চাকরির আশ্বাসে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ মেয়রের বিরুদ্ধে
প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১১:০৬ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪২
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা বাবুল হাসান (২৪) আওয়ামী লীগের দলীয় একটি অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে তার দরিদ্র পরিবারের যেকোনো শিক্ষিত একজন সদস্যকে চাকরির আশ্বাস দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সেই সুযোগে দরিদ্র পরিবারটির কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী ওরফে অপুর বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা বাবুল হাসান ২০২২ সালের ১৮ মে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের দলীয় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি দলীয় ওই অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের আতারস্ট্যান্ড এলাকায় ট্রাকচাপায় মারা যান। তিনি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের পূর্বমাগুরী হাট এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি চিকাজানী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। বাবুলের মা-বাবা, তিন ভাই ও দুই বোন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি একটি এনজিওর চাকরি করতেন। পরিবারের তিনি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। ফলে স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিবারের যেকোনো শিক্ষিত একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি নিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
বাবুলের মা ছখিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলেটি দল করতো। দলের অনুষ্ঠানে গিয়ে মারা গেছে। ছেলেই সংসার চালাতো। ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা অন্ধকারে ডুবে যাই। বড় ছেলে সোলায়মান হোসেন মাস্টার্স শেষ করে বেকার। এমপি সাহেবের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বড় ছেলের একটি চাকরির জন্যে যোগাযোগ করি। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সার্কুলার হয়। আবারও এমপি সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তখন এমপি সাহেব ছেলেকে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে আসতে বলে। আল্লাহর রহমতে ছেলে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে। পরে আবার এমপি সাহেবের সঙ্গে দেখা করা হয়। তখন এমপি সাহেব দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী ওরফে অপুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে মেয়ের অপুর সঙ্গেও কথা হয়। হঠাৎ একদিন অপু একটি লোকের মাধ্যমে বড় ছেলে সোলায়মানকে দেখা করতে বলেন। বড় ছেলে অপুর সঙ্গে দেখা করেন।
ছখিনা বেগম আরও বলেন, ‘চাকরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেয়র অপু ছেলের কাছে ৫ লাখ টাকা চান। তখন ছেলে মেয়র অপুকে বলেন, এতো টাকা কোথায় পাবো। তখন মেয়ের অপু বলেন, টাকা দিলে তোমার চাকরি শতভাগ নিশ্চিত। পরে সোলায়মান বাড়ি ফিরে আমাদের জানায় বিষয়টি। সরকারি চাকরি নিশ্চিত হবে এই ভেবে আমরা চাষাবাদের একমাত্র জমি ও দুটি গরু বিক্রি করে এবং কিছু টাকা ধারদেনা করে, দুইবারে ৪ লাখ টাকা মেয়র অপুকে দিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলের চাকরি আর হয়নি। পরে টাকা ফেরতের জন্যে মেয়র অপুর কাছেও যাওয়া হয়, তখন মেয়র অপু বলেন, চাকরির জন্যে টাকা নাকি তিনি অন্য মানুষকে দিয়েছেন। টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান।
নিহত বাবুলের বাবা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতো। ছেলে মারা যাওয়ার পর স্থানীয় এমপি আমার বড় ছেলেকে চাকরি দিতে চান। তার (এমপি) সঙ্গে যোগাযোগ করি।
তিনি আমাদের মেয়র অপুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেন। কিন্তু মেয়ের অপু চাকরির জন্যে আমাদের কত কষ্টের টাকাগুলো নিয়ে আর ফেরত দিল না। টাকাগুলো ফেরত দিলে, আমরা আবার চাষাবাদ করে চলতে পারতাম। ’
নিহত বাবুল হাসানের চাচা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান বলেন,‘বাবুলের পরিবার জন্মগত আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাতে দেশ স্বাধীন করতে পারেন, সেই জন্যে বাবুলের বাবা চারটি গরু দিয়ে মানুষকে খাওয়াইছেন। এক সময় তিনি (বাবুলের বাবা) ধনী মানুষ ছিলেন। নদীভাঙনের শিকার হয়ে আজ নিঃস্ব। এখন তাদের দিন চলে না। তার সন্তান আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে গিয়ে মারা গেছে। তার পরিবারের একজন সদস্যের চাকরির জন্যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হন। এটা ভাবাই যায় না।’
এ ব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী অপু বলেন, ‘সে আমার কাছে চাকরির জন্য আসতো। একদিন তাকে বলি, চাকরি পেতে গেলে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। এ কথা শুনে তিনি চলে যান। তিনি আর আমার কাছে ফিরে আসেননি। আমি তার কাছে টাকা নিয়েছি, এই কথা মিথ্যা। আমি কোনো টাকা নেইনি।’
(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/প্রতিনিধি/এআর)