‘মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগে বিভাজনের জন্য দায়ী কৃষিমন্ত্রী’

প্রকাশ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৭ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:০৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

নিজের বলয় ভারী ও ক্ষমতা দেখাতে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। এর দায়ভার তাকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিভাজন সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফি উদ্দিন মনি ও সাধারণ সম্পাদক মো. ছারোয়ার আলম খান আবু।

সম্প্রতি বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন আব্দুর রাজ্জাক। তার বক্তব্যের কারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাও খোদ বিব্রত।

সংবাদ সম্মেলনে ছারোয়ার আলম খান আবু বলেন, আব্দুর রাজ্জাক নিজে পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করছেন। আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। যখন তিনি শুনেছেন আমি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাই, এরপর থেকে তিনি বিভিন্নভাবে আমাকে চাপে রেখেছেন।

টাঙ্গাইল-১ আসনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ছরোয়ার আলম খান আবু। এ কারণে তাকে শোকজ করা হয় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি করে আসছিল।

পাশাপাশি তারা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করেন। গত ২০ ডিসেম্বর দলীয় কার্যালয়ে এক বিশেষ সভায় এই প্রস্তাব গৃহীতও হয়। এ বিষয়টি ২২ ডিসেম্বর মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া ইয়াকুব আলী।

সংবাদ সম্মেলনে ছারোয়ার আলম বলেন, গত ২২ ডিসেম্বর মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট, মিথ্যা ও অগঠনতান্ত্রিক। আমরা তাদের এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে দলের পক্ষে এমন সংবাদ সম্মেলন আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ছারোয়ার বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছিলাম- এই কারণে গত ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে উপজেলা পরিষদের সরকারি গাড়ি, আমার বাসা, আমার অফিস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী আব্দুল মোতালেবের কাজী ডিজিটাল হাসপাতাল ও নেতাকর্মীদের ৬০-৭০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন।

শুধু তাই নয়, তৃণমূল থেকে আগত ওয়ার্ড/ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে মারধর করেন। অনেকে আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশে তার সমর্থকরা এহেন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও বিভাজন করে দলীয় গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। যা মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষসহ অবগত আছেন। এত বাধার মুখেও উক্ত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি তৃণমূলের নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছিলেন।

মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাননীয় নেত্রী যাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রতীক দিয়ে পাঠিয়েছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেন এবং তিনটি ইউনিয়নে নৌকাকে পরাজিত করেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। সে লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠিত হয় ও নির্বাচন পরিচালিত হয়। কিন্তু মধুপুর নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও কেন্দ্র কমিটি আমাদেরকে না জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক তার অতি উৎসাহী, অনুগত ও বাহমভুক্ত, হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করেছে, যা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচারিতার শামিল।

সংবাদ সম্মেলনে মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভাজনের জন্য কে দায়ী জানতে চাইলে ছারোয়ার আলম বলেন, মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পোস্ট একেবারেই তৃণমূল পর্যায়ের পোস্ট। জেলা পর্যায় আমাদের অনেক উপরে। তার উপরে কেন্দ্র। সেই কেন্দ্রীয় নেতা যদি আমাদের ঐক্যবদ্ধ না রাখে, আমাদের সঙ্গে দ্বিমুখী আচরণ করেন, তাহলে জেলা বাধ্য হয়ে করে। আপনারা বুঝে নিতে পারেন কেন হচ্ছে, কার জন্য হচ্ছে। এর জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক। ওনার কারণে এই দ্বিধাবিভক্তি, বিশৃঙ্খলা। আমি যদি প্রার্থী না হতাম, তাহলে হয়তো এটা হতো না। আমার একটি বিলবোর্ড, পোস্টার কোথাও রাখেনি। বিএনএফের আছে, জাতীয় পার্টির আছে। কিন্তু আমার নেই।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের দলীয় প্রার্থী কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের পক্ষে মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ আছে কি না জানতে চাইলে ছরোয়ার আলম বলেন, আমি যেহেতু নির্বাচনে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হইনি, তাই নৌকার পক্ষেই কাজ করে যাবো। যেহেতু নৌকার পক্ষে আছি, সেহেতু ওনার (আব্দুর রাজ্জাক) পক্ষেই থাকা হলো।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনিসহ অনেকেই ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/২৫ডিসেম্বর/জেএ/কেএম)