শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণাসহ ৯ দাবি বাস্তবায়ন চায় শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদসহ আইনি প্রক্রিয়া পাশ কাটিয়ে শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়া বন্ধ, অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল প্রত্যাহার এবং জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণাসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এর নসরুল হামিদ মিলনায়তমে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সমন্বয়ক শ্রমিক নেতা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে দাবিগুলো তুলে ধরেন জাতীয় শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন।

সংবাদ সম্মেলনে বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উৎপাদনে শ্রমিকের অংশগ্রহণ বিবেচনায় জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ও সেক্টরভিত্তিক মজুরি নির্ধারণের দাবি জানানো হয়। তারা বলেন, চাল, গম, আটা, লবণ, চিনি, তেল, ওষুধ, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ শ্রমিকের ব্যবহার্য সব পণ্যের দাম বেড়েছে অথচ বাড়েনি মজুরি। তাই আইন করে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, মালিকানা নির্বিশেষে প্রতিটি শিল্প খাতের শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণ, শ্রমজীবী পরিবারের সামাজিক সুরক্ষা, মহার্ঘভাতা, রেশন প্রদান করতে হবে।

শ্রম আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া বন্ধ করে পুনরায় আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শ্রম আইন সংশোধনের জন্য আলোচনার সর্বোচ্চ ফোরাম ত্রি-পক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ বা টিসিসি। শ্রম আইন সংশোধনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে শ্রমিক পক্ষের তিনজন প্রতিনিধি আছেন। শ্রম আইন সংশোধনের জন্য স্কপের পক্ষ থেকে সুপারিশ প্রেরণ করা হয়েছিল। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন অংশিজনের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করে প্রায় এক বছর পরিশ্রম করে শ্রম আইন সংশোধনী কমিটির ওয়ার্কিং গ্রুপ একটি খসড়া সংশোধনী প্রণয়ন করেছে। এই খসড়া চূড়ান্ত করার পর টিসিসিতে অনুমোদনের পর মন্ত্রিসভায় পাঠানোর কথা ছিল। খসড়া চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে আইনের কিছু বিষয়ে শ্রমিক পক্ষের আপত্তি উত্থাপন করা হয়। সেসব বিষয়ে আলোচনা না করেই শ্রম আইন সংশোধনী পাস করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে শ্রম আইন সংশোধনী কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন যেমন নেয়া হয়নি, তেমনি টিসিসিতেও আলোচনা চূড়ান্ত না করেই মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

নুরুল আমিন বলেন, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ মনে করে এর ফলে শ্রম আইনসহ শ্রম সংক্রান্ত নীতিগত বিষয় অনুমোদন করার আইনি প্রক্রিয়াকে লঙ্ঘন করা হলো, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে।

‘শ্রম আইন সংশোধন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যেখানে শ্রমিক সংগঠন সমুহের প্রস্তাব, মালিকপক্ষ ও সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে যে পর্যালোচনা করা হয়েছিল এবং তার ভিত্তিতে শ্রম আইনের গণতান্ত্রিক সংশোধনীর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সেই প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করার সামিল। তাই শ্রম আইন সংশোধনের এই প্রক্রিয়া বন্ধ করে পুনরায় আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাই’—যোগ করেন তিনি।

ন্যূনতম মজুরি ঘোষণাসহ ৯ দফা দাবি গুলো হলো-

১) টিসিসিকে পাশ কাটিয়ে শ্রম আইন সংশোধনী পাস করার অপকৌশল বন্ধ করতে হবে।

২) অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল ২০২৩ প্রত্যাহার করতে হবে।

৩) বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ কর। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবি মেনে নাও এবং সকল সেক্টরের শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।

৪) সড়ক পরিবহন আইন বিষয়ে শ্রমিক পক্ষের দেয়া সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে।

৫) নৌযান শ্রমিকদের ২০২৩ সালের গেজেট অনুযায়ী মজুরি বাস্তবায়নসহ ন্যায্য দাবিসমূহ মানতে হবে।

৬) আউট সোর্সিং প্রথা বাতিল করতে হবে।

৭) বন্ধ হওয়া পাটকল, চিনিকলসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে।

৮) ইপিজেডসহ সব ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার দিতে হবে।

৯) শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ৯ দফা মানতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দাবি আদায়ে আগামী ১৯ অক্টোবর শ্রম মন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। দাবিসমূহ উপেক্ষিত হলে আগামীতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/এমআই/ইএস)