২০২৪ সালে স্বর্ণের দাম কেমন হবে?
প্রকাশ | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২৮ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৪৮
২০২৩ সালজুড়েই টালমাটাল ছিল বিশ্ব অর্থনীতি। এর প্রভাবে অস্থির হয়ে ওঠে বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের বাজারও। ফলে বছর শেষে সবার নজর এখন ২০২৪ সালের দিকে। আগামী বছর স্বর্ণের বাজার দর কেমন হবে? প্রশ্ন সবার।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী বছর স্বর্ণের দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে চলেছে। এটি আগামী বছর ২ হাজার ডলারের উপরেই থাকতে পারে। তাদের মতে ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, দুর্বল মার্কিন ডলার এবং সুদহার কমানোর কারণে আগামী বছরও স্বর্ণের বাজার অস্থির থাকবে।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে বৈশ্বিক অস্থিরতায় তুলনামূলক নিরাপদ সম্পদ হিসেবে চাহিদা বেড়েছে স্বর্ণের। এতে বিশ্ববাজারে টানা দুই মাস ধরে বাড়ছে দাম। পাশাপাশি এ দামের ওপর সুদহার কমানোর প্রভাবও পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ব্যাংক ইউওবি-এর বাজার কৌশল, বিশ্ব অর্থনীতি এবং বাজার গবেষণা প্রধান হেং কুন হাউ বলেন, ২০২৪ সালজুড়ে মার্কিন ডলারের দুর্বল অবস্থান এবং সুদহার কমানোর শঙ্কা থাকায় স্বর্ণের দাম বাড়তি থাকবে।
এছাড়া ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ স্বর্ণের প্রতি আউন্স ২ হাজার ২০০ ডলার পর্যন্ত উঠে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি।
এদিকে টিডি সিকিউরিটিজের কমোডিটি স্ট্র্যাটেজির প্রধান বার্ট মেলেক বলেছেন, ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্বর্ণের প্রতি আউন্সের গড় দাম ২ হাজার ১০০ ডলার হবে। কারণ বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়াবে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে, রিজার্ভ সম্পদ হিসেবে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে স্বর্ণ কেনার ওপর ঝুঁকছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ২৪ শতাংশই আগামী বছর তাদের স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়াতে চায়। অর্থাৎ আগামী বছরগুলোয় সরকারি খাতেই স্বর্ণের তুমুল চাহিদা থাকবে। এদিকে ২০২৪ সালে ফেডারেল রিজার্ভের নীতিও ভূমিকা রাখবে। কারণ নিম্ন সুদহার ডলার দুর্বল অবস্থানে থাকবে। ফলে চাহিদা বাড়বে স্বর্ণের।
সম্প্রতি ফিচ সলিউশন রিসার্চ ইউনিট বিএমআই জানিয়েছে, আমরা বিশ্বাস করি ২০২৪ সালে স্বর্ণের দাম চড়া থাকার প্রধান কারণ হবে মার্কিন ফেডের সুদের হার কমানো, মার্কিন ডলারের দুর্বল অবস্থান এবং চরম ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা।
জেপি মরগানের সিইও জেমি ডিমন বলেছেন, বিগত কয়েক দশকের মধ্যে এটি বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে বিপজ্জনক সময় যাচ্ছে।
বিনিয়োগকারীরা সাধারণত এই ধাতুটিকে একটি নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ফলে এ বছর চাহিদা বাড়ায় স্বর্ণের দাম এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশ বেড়েছে।
স্বর্ণ উৎপাদকদের সংগঠন ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের বাজার কৌশলবিদ জন রিড সিএনএনকে বলেছেন, ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকির ধারা পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। শুধুমাত্র রাশিয়া-ইউক্রেন বা ইসরায়েল-হামাসের সংঘাত এর মূল কারণ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা। কেননা দক্ষিণ চীন সাগরে কী ঘটবে তা নিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে বাজারে। পাশাপাশি উদ্বেগ রয়েছে তাইওয়ানের সঙ্গে চীন কী করবে, তা নিয়েও।
সুতরাং বৈশ্বিক অস্থিরতায় বিশ্বের উদীয়মান বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণের মজুত বাড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেন রিড।
তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিমায়িত হওয়ার কারণে উদীয়মান বাজারের দেশগুলোর নীতিনির্ধারকরা ডলারের বিপরীতে স্বর্ণের মজুত বাড়ানোই নিরাপদ মনে করছেন।
(ঢাকাটাইমস/২৬ডিসেম্বর/এমআর)