গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ দখল করেছে ইহুদিরা

প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:১৮ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:২৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ‘গণহত্যামূলক বোমাবর্ষণ’ বন্ধের দাবিতে সোমবার কয়েকশ’ মার্কিন ইহুদি শান্তিপূর্ণভাবে নিউইয়র্কের ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ দখলে নিয়েছে।

‘ইহুদিরা এখনই যুদ্ধবিরতি চায়’ বা ‘আমাদের নামে নয়’ স্লোগান সম্বলিত কালো টি-শার্ট পরিহিত বিক্ষোভকারীরা নিউইয়র্কের আইকনিক ‘স্ট্যাচু অব লিবাটি’ পাদদেশে ‘পুরো বিশ্ব দেখছে’ এবং ‘ফিলিস্তিনিদের মুক্ত হওয়া উচিত’ লেখা ব্যানার উড়িয়ে দেয়। বিশাল তামার মূর্তিটি নিউইয়র্ক পোতাশ্রয়ে প্রবেশ পথে লিবার্টি দ্বীপে স্থাপিত। খবর বাসসের।

সমাবেশের আয়োজক জেউইশ ভয়েস ফর পিস (জেভিপি) এর জে সাপার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই স্মৃতিস্তম্ভে খোদাই করা আমাদের ইহুদি পূর্বপুরুষ এমা লাজারাসের বিখ্যাত শব্দগুলো গাজার ফিলিস্তিনিদের মুক্ত শ্বাস নিতে কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ নিতে আমাদের বাধ্য করে।’

মার্কিন ইহুদি কবি এমা লাজারাস (১৮৪৯-১৮৮৭), ১৯ শতকে ইহুদি শরণার্থীদের ইউরোপ থেকে নিউইয়র্কে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন।

এমা লাজারাস ছিলেন একজন আমেরিকান লেখক, কবি এবং অনুবাদের পাশাপাশি ইহুদি এবং জর্জিস্ট আন্দোলনের একজন কর্মী। ১৮৮৩ সালে স্ট্যাচু অব লিবার্টি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সনেট ‘দ্য নিউ কলোসাস’ লেখার জন্য তাকে স্মরণ করা হয়। তার এই লেখা একটি ব্রোঞ্জ ফলকে খোদাই করা প্রদর্শিত হয়, যা ১৯০৩ সালে স্ট্যাচু অব লিবার্টির পাদদেশে স্থাপিত হয়েছিল। লাজারাস নিউইয়র্কে উদ্বাস্তুদের সাহায্য করার সাথে জড়িত ছিলেন যারা পূর্ব ইউরোপ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন।

জে সাপারের বিবৃতিতে লাজারাসের কবিতা ‘নিউ কলোসাস’ উদ্ধৃত করা হয়েছে, যা মূর্তির ভিত্তির ওপর মার্কিন অভিবাসীদের উদ্দেশে খোদাই করা হয়েছে।
ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এর অংশগ্রহণকারীরা ‘গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক লোকদের ওপর ইসরায়েলের গণহত্যামূলক বোমাবর্ষণ বন্ধ করার’ দাবি জানিয়েছে।

ফটোগ্রাফার নান গোল্ডিন বলেছেন, ‘যতক্ষণ গাজার জনগণ চিৎকার করছে, ততক্ষণ আমাদের জোরে চিৎকার করতে হবে, যেই আমাদের নীরব করার চেষ্টা করুক না কেন।’

এ সময় কয়েকজন স্থানীয় নির্বাচিত কর্মকর্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিছু রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন, বাম রাজনৈতিক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন।

অভিবাসীদের বহু সংস্কৃতির মিলনের একটি কেন্দ্র নিউইয়র্ক সিটি গত এক মাস ধরে ইসরায়েলপন্থী এবং ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের কারণে কেঁপে উঠেছে।
শহরটি প্রায় ২০ লাখ ইহুদি এবং কয়েক লাখ মুসলমানের আবাসস্থল এবং এখনও পর্যন্ত সংঘর্ষের সাথে সম্পর্কিত সব ধরনের সহিংসতা এড়িয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মতো নির্দিষ্ট জায়গায়ও উত্তেজনা স্পষ্ট।

আমেরিকান ইহুদি যুবকদের একটি উদারপন্থী অংশ ইহুদিরা ডেমোক্রেটিক পার্টিকে অপ্রতিরোধ্যভাবে ভোট দেয়। তারা ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ এনেছে।

তারা ইসরায়েলের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সামরিক এবং কূটনৈতিক সমর্থনকেও নিন্দা জানায়। হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এক মাসব্যাপী এই বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে।  
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত গাজায় মৃতের সংখ্যা ১০,০০০ ছাড়িয়েছে।

শনিবার কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ করেছে। যাদের মধ্যে জেভিপি’র বিপুল কর্মী উপস্থিত ছিল। তারা গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের নীতির নিন্দা জানিয়েছে।

অক্টোবরের শেষের দিকে জেভিপির হাজার হাজার বিক্ষোভকারী একই দাবি নিয়ে ম্যানহাটনের বিশাল গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন দখল করে রেখেছে।

আলাদাভাবে মার্কিন ইহুদি সংগঠনের কিছুসহ হাজার হাজার প্যালেস্টাইনপন্থী বিক্ষোভকারী ব্রুকলিন ব্রিজ বন্ধ করে দেয়।

(ঢাকা টাইমস/০৭নভেম্বর/কেএ)