্য প্রস্তর যুগ থেকে নব্য প্রস্তর যুগ পর্যন্ত টানা এই গুহায় ছিল মানুষের বাস।

থিওপেট্রা গুহা খননের পর সেখান থেকে মিলেছে সমাধি, পাথরের তৈরি অস্ত্র, বাসন, পশুর হাড়। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, নিয়ান্ডারথাল (আদিম মানব) প্রজাতির মানুষের বাস ছিল এই থিওপেট্রা গুহায়। আজকের মানুষের থেকে অনেকটাই অন্যরকম ছিল তারা। তাদের ভুরুর জায়গা ছিল অনেকটাই উচু। নাক প্রসারিত। মনে করা হয়, প্রায় চার লাখ ৩০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর বুকে তাদের বাস ছিল।

থিওপেট্রার রেডিয়োকার্বন পরীক্ষার পর গবেষকরা মনে করছেন, এটি মানুষের তৈরি পৃথিবীর প্রাচীনতম গুহা। তবে নিয়ান্ডারথাল প্রজাতির মানুষ পাহাড় কেটে এই গুহা তৈরি করেনি। তারা সম্ভবত ছোট একটি অংশে বসবাস শুরু করে। পরবর্তীকালে আধুনিক মানুষ পাহাড় কেটে কেটে এই গুহার বিস্তৃতি বৃদ্ধি করেছে।

মেটেওরায় চুনাপাথরের তৈরি পাহাড়ের উত্তর-পূর্ব ঢালে রয়েছে এই গুহা। পাহাড়টির উচ্চতা ১০০ মিটার। প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে তৈরি হয়েছিল পাহাড়টি। এই গুহার প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে দেখা যায় লেথাইওস নদী, উপত্যকা, থিওপেট্রা গ্রাম।

প্রায় ৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত আদিম এই গুহা। গুহার প্রবেশপথ বিশাল চওড়া। তাই গুহার ভেতর অনেক দূর পর্যন্ত আলো প্রবেশ করতে পারে। ঠিক সে কারণেই এই গুহায় লাখ বছর আগে বাস করতে শুরু করেছিল মানুষ।

১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এই গুহার খননের কাজ শুরু হয়। চলে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এরপর এই গুহা থেকে উদ্ধার হয় গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সামগ্রি। খুলে যায় অতীতের একের পর এক দরজা।

স্থানীয় পশুচারণকারীরা পশুদের অস্থায়ী আশ্রয় হিসাবে এই থিওপেট্রা গুহাকে ব্যবহার করতেন। মাঝেমধ্যেই গুহায় ভেড়া, গরু বেঁধে রেখে বাড়ি চলে যেতেন তারা। সেভাবেই প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিকদের নজরে আসে গুহাটি। তারপর শুরু হয় খননকাজ।

খনন করতে গিয়েই ইতিহাসবিদরা জানতে পারেন, এই গুহায় প্রায় লাখ বছর আগেও বাস করত মানুষ। যুগের পর যুগ এখানেই ঘর-সংসার করেছে তারা। ক্রমে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে পরিত্যক্ত হয় গুহাটি।

গুহার প্রত্নতাত্ত্বিক স্তর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, জলবায়ুর অনেক পরিবর্তন সয়েছে এই গুহা। এক সময় ছিল প্রবল গরম। তারপর এক সময় ছিল প্রবল ঠান্ডা। এসব কারণেই গুহার জনসংখ্যা কমেছে। হয়েছে বসবাসের অযোগ্য।

এই গুহা থেকেই মিলেছে মানুষের তৈরি প্রাচীনতম পরিকাঠামো— একটি পাথরের প্রাচীর। গ্রিসে তো বটেই, গোটা পৃথিবীতেও সম্ভবত এটিই প্রাচীনতম। আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, এই প্রাচীর ২৩ হাজার বছর আগে তৈরি হয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন, গুহার প্রবেশপথ আড়াল করার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল সেই প্রাচীর। সেই প্রাচীরের অনেকটা অংশ ভেঙে গেছে। এই গুহার নরম মাটির মেঝে থেকে তিনটি পায়ের ছাপও উদ্ধার হয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, এগুলো নিয়ান্ডারথাল প্রজাতির শিশুদের। এই পায়ের ছাপ যাদের, তাদের বয়স দুই থেকে চার বছরের মধ্যে ছিল। মধ্য প্রস্তর যুগে এই গুহায় বাস করতো তারা।

২০০৯ সালে এই গুহা দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। যদিও এক বছর পর যখন ওই প্রাচীনতম প্রাচীর আবিষ্কার হয়, তখন গুহা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে আবার এখানে প্রবেশ করতে পারতেন দর্শকেরা।

যদিও ধস নামার আশঙ্কায় গুহাটি ২০১৬ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন আবার এই গুহায় প্রবেশের অধিকার রয়েছে দর্শকদের।

(ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় ইতালির হাজার বছরের পুরোনো ‘হেলানো টাওয়ার’

কপ ২৮: ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সক্ষমতা তিনগুণ করতে সম্মত ১১৮ দেশ

গাজার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে হেপাটাইটিস: জাতিসংঘ

স্কুলে এঁটো থালা মাজতে হতো ৬ বছরের শিশুর, অভিযোগ করায় বহিষ্কার

স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আগে বন্দিবিনিময় আর নয়: হামাস

ভারতের বিধানসভা নির্বাচন: ৪ রাজ্যের তিনটিতেই এগিয়ে বিজেপি, একটিতে কংগ্রেস

ইসরায়েলকে সহায়তায় গাজায় নজরদারি বিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য

ফিলিপাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা হামলায় নিহত ৪

আগামী নির্বাচনে বাইডেনকে সমর্থন করবেন না মুসলিম আমেরিকানরা

প্যারিসে পর্যটকদের ওপর ছুরি হামলায় একজন নিহত

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :