জিএম কাদের কেন সামনে নেই?

প্রকাশ | ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০৫ | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৪২

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস

সারা বছর সরকারবিরোধী সমালোচনায় থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই অনেকটা নিশ্চুপ। এড়িয়ে চলছেন গণমাধ্যমকে। কেন তার এ নীরবতা তা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, বলছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

জাপার একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, সরকারবিরোধী বক্তব্য দিলেও জিএম কাদেরের সঙ্গে বিরোধ সরকারের ছিল না। তাকে প্রাধান্য না দিয়ে কেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে সরকার প্রাধান্য দেয়, এটিই তার মূল ক্ষোভ।

গত ২০ আগস্ট ভারত সফরে যান জিএম কাদের। জানা যায়, সেখানে গিয়ে ভারত সরকারের মধ্যস্থতায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে এসেছেন। তারপর থেকেই গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলা শুরু করেন।

এ বিষয়ে জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, জিএম কাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের কাছে তার অভিমানের কথা তুলে ধরেন। পরে সে রাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয় জিএম কাদেরের। এ সমঝোতার কারণে বিরোধী দলের নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ সরকারের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েন। যার কারণে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে ব্যর্থ হন রওশন এরশাদ। সাক্ষাৎ পান মনোনয়নপত্র প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর।

এদিকে জাপার আরেকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, সারা বছর সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে সরব থাকা, সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মতামত দেওয়া এবং ১৪ আগস্ট তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাহিদা মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো জিএম কাদের শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চাননি তিনি।

এছাড়াও আসন সমঝোতা নিয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে জিএম কাদের প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ দলটির শীর্ষ নেতাদের। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগের দুই দিন জাপায় যে নাটকীয়তা হয়েছে, এর পেছনে জিএম কাদেরকেই দোষারোপ করছেন নেতারা। আশানুরূপ আসনে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রত্যাহার না করায় ১৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে জাপা নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বাসায় এক বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন জাপা নেতারা। কিন্তু রাত পোহালেই হঠাৎ করেই জিএম কাদেরের সহধর্মিণী শেরিফা কাদেরকে ঢাকা-১৮ আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিলে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

জাপার এক সংসদ সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, জিএম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নু আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে আমাদের অন্ধকারে রেখেছে। তারা নিজেদের আসন এবং শেরিফা কাদেরের আসনকেই গুরুত্ব দিয়েছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টানা দুইবার এমপি ছিলাম। তারা (জিএম কাদের-চুন্নু) একবারের জন্যও যদি বলতেন সমঝোতার তালিকায় আমরা নেই, তাহলে সরকারের উচ্চ মহলে আমরা কথা বলতে পারতাম। তারা পরিকল্পিতভাবে সুযোগটিও আমাদের দেয়নি। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, জিএম কাদের লোক দেখানোর জন্য এবং সরকারের কাছে ফ্যাক্টর হিসেবে প্রমাণ করার জন্য সরকারবিরোধী কথা বললেও আমরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করেছিলাম। কৌশলে নিজে খোলস পাল্টিয়ে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিলেন।


জাতীয় পার্টির অপর এক কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘পার্টির তৎকালীন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু মারা যাওয়ার পর জিএম কাদের শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব বানাতে গেলে আমরা এর বিরোধিতা করে মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিব করার জন্য একযোগে কাজ করেছি। অথচ চুন্নু সাহেবও এভাবে প্রতিদান দিলেন!’

দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘জিএম কাদের লালমনিরহাট ছেড়ে প্রয়াত এরশাদের আসনে নির্বাচন করছেন। লালমনিরহাটে তো তিনি বর্তমান এমপি। সেখানেও শেরিফা কাদেরকে মনোনয়ন দিতে পারতেন। শেরিফা কাদেরের জন্য কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম এবং লিয়াকত হোসেন খোকার মতো হেভিওয়েট নেতাদের বলি দেওয়া হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/জেবি/আরআর)