মানিকগঞ্জের হরিরামপুর: কিশোর-কিশোরী ক্লাবে অনিয়ম

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০৭

সায়েম খান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্পে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ক্লাবের সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত নাস্তার টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি দপ্তরিদের সম্মানির টাকাও আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত কয়েক সপ্তাহে সরেজমিনে ১০টি কেন্দ্রে ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে শিশুদের আবৃত্তি ও সংগীত শিক্ষা, কারাতে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। হরিরামপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি করে মোট ১৩টি কেন্দ্রে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি ক্লাবে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী (সদস্য) রয়েছে। ক্লাবের সদস্যরা সবাই কিশোর-কিশোরী। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা এ ক্লাবে প্রতি শুক্র ও শনিবার চলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস।

একটি কেন্দ্রে একেকদিনের জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ৩০ টাকা করে মোট ৯০০ টাকা নাস্তার জন্য সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়। ভ্যাটসহ অন্যান্য খরচ বাদে সেখান থেকে ৭৫০ টাকা অবশিষ্ট থাকে। সেই টাকা শিক্ষার্থীদের নাস্তার খরচ দেওয়ার কথা। অথচ, সরজমিনে ক্লাবগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৩০০-৪৫০ টাকার নাস্তা দেওয়া হয়। কোনো শিক্ষক ছুটি নিলে বা অসুস্থতাজনিত কারণে কোনো ক্লাস না হলে সেইদিনের নাস্তার টাকা পরবর্তী ক্লাসে যোগ করা হয় না। এছাড়া, নিয়মিত ক্লাবের দেখাশোনা করার জন্য ১৩টি কেন্দ্রে দপ্তরির জন্য ৫০০ টাকা করে সম্মানি থাকলেও ২০০ টাকা করে দেয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে ঝিট্কা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৬ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে। শিক্ষার্থীর বাইরে আছে আরও ২ জন। তাদের সকলকে ১০ টাকার এক প্যাকেট বিস্কুট, ১০ টাকার একটি কেক এবং ১০ টাকার এক প্যাকেট নুডলস দেওয়া হয়েছে, যার মূল্য ৩০ টাকা।

ভেলাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সংগীত শিক্ষক বলেন, আমাদের কেন্দ্রে গড়ে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকেন। ২০ এর কম আসলে ২৫ টাকার করে নাস্তা দেওয়া হয়। বেশি হলে ২০ টাকা করে নাস্তা দেওয়া হয়।

বহলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাস্তা সরবরাহকারী এক দোকানদার বলেন, সপ্তাহে একদিন আমার কাছে থেকে নাস্তা নেওয়া হয়। আরেকদিন বাজার থেকে ফল এনে দেন জেন্ডার প্রমোটর। আমার দোকান থেকে সর্বোচ্চ ৪০০-৪৫০ টাকার নাস্তা নেওয়া হয়।

ক্লাবের নাস্তা সরবরাহ করেন নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন জেন্ডার প্রমোটর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুইজন জেন্ডার প্রমোটর বলেন, অফিস থেকে আমাদের একেকদিনের নাস্তার জন্য ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়েই আমরা নাস্তা দেই। অফিস থেকে বেশি বরাদ্দ না দেওয়া হলে আমরা কিভাবে বেশি টাকার নাস্তা দেব।

এ বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুরছালিনা বেগম বলেন, নাস্তার জন্য বরাদ্দের টাকা থেকে দপ্তরিদের মাসে ২০০ টাকা করে সম্মানি এবং চরে অবস্থিত দুইটি কেন্দ্রের শিক্ষকদের যাতায়াতের জন্য কিছু খরচ দেওয়া হয়। এছাড়া, তবলা ও হারমোনিয়াম মেরামতের প্রয়োজন পড়লে ওই নাস্তার টাকা থেকেই খরচ করা হয়। নাস্তার টাকার বাইরে আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, বিষয়টি আপনার কাছে থেকে প্রথম শুনলাম। খোঁজ নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৯ নভেম্বর/ইএইচ)