বিদেশ ফেরত স্বামীকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ স্ত্রীর বিরুদ্ধে

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:২৭

কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস

টাকার হিসাব চাওয়ায় প্রবাস ফেরত স্বামীকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার  অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। 

মদন থানার উপপরিদর্শক আজিজুর রহমান বলেন দগ্ধ কেন্দুয়ার এখলাছের বড় ভাই জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবা (১৬ নভেম্বর) মদন থানায় মামলাটি রুজু করেছেন। এজাহারে পরপস্পর যোগসাজশে হত্যার উদ্দেশে শরীরের পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসাবে বিবেচিত  হবে। মামলায় স্ত্রী মুক্তা আক্তারকে প্রধান আসামি করে, তার বাবা খায়রুল এবং মা লুৎফুননেসার নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৩/৪ জনকে আসামি করে এ মামলাটি করা হয়।লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।তিনি আরো বলেন আসামিদের ধরতে আমাদের জোর অভিযান অব্যাহত আছে। 

এজাহার সূত্রে জানা যায়, দগ্ধ প্রবাসীর নাম এখলাছ মিয়া (৩৩)। তিনি কেন্দুয়া উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের পাচহার গ্রামের মৃত আমজাদ আলীর ছেলে। সে ৬ বছর পূর্বে মদন উপজেলার খায়রুল ইসলামের মেয়ে মুক্তা আক্তারকে (২৮) বিয়ে করেন।

বিয়ের কিছু দিন পর এখলাছ মিয়া মালয়েশিয়া যান। সেখান থেকে যান সৌদি আরবে। বিদেশে থাকা অবস্থায় তার রোজগারের টাকা স্ত্রীর কাছেই পাঠাতেন। স্বামী বিদেশ এ অজুহাতে স্ত্রী বাবা বাড়িতে অবস্থান করতেন। প্রায় ৫ বছর পর দেশে ফিরে স্ত্রীর কাছে টাকা-পয়সার হিসাব চাইলে দু’জনের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হয়।

টাকা-পয়সার বিষয়ে কথা বলতে এখলাছ মিয়ার স্ত্রী তাকে রবিবার (১২ নভেম্বর) শ্বশুরবাড়িতে ডেকে আনে। পরদিন সোমবার সকালে এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্ত্রী মুক্তা আক্তার ও শ্বাশুড়ি লুৎফুর নেছা (৫০) তার লোকজন নিয়ে এখলাছ মিয়াকে হাতপা বেধে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। 

অবস্থা খারাপ দেখে শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রথমে তাকে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ পৌঁছালে, মুক্তা আক্তারের পরিবারের লোকজন পালিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রেফার্ড করে।পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শনিবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সেখানেই এখলাছ মিয়ার মৃত্যু হয়।

এ দিকে মুমূর্ষু এখলাছ মিয়া হাসপাতালে  বলেন, আমার স্ত্রীর কাছে ৬-৭ লক্ষ টাকা জমা রেখেছিলাম। এছাড়াও ১ভরি ওজনের ১টি স্বর্ণের গলার হার, ১ভরি ওজনের স্বর্ণের ১ জোড়া কানের দুল, ১ জোড়া স্বর্ণের বালা ও স্বর্ণের আংকটি তার কাছে ছিল। এগুলো আনতেই মুলত শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম। সোমবার সকালে এ বিষয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আমার বউ ও শ্বাশুড়ি আমার উপর পেট্রোল ঢেলে দেয়।এ সময় খায়রুল আমাকে মারতে আসছিলো, লোকাজন তাকে ফিরাচ্ছিল আর বলছিলো আর মারিছ না, বেচারা এমনিতেই মরে যাচ্ছে। সাথে আরও একজন মহিলা ছিলো। পরে তারাই আমাকে আদমপুর হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে নিয়ে যায়। বিষয়টি অন্য খাতে নিতে ডাক্তারদের কাছে বলাবলি করছিলো গোয়াল ঘরে আগুন লেগে এমন হয়েছে।যা ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।

মদন উপজেলার কাইটাইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাফায়ত উল্লাহ্ রয়েল জানান, দগ্ধ এখলাছ ঢাকায় মারা গেছে শুনেছি। তবে সোমবার ঘটনার দিন বিকালেই আমি ঘটনা স্থলে গিয়েছিলাম। মুক্তার আক্তারের বাড়িতে কাউকে পাইনি।  এ ব্যাপারে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৯নেভেম্বর/এআর)