নিউ মার্কেটে আগুন: ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের কেউ কেউ অন্য দোকানের কর্মচারী

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৪০

মেহেদী হাসান, ঢাকা টাইমস

শীতের কাপড় চোপড় নিয়ে ছোট্ট একটি চৌকির উপরে দোকান সাজিয়ে কোনোরকম ব্যবসা চালাতে দেখা গেছে রফিক মিয়োকে। রফিক মিয়ার সাথে কথা হয় ঢাকা টাইমসের। কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে তিনি জানান- কীভাবে দেবেন দোকানের ভাড়া। কীভাবে দেবেন কর্মচারীদের বেতন, সংসার চালানো নিয়েও যেন চিন্তার শেষ নেই। গ্রামের একটি ঋণ সংস্থা থেকে নেওয়া ঋণের টাকা দিয়ে কোনোরকম ব্যবসা চালু রেখেছেন রফিক মিয়া। ব্যবসার মন্দায় দোকান চালানো তার জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। আশানুপাতিক বেচাকেনা না থাকায় কীভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করবে তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।

নিউ মার্কেটের গড়ে উঠা ভ্রাম্যমান দোকানগুলো সরেজমিন ঘুরে দৃশ্য দেখা গেছে।

আরেক ব্যবসায়ী রিয়াজ উদ্দিনের বাড়ি শরীয়তপুরের চরভাগার গাজী কান্দি গ্রামে। তিনি ঢাকা টাইমসকে জানান, তার বাবার পেনশনের জমানো টাকা দিয়ে ঢাকার নিউ মার্কেটে একটি দোকান ক্রয় করেন। পরে জমির দলিল দিয়ে কৃষি ব্যাংক থেকে একটি বড় লোন নেন। লোনের টাকা দিয়ে দোকানে মালামাল উঠান তিনি। কিন্তু কৃষি ব্যাংকের লোনের টাকা পরিশোধ করার আগেই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় তার দোকান। রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘অনেকেই আমাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশা দেখালেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। আগুন কারা দিয়েছে বা কীভাবে লেগেছে তা নিয়েও শুনছি নানান কথা।অনদিকে এলাকায় বিভিন্নজনেরা আসেন, ক্যামেরার সামনে কথা বলার সময় দেন নানা প্রতিশ্রুতি। অথচ সাহায্যে তেমন কাউকে পাননি বলে দাবি রিয়াজ উদ্দিনের।

কুমিল্লা ড্রেসের দোকান মালিক মিজানুর রহমান শামীম এখন আরেকটি দোকানের ম্যানেজার। হঠাৎ নিউ মার্কেটে লাগা আগুনে পুঁড়ে যায় তার দোকান। ঢাকা টাইমসের সাথে কথা হয় শামীমের। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সবসময়ই কম বেশি বেচা কেনা থাকে এই নিউ মার্কেটে। এখানে নিন্মবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ আসেন তাদের কাপড় চোপড় কিনতে। শীতে ক্রেতাদের ভীড় একটু বেশি থাকার কথা থাকলেও এবার তেমন ভীড় নেই। মাস শেষ হয়ে গেলেও পর্যন্ত বেতন পাইনি। এদিকে ঘর ভাড়া আটকে আছে। বাচ্চাদের স্কুলের বেতনও দিতে পারছি না। বাবা মায়ের ঔষধ শেষ হয়ে গেছে। তাদের ঔষধ কেনার টাকা লাগবে। আগে যখন নিজের ব্যবসা ছিল। হাতে সব সময় টাকা থাকায় কোনো চিন্তা ছিল না। দুর্ভাগ্যবশত দোকান পুঁড়ে যাওয়ায় এখন আমি অন্য দোকানের ম্যানেজারের দায়িত্বে আছি। ক্ষতি পূরণের আশা এখন আর করি না। যা ভাগ্যে আছে তাই তো হবে।

নিউ মার্কেটে আশার আলো নিভে গেছে দোকান ব্যবসায়ীদের। এখন কেউ কেউ করছেন পরের প্রতিষ্ঠানে চাকরী, নয়তো গ্রামের বাড়িতে গিয়ে করছেন কৃষি কাজ। আত্মীয় স্বজনরা যে সহযোগীতা করবে তাদের দোকানও পুঁড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে তারাও এখন রাস্তার ফকির।

(ঢাকাটাইমস/১১ জানুয়ারি/এমএইচ/আরআর)