প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রশংসা: স্বজনদের ফিরে পেয়ে আনন্দিত পশ্চিম তীরবাসী

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:৪৭ | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:০৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসাবে ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শুক্রবার ৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিরেছেন। এতে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে পুরো পশ্চিম তীর। দীর্ঘদিন পর আপন মানুষকে ফিরে পেয়ে আনন্দিত স্বজনরা।

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে ৩৯ জন কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। এরমধ্যে পশ্চিম তীর থেকে ৩৩ জন ফিলিস্তিনিকে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির কাছে তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া বাকি ছয়জনকে জেরুজালেম থেকে মুক্তি দেয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয় অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাতে একটি ইসরায়েলি কারাগারের সামনে কারামুক্তদের স্বাগত জানাতে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো ফিলিস্তিনি। এ সময় তারা ফিলিস্তিনের পতাকা, কেউ হামাসের সবুজ পতাকা নাড়িয়ে, স্লোগান-হাততালি ও চিৎকারের মাধ্যমে আনন্দ প্রকাশ করেন।

এ ছাড়া তাদের স্বাগত জানাতে পশ্চিম তীরজুড়ে আতশবাজি ফুটানো এবং দেশত্ববাদী ফিলিস্তিনি পপ সংগীত বাজানো হয়।

ফিলিস্তিনি বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের মিলিত হওয়ার আনন্দঘন মুহূর্তের ভিডিও প্রকাশ করেছে লেবাননের আল-মানার টিভি চ্যানেল। যেখানে দেখা যায়, ২০১৫ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মারাহ বাকের নামে এক তরুণী তার পরিবারের সঙ্গে আলিঙ্গন করছেন। শুক্রবার তিনি জেরুজালেম থেকে মুক্তি পান।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইসরায়েলি কারাগার থেকে যারা মুক্তি পাচ্ছে তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন। কারণ, প্রত্যেক বন্দিকে কারাগারে কোনো ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়নি।

মারাহ বাকের এখন তার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন বলে জানিয়েছেন। এরপর একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি নেবেন বলেও চিন্তা করছেন।

সদ্য মুক্তি পাওয়া ১৭ বছর বয়সী জামাল বলেন, ‘অনুভূতি প্রকাশ করার মতো আমার কাছে কোনো শব্দ নেই, সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ।’

এ ছাড়াও মালাক সুলাইমানসহ আরও ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তির পর শুকরিয়া জানাতে সেজদা দিতেও দেখা যায়। তারা হামাসের প্রশংসা করেন।

প্রসঙ্গত, গাজা উপত্যকা শাসন করে হামাস। আর ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর অংশ শাসন করে মাহমুদ আব্বাসের সরকার। কিন্তু সেখানে সব কিছুই ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন। যেসব বন্দি মুক্তি পাচ্ছে তারা পশ্চিমতীরের বাসিন্দা। এসব বন্দিদের অনেকে বছরের বছর ধরে বিনাবিচারে ইসরায়েলের কারাগারে ছিলেন।

শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া চার দিনের যুদ্ধবিরতিতে মোট ৫০ জন ইসরায়েলিকে মুক্তি দেবে হামাস। অন্যদিকে ১৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। এছাড়াও বন্দি মুক্তি নিয়ে আরও একটি প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। অতিরিক্ত ১০ জন বন্দিকে মুক্তি দিলে তার বিনিময়ে গাজায় আরও এক দিন যুদ্ধবিরতি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু।

এরআগে, গত বুধবার অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে প্রথমবারের মতো সমঝোতায় যেতে রাজি হয় ইসরায়েল ও হামাস। কাতারের মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তিতে সম্মত হয় দুপক্ষ।

গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারপর থেকেই গাজায় বিমান ও স্থল হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত দেড়মাস ধরে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ১৪ হাজার ৮০০ জন ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি শিশু ও নারী রয়েছেন। এছাড়া কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে সেনা সদস্যসহ ২৪০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করে নিয়ে আসে হামাস। যাদের বিনিময়ে ইসরায়েলে কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনিকে মুক্ত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে স্বাধীনতাকামী দলটি।

(ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/এমআর/ইএস)