একগুচ্ছ ভালোবাসার পঙক্তিমালা

প্রকাশ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:৫৭ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:৩৩

অনলাইন ডেস্ক

অনতিক্রান্তবৃত্ত

মঞ্জুরুল হক

চারিদিক ছেয়ে আসা অন্ধকার
ঝড়ো রাতে কেউ বলল না-
'থেকে যাও, এত রাতে কোথায় যাবে?’

দুর্যোগের রাতেও যাকে বেরিয়ে
পড়তে হয় তার কাছে রাত-বিরেতের
এইসব পুরোনো কষ্ট আর নতুন করে বেঁধে না।

বহুকালের পুরোনো শ্যাওলা পড়া 
পুকুরঘাটের সিঁড়ির মতো
ক্ষয়ে যাওয়া বুকে কার শর বিঁধল
আর কে ধান রেখে ডলে দিল
এখন আর মনেও পড়ে না।

রাত-বিরেতে আমার আর কষ্ট হয় না,
কোথাও না কোথাও জায়গা হয়;
ইস্টিশনের ঘন্টিঘরে কুপিবাতির
ঘোলাটে আলোয় ট্রেনের অপেক্ষায়
কাটিয়ে দিতে পারি সারাটা রাত।
তখন আর একটিবারের জন্যও 
মনে হয় না কেউ বলুক-
‘থেকে যাও, এত রাতে কোথায় যাবে?’
২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৩, ঢাকা

আছি

 

মোসলিমা খাতুন

 

বাইরে বৈরী বাতাস 
বৃষ্টি ফোঁটার মতো বরফ কুচি
অবিরত স্ফটিক কণার মতো ঝরছে
জানলার কাচ সরিয়ে পেতেছি হাত
ঠান্ডা শীতল হাওয়া আমাকে জানিয়ে গেল- আছি।
ঐ শীর্ণ বৃক্ষগুলো পাতাহীন ফুলহীন
মৃত কঙ্কালের মতো হাড্ডিসার তবু ঈশারায় 
আমাকে জানিয়ে দিল- আছি।
আকাশে জমানো মেঘ ক্লান্ত আকাশ
আজ আকাশটাকে খুউব কাছে মনে হয়
চোখের সামনে দিয়ে উড়ে গেল অচেনা পাখি
শুনতে পেলুম অস্ফুট একটি ধ্বনি
যেন বলে গেল- আছি।
দিগন্ত ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে 
ছাইকালো মেঘের মতো নির্জীব পাহাড়
কুয়াশার চাদরঢাকা, তবু বলে- আছি।
খুব কাছেই উন্মত্ত সাগর, আজ বড়ো দিন
ঝারবাতির আলোয় সজ্জিত শহর
মানুষেরা ফিরে গেছে ঈশ্বরের কাছে
অতৃপ্ত স্বপ্নঘোর ঘনসন্ধ্যার শীতল ছায়া 
সাগরের ফেনার উপর গাইছে বিরহগাথা 
সমস্বরে নুড়ি আর ঝিনুকের দল
বালির ভিতর থেকে মাথা উঁচিয়ে উপকুল বলে- আছি।
পৃথিবীর 'পরে যেদিকেই তাকাই শুধুই শূন্যতা
সকল শূন্যতার ঘোরে আমিও শূন্য হয়ে যাই
তবুও সে আমার ভিতরে দর্পণে রাখে মুখ
আমি চিনি না যারে পাইনি তার শরীরের স্বাদ
তাকে ঘিরে কখনো হয়নি আমার আধেক আহ্লাদ
হায়! নির্জন নিঃশব্দ আলোয় কে যেন তবু
বলে উঠে হঠাৎ- আছি।
ঠিক এই আমি যখন থাকবো না দৃশ্যমান
তোমার চোখের সামনে ঘরে বাহিরে তারপরও
আঁধার তাড়িয়ে জোসনালোকের মতো
তোমার অধর ছুঁয়ে দেবো নীরব হলে জলসাঘর
অকস্মাৎ শুনতে পাবে একটি দীর্ঘশ্বাস
হাত বাড়িয়ে পাবে না খুঁজে কিছুই
শুধু বুঝবে করতলে যেন উষ্ণ হাওয়া
তোমার কানের কাছে রেখে মুখ 
ফিসফিস করে বলছি, আছি- আছি তো!
বল্টন, ম্যানচেস্টার, ইংল্যান্ড

আঁধারনেশা

 

কামরুল কমল

 

আঁধারে চুমুক দিলে নেশা হয়
লেলিহান শিখার সাজে
পট-পট আওয়াজে
পুড়ে যায় সমস্ত ক্লান্তি
উড়ে যায় ছাই
আলোতে এমন স্নিগ্ধতা নাই।
মিরপুর, ঢাকা


আফালী করিমগঞ্জো

 

অর্ক অপু

 

নরসুন্দা নদীটাও মরে যাবে।
করিমগঞ্জের ছোটো বাড়িগুলো
আকাশ দিকে মেলে ধরবে বাড়ন্ত শরীর। 
আকাশের ছাদ ভেদ করে- তাজ্জব চাঁদ
দেখা যাবে মাঝে-মাঝে,
জলবাতাসে উঠবে না আফাল,
তবে- এবারের বন্যার মতো
আবার- কোনো একবার
জলের কামড়ে বিলীন হবে
স্কুল মসজিদ মাঠ।
নদী গর্ভে জন্ম নিবে না কি
নতুন জ্যোৎস্নাপাঠ।
টঙ্গি, গাজীপুর


প্রশ্নবোধক?

 

মৃত্তিকা মুক্তা 

 

কবিতার শব্দশৈলী খেরো খাতার
মলাট ফুঁড়ে যেই না বাইরে আসতে চাইলো
আমার রক্তবর্ণ চোখ রাঙানোয়
ওরা নান্দনিক বাক্যগঠন ভুলে 
লুকিয়ে রইলো চরম ডরে পরম অবহলায়,
কই তখন তো
কাছের কোনো আপনজন বলল না
আমায় আদরে মমত্বে
কবিতাদের বাহিরে দাও আসতে
ওরা ওদের মতন খেলা করুক 
হেলেদুলে নাচতে নাচতে।
আর এজন্যই বোধকরি শুধীজনেরা 
ফিসফাস করে আড়ালে-আবডালে 
মৃত্তিকামুক্তার কবিতার বুঝি
চলিতেছে বিরহ যুগ।
ব্যস্ততার দবানল ও দায়িত্বের বেড়াজাল 
কখনো কখনো কবিকেও 
নিষিদ্ধ নিষ্ঠুরতার পরিচয়ে স্বস্তিবোধ বিলায়
নিছক অনিচ্ছায়, 
আমি তাই 
তাই বলে আমার ভালো হোক
এমন কোনো স্বজন কি আর
আমার থাকতে নেই?
দক্ষিণ হাওয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

নক্ষত্র ও প্রজাপতি 

রীতা শবনম লিপি

 

অন্ধকারের বুক জুড়ে
সন্ধ্যা তারার পাশে
নিঃসঙ্গ নক্ষত্র এক
চেয়ে আছে কোন অসীম শূন্যতায়
মহাকালের পথ পরিক্রমায়।
নক্ষত্র হৃদয়! 
অতল শূন্যতায় একাকী ভালোবাসাহীন প্রেমহীন 
অপেক্ষা আর অপেক্ষা 
অপেক্ষা দগ্ধ বুকে
ঘাসেদের জন্য অপেক্ষা 
একটা গাছের জন্য অপেক্ষা, 
শত সহস্র শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত 
পাতা ফুল ফল আর
পাখিদের নীড়। 
আহা, নীড়হারা পাখি! 
আর অপেক্ষা একজন মানবীর জন্য।
মানবী জঠরে তার পৃথিবী 
বুকের সুধায় পুষ্ট ধরণী।
ন্যায়দণ্ড হাতে 
শুভ্র আঁচল বাতাসে উড়ছে
ঝঞ্ঝা ক্ষুব্ধ সাগরে
ডুবন্ত জাহাজে 
পাল আর মাস্তুল,
কপালে টকটকে লাল টিপ
সূর্যের তীব্রতা ধারণ করে
বিচ্ছুরিত তীব্র কিরণ।
নক্ষত্রের হাহাকার 
শূন্যতা ভেদ করে
কখনও আছড়ে পড়ে না
সমুদ্রের বুকে
পৃথিবীর বুকে।
কালপুরুষ লক্ষ-কোটি বছর 
হয়তো-বা আরও বেশি সময় চেয়ে থাকে। 
চেয়ে থাকে এক একাকী নক্ষত্রের দিকে।
আকাশগঙ্গা সাঁতরে সাঁতরে 
নক্ষত্র ভেসে চলেছে 
কোনো এক অমোঘ গন্তব্যে। 
বুকে সর্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে
নক্ষত্র প্রার্থনা করেছিল
ঘাস, একটা গাছ, পাখি 
আর একজন মানবীর
জঠরে যার পৃথিবী। 
তবুও, একাকী নক্ষত্র 
সামনে শুধু প্রজাপতি!
মিরপুর, ঢাকা