নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় সহকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:১৮ | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:১১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

রাজধানীর মিরপুর রোডের একটি এনজিও অফিসের নিরাপত্তা কর্মী জুয়েল মিয়াকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন অপর নিরাপত্তা কর্মী আখতার। হত্যায় জড়িত আখতারকে গ্রেপ্তার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। 

পুলিশ বলছে, ঘাতক আখতারের ভাসমান যৌনকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে- এমন একজনের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন আখতার। 

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক। 

তিনি বলেন, “জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানতে পারে মিরপুর রোডের এনজিও ‘সিদীপ’ কার্যালয়ের পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের ভেতর থেকে নিরাপত্তা কর্মী জুয়েলের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশ পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।”

ডিসি আজিমুল হক বলেন, “এ ঘটনার তদন্তে নেমে ভবনের রাতের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ। ভিডিওতে দেখা যায়, ২৩ জানুয়ারি ভোর ৫টা ৬ মিনিটের দিকে অপর নিরাপত্তা কর্মী আক্তার হোসেন একটি স্টিলের পাইপ হাতে ভবনের দক্ষিণ পাশের চেয়ারের ওপরে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে থাকা জুয়েল মিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। লাঠি দিয়ে জুয়েলকে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। এতে জুয়েল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে আক্তার তাকে নৃশংসভাবে পেটাতে থাকে। এরপর ঘাতক আখতার মাটিতে পড়ে যাওয়া জুয়েলের হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের দিকে নিতে থাকে। টেনে হিঁচড়ে নেওয়ার সময়ও আক্তার হাতে থাকা স্টিলের পাইপ দিয়ে জুয়েলকে তিন দফায় পেটায়। লাঠির আঘাতে জুয়েলের মাথা, চোখ, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের ফলে মৃত্যু হয়। এরপর জুয়েলের হাত বেঁধে কম্বল মুড়িয়ে পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের ভিতর ঢুকিয়ে রুমটি বন্ধ করে দিয়ে পালিয়ে যায়। হত্যার পরে আখতার আলামত নষ্ট করে।”

ডিসি আরও বলেন, “এই ঘটনায় নিহতের পরিবার মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্তে নেমে নিরাপত্তা কর্মী আখতারকে প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার এলাকার একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।” 

জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিসি তেজগাঁও জানান, আখতার হোসেন দেড় বছর ধরে সিদীপ নামের এনজিও কার্যালয়ে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছেন। জুয়েল মিয়া ১ জানুয়ারি একই প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে যোগ দেন। জুয়েল মিয়া ডিউটি চলাকালে প্রায় সময়ই অফিসের বাইরে যেতে চাইলে আখতার হোসেন তাতে বাধা দিতেন। এতে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। আখতার আগে থেকে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে এবং তিনি এর সুযোগ নিয়ে অন্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতেন। জুয়েল এটি মেনে নিতে পারেননি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আখতার তার বান্ধবী পরিচয়ে এক যৌন কর্মীকে রাতে অফিসে নিয়ে আসে এবং  জুয়েল তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। বিষয়টি নিয়ে নিহত জুয়েল আসামি আখতারকে সবাইকে জানিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চরম বিরোধ জন্মায়। ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে জুয়েল আসামি আখতারের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। রাত ১টার দিকে আখতার এনজিও অফিসের পিওন সতেজ চাকমা ও আল আমিনকে বিষয়টি জানালে তারা নিচে আসেন। এসময় জুয়েল মোবাইলটি আল আমিনের কাছে জমা দেন। এ ঘটনার জেরে ভোর পাঁচটার দিকে জুয়েল মিয়া ডিউটিরত অবস্থায় ভবনের দক্ষিণ পাশে চেয়ারের ওপর কম্বল মুড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকা জুয়েলকে লোহার পাইপ নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করেন। হত্যার পর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য লাশটি টেনেহিঁচড়ে পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমে নিয়ে যান। সেখানে নিহত জুয়েলের হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে কম্বল মুড়িয়ে সাব-স্টেশনের ভিতরে লুকিয়ে রেখে রুমটি বাইরে থেকে লাগিয়ে দেন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার পাইপটি ফেলে দেন। হত্যার সময়ে ভবনের অপর দুই নিরাপত্তাকর্মী অন্য রুমে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/এসএস/এফএ