গাজী নাকি তৈমূর: নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের আনুকূল্য পাবেন কে?

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:২০ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:৪২

জাফর আহমেদ, ঢাকা টাইমস

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন নতুন করে আলোচনায় নারায়ণঞ্জ-১ আসন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী ও তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যে চলছে মনস্তাত্ত্বিক প্রতিযোগিতা। একে অপরকে দোষারোপ করলেও দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই আসনে আওয়ামী লীগের আনুকূল্য কে পাবেন— এ নিয়ে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা।

তবে, ভোটারদের মধ্যে কেউ কেউ এ আসনে গোলাম দস্তগীর গাজীকে এগিয়ে রাখছেন। আওয়ামী লীগের হয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হয়ে বর্তমানে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

এবার তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। নারায়ণঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। এরপরও দমে যাননি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলটির মহাসচিব নির্বাচিত হন। পরে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে দলের প্রার্থী হন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও তৈমূর ফের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। নারায়ণঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির হয়ে নির্বাচন করছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়া এ নেতা।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। এছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান ভূঁইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন।

গত ১৫ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। তার সম্পদ ও ঋণ দুটিই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে বর্তমানে তিনি প্রায় ১ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকার মালিক। এই সম্পদের বিপরীতে তার ব্যাংকঋণ ৯৩৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দেনা ১ হাজার ২২ কোটি টাকা। নির্বাচনের জন্য জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের এই মন্ত্রীর এত সম্পদ ও ব্যাংকঋণ নিয়ে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে চলছে নানান কানাঘুষা।

তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, যখন কোনো মানুষের বাসায় যাই ভোটের আরজি করে আসি। আমার একটাই কথা, আমি নৌকা চাই না, অন্যকিছু চাই না। এখনই অভিযোগ করতে চাই না, আরও বড় কিছু হলে তখন বলবো। তবে আমার একটা চাওয়া, ভোট যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, ভোটার এবং প্রার্থীরা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে— এটাই আমার সরকারের কাছে চাওয়া।

নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য আওয়ামী লীগকে চাপ সৃষ্টি করছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো নেতার সঙ্গে যোগাযোগ হয় না আমার। আমি তো নৌকা চাইনি তাহলে চাপ সৃষ্টি করবো কেন।

আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি তো কোনো মিটিং-মিছিল করি না। রাস্তায় মানুষের সঙ্গে দেখা হলে সাক্ষাৎ করি, দোয়া চাই।

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) বলেন, তৈমূর আলম খন্দকারকে কেউ ভোট দেবে না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, কেউ তাকে ভোট দেবে না। তৈমূর আলম খন্দকার যতই বলুক, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এতে কোনো লাভ হবে না। আর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করে না, হতাশও না। তৈমূর আলম খন্দকার তো অ্যাডভোকেট মানুষ, চাপাবাজি করাই তার কাজ।

তিনি বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাস্তায় রাস্তায় ভোট চাচ্ছেন। দলীয় মনোনীত প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী কেউ ভোট চাইতে বের হয়নি। কিন্তু তৈমূর আলম খন্দকার একা রাস্তায় রাস্তায় ভোট চাচ্ছে। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে কথা হয়েছে। এছাড়া কারো সঙ্গে কথা হয়নি।

নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করায় ইসিতে অভিযোগ দেবেন কি না— জানতে চাইলে গোলাম দস্তগীর গাজী ঢাকা টাইমসকে বলেন, সাংবাদিকের কাছে বললাম। তারাই জানুক। সাংবাদিকরা তো অভিযোগই লেখে।

(ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/জেএ/বিবি/এসআইএস)