একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২৪

তানিয়া হাসান

তোমার উড়ে যাওয়া
 

তোমার উড়ে যাওয়া চমৎকার বিস্ফোরিত হয়েছে হরেক হ-র-র…
আন্ধারে টুংটাং করেছে সিনেমা
ফুরিয়ে যাওয়ারা গর্ভবতী হয়ে 
ফুরাইয়া ফেলেছে বেলুন
পপকর্ণ কিংবা আইসক্রিমের বিশেষত্ব 
বুঝাতেই বিক্রীত করেছ পুরুষদণ্ড
পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা স্পর্শের হাওয়ায়
গোলজিত হয়েছে যোজন যোজন জমি
শোবার ঘরে তালা দিয়ে 
তলিয়ে দিয়েছ শরীর 

আজ তুমি দণ্ডহীন মহিষ
লাল-নীল ভরা গ্লাস পাশ কাটিয়ে স্থির বিন্দু খোঁজো 
সিগারেটের ধোঁয়া কাজা করে খেজুর নেশায়
ডুব দাও শুদ্ধ শুদ্ধ ঘামে
সর্বনাশের ছায়া কিংবা তুমুল প্রার্থনায়
একটা বৃত্ত আঁকতে 
নির্ধারিত স্পর্শ বিক্রি করে 
একটা মসজিদ হতে চাও!

কলাকামনা ঋদ্ধ হয়
ধুয়ে হয়তো যায় সময়
দাগগুলো রেখা বদলালেও 
তুমি থাক ঘোরের সূচনায়

তসবিদানার আড়ালেও যে তুমি 
চন্দ্রমুখীর চমৎকার দেখ
ফের উড়ে চমৎকার চমৎকার! 

 

ছলের বিনয়
 

এই তিলকশয্যায় একটা  জলপিরান
খয়েরি চোখের এমন-তেমন 
ভেলকি, বশে এনেছিল সিল্কি সেলোয়ার

অবোধ বারান্দা সভ্য সভ্য ধান্দায় দুয়ার খুলে
হলদে মেঘের আঁড়খেয়াল 
তারে ধুয়ে ফের আসে এঁটো আয়নায়

ভোর হবে জেনেও চন্দ্রধ্যানে মগ্ন 
নারিকেল মুকুর 
উষ্ণআভায় তার বৃষ্টি বৃষ্টি ঝরে...

বিনয়ের সহজ টেক্কায় 
নীল বিক্রি করা চাঁদ আর বসন্ত
নিয়ে
খেলা রোদের সরল অবস্থান 
মোনালিসার ঠোঁটের কোণে 

বিশ্বাস মূলত বিদ্যুৎভ্রম
স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাকে গিলে খায়

 

নোনা এসিডিটি 
 

তোমারে খুব দেখতে মন চায়, জান তুমি ক্যান!
জান না তো!

তোমার চক্ষে আমি, আমারে দেখি, আমার লাইজ্ঞা যে বালিশ আগলিয়ে রাখ, তার রং দেখি!

আমারে খুলিয়া পড়ার পরেও 
তোমারে দেখিতে মন চায়!
নুনের জলে সাঁতার কেটে কতটা সুন্দর হয় তোমার দাঁত! তার আঁচড় খেতে মন চায়...

তোমার চোখ দেখলেই আমার এসিডিটি বাড়ে
বুকের ভাঁজ গুনতে হয় না

আমারে ভাইবা যেদিন তোমার এসিডিটি হবে!

সেদিন তোমার ঘরে 
এক গ্লাস লবণ পানি নিয়ে আসব
তুমি চোখ খুলে খেয়ে নিও
আন্ধার ফুরিয়ে যাবে


সেলিব্রিটি বাজিগর
 

যে পরগাছার আঁচড়ে শহর কাঁপে 
দূরত্বের সীমা অতিক্রম করে দূরত্ব 
পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয় সকল দায়
একে কি নেহাৎ আগন্তুক বলেই গা ভাসাবে

তোমার আমার ঝুলে থাকা রাত 
মোহনীয়তার মোহে 
বাদুড়ের শরীরের খুঁজে আশ্রয় 
পা বাড়াতে পারে না কুসল ভূমিতে

চোখের বালির খয়েরি টিপ চুরি করে 
তুমি সমুদ্র হও
গরদহীন খাঁচায়

অসীম সঙ্গের মুকুট হয়ে 
সেলিব্রিটি গালিচার গভীরে যাও
জোকারের ঢঙে 

এই সব নোঙর এড়াতে শূন্য হয় 
একটা সানস্ক্রিন জোছনা 
মেঘ হয় কাশবাগান
তুমি-আমি থেকে যাই হু হু হাহাকারে


আক্ষেপের সাইরেন
 

বিন্দু ঘামের মায়ায়  
এক উজান লেবুর শরবত 
টগবগিয়ে শান্ত হয় শ্রান্ত 
কেটলির মাঝখানে 

প্রবাহিত বিদ্যুতের লাইনগুলো
ঘুমিয়ে থাকা রোদের অপেক্ষায়
আক্ষেপ ভুলে অক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়

একটা লাল সাপের 
লালায় স্নাত হয়েও 
রুক্ষচুলে হাহাকার চিত্রে
ঝুলে থাকে মাকড়সা
শূন্য বেডকভারে 

ঝলমলে বারান্দায় বিড়ালের প্রণয়ে 
একটা ধোঁয়া বয় 
থোকা থোকা ধোঁকায় ঈশ্বরী হয় ঐশ্বর্য 

শুকিয়ে যাওয়া চোখে 
নুনকনা ফের আসে ফিরে

আমাদের বসন্তগুলো 
সাইরেন না বাজিয়ে 
এড়িয়ে যায় গন্ধরাজের দরবার 

স্পর্শহীন ঠোঁটে  
স্পর্শ করে রাজটিকা 
সিসিক্যামেরার আওতাভুক্ত হয়ে
এক হই
মিশে যাই
মলাটবিহীন কাব্যগ্রন্থে 

শব্দের ঝর্ণা বয়ে যায় ভুল ম্যাপে 
রাস্তা হারিয়ে ঘুরে দাঁড়াই 
রক্তস্রোতে 

আমাদের গল্পটা ফুটেজ রেকর্ড 
হয়ে বাজে ফুরিয়ে যাওয়া চৈত্রে
নিশী-ভোরের তোয়াক্কা না করেই
হই অমর ভবিতব্য


নিঃশব্দ তোলপাড়
 

তোমার সাথে এই দীর্ঘ যাপন ক্রমশ উন্মুক্ত করেছে বেডকভারের ভাঁজ
ঘুমিয়ে থাকা ঠোঁটে উড়ন্ত হচ্ছে
অবলা সহায়

সেকেন্ডের সমীকরণ অসমাপিকা ক্রিয়ায় 
একটা উগ্র কণ্ঠ ভস্ম করে ভাসায় বাহাত্তর কার্যক্রম 
জমে যাওয়া নিরেট গুহায় বৃষ্টি নামে

বয়সের দোষে টসটসে ফোড়া টগবগ করে
তাদের শরীরে তুলো ছোঁয়াই না  
জ্বর জ্বর ভয়ে

তোমার তলপুকুরের তোলপাড় 
তলিয়ে দেয় আস্তিক শরীর

নিঃশব্দের
দোলায় দোলে লাউফুল 
অশ্লীল হয় বখাটে বর্ণে
অন্তমূলে আকাশ পুষে 
ভুগে আকাশী স্বল্পতায় 

দ্বিধার ক্ষুধায় আরো উন্মুক্ত বাক্যে করি তোমায় রচনা
দৃষ্টির স্পর্শে আস্ত তোমায় শুষে 
আমি অমর হই সুতোহীন সময়ের মালায়