ভোটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কেন্দ্র

প্রকাশ | ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:০১ | আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:২২

সামিয়া রহমান প্রিমা, ঢাকা টাইমস

ভোটের বাকি মাত্র ১ দিন। দেশজুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। সারাদেশেই চলছে ভোটগ্রহণের সব শেষ প্রস্তুতি। ইতোমধ্যেই রাজধানীর ভোটকেন্দ্রগুলোতে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রতিটি কেন্দ্রেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আনাগোনা দেখা গেছে সরেজমিনে।

বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বৃহস্পতিবার ক্লাস শেষেই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। 

ঢাকা-১০ আসনের অধীনে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) ও 
অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট প্রদান করবেন। এই কারণে নিরাপত্তার অযুহাত দেখিয়ে গণমাধ্যমকর্মীসহ কাউকেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, রবিবার ভোট শুরুর আগে এই কেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না। 

এছাড়া সরেজমিনে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নিরাপত্তা ও কেন্দ্রে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে। প্রায় সব কেন্দ্রের কিছুটা দুরত্বেই অবস্থান করছেন পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রের পাশেই রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাম্পিং বুথ। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার সারাদিন বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে বেড়িয়েছেন পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার  সদস্যরা। তবে ভোটের বুথ স্থাপনের লক্ষ্যে কাপড়সহ বিভিন্ন মালামাল রবিবার আসার  কথা রয়েছে। 

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরে বাংলা নগরের একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৩ আসন। এই আসনে মোট কেন্দ্র ১৩৪টি।  ঢাকা ১৩ আসনের এবারে নতুন কেন্দ্র রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই স্কুলের একজন শিক্ষক জানান, গত বৃহস্পতিবার ক্লাস শেষে আগামী ৯ তারিখ পর্যন্ত ছুটি দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের। ক্লাস শুরু হবে ১০ তারিখ। 

স্কুলের একজন কর্মচারী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দফায় দফায় পুলিশ, বিজিবিসহ অনেকেই আসছেন। ছাদ থেকে শুরু করে ভবনের প্রতিটি কোনায় কোনায় ঘুরে দেখছেন। তারা বলেছেন স্কুলের কেউ যেন ভোটের আগে-পরে না থাকে।’ ‘কিন্তু কেয়ারটেকার, সিকিউরিটি তারা তো এখানেই থাকেন। কোথায় যাবেন তারা?’ এমন প্রশ্ন ওই কর্মচারীর।

সকালে একজন ম্যাজিস্ট্রেট ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন বলেও জানান তিনি। 

এছাড়া কেন্দ্রের পাশেই ক্যাম্পিং বুথ স্থাপন করেছে মোহাম্মদপুর থানার ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ। এখানকার ছাত্রলীগের কর্মীরা জানান, ভোটারদের সহযোগিতায় আজ (শুক্রবার) থেকে এখানেই অবস্থান করবেন তারা। মূলত ভোটারদের ভোটার স্লিপ বিতরণ করবেন তারা। 

তারা আরও বলেন, ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানককে সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী করেই ঘরে ফিরবেন তারা।

এই এলাকার আরেকটি কেন্দ্র কিশলয় উচ্চ বালিকা স্কুল ও কলেজ। এই কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। কেন্দ্রের সামনে অবস্থান করা ছাত্রলীগের কর্মীরা জানান, এরইমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের স্লিপ দিয়েছেন তারা। 

এছাড়া ভোটারদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে তারা বলেন, jknanok.com নামে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। যেটা স্ক্যান করেও ভোটাররা ভোটের সিরিয়াল নাম্বার ও কেন্দ্র খুঁজে পাবেন। 

কাদেরিয়া তায়্যেবিয়া আলিয়া (কামিল) মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে ভোটার প্রায় ৫ হাজার। এই মাদরাসার লাইব্রেরিয়ান জানান, শ্রেনিকক্ষ ফাঁকা করা হলেও সংশ্লিষ্টরা লাইব্রেরি চাচ্ছেন। তারা (মাদরাসা কর্তৃপক্ষ) জানিয়েছেন, এত বই-পত্র সরানো সম্ভব নয়। কিছুক্ষন পরপরই সরকারি লোকজন আসছেন। দলীয় লোকজনও আসছেন বলে জানান তিনি। 

আরেকটি ভোটকেন্দ্র রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বিকালে বিজিবি সদস্যদের নিয়ে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট। লক্ষ্য করা যায় ভেতরে স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করেছেন তিনি। 

এই আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রের আশেপাশের স্থানীয়রা জানান, মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা থেকে পুলিশ এসে কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখেছেন। আগামী রবিবার ভোটকে কেন্দ্র করে শনিবার থেকেই পুলিশ সদস্যরা বেশিরভাগ কেন্দ্রে অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রের পাশেই পুলিশভ্যান অবস্থান করতে দেখা গেছে। 

কেন্দ্রগুলোতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নিরাপত্তা সদস্যরা ব্যতীত আওয়ামী লীগের কর্মীবাহিনীর আনাগোনা রয়েছে। যেহেতু আওয়ামী লীগের বাইরে এই নির্বাচনে আর কোনো বড় দল নেই, তাই এর বাইরে অন্য কোনো দলের কর্মীদের ভোটকেন্দ্রগুলোর আশেপাশে দেখা যায়নি। 

এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রবিবার ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯টি আসনে হবে ভোটগ্রহণ। 

নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, এই নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭৬ লাখ এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ, এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৮৪৯ জন।

(ঢাকাটাইমস/০৫জানুয়ারি/এসআইএস)