একগুচ্ছ ভালোবাসার পঙক্তিমালা

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩০ | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৪১

অনলাইন ডেস্ক

কৃষিকাজের মহাজনি 

অর্ক অপু

বনশ্রীবালার আছে নোনা জলের ঘের,
সরল গ্রামের গহীনে আছে তার স্বাদু পানির সুষম পুকুর
বনশ্রীবালা তার জলে মাছ পোষে।
প্রায়শই রাতে নোনা জলের ঘেরে,
গহীন গ্রামের অন্ধকারে পুকুরের পাড়ে বসে, 
আমি শুনেছি মাছেদের পাখনায় বাহারি সুর,
দেখেছি হঠাৎ  চমক দেওয়া জ্যোৎস্নায় ভরপুর কারুকাজে,
মাছেরা বিয়েবাড়ির ঝলমলে আলোর মতন সেজে আছে।
বিস্ময়ে আমি শুয়ে পড়েছি পুকুরের পাড়ে,
গহীন গ্রামের আঁধারে বদলেছে জ্যোৎস্নার রং,
শরীরের মহাজনের গদিতে লেগেছে তার ঢেউ,
বনশ্রীবালা বোঝেনি... বোঝেনি অন্য যেকোনো কেউ।
আমি খুব গোপনে জলে নেমে হাতে তুলে নিয়েছি আকাক্সক্ষার মাছ
তারপর রিপুর আগুনে পুড়ে আয়েশ করে কাটাশুদ্ধ খেয়েছি তারে।
শরীরে আমিষের গন্ধ পেয়ে বনশ্রী কি ছাড়ে...!
কিউট বিড়ালের মতো কোলে করে রাখে আদরে
আমি তারে দেই খামচির দাগ,
আমি তার ওমে লেজ পাকিয়ে রাখি,
বনশ্রীবালার নোনা স্বাদু-জলে নতুন মাছ শিকারের অপেক্ষায় থাকি।

বনশ্রীবালার আছে নোনা জলের ঘের,
সরল গ্রামের গহীনে আছে তার স্বাদু পানির সুষম পুকুর,
সে মাছ পোষে আর কিউট বিড়াল।

বাংলা বিভাগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, উত্তরা, ঢাকা

==================== 

সৌখিন এক্সপ্রেস

কামরুল কমল

তোমার বাসে উঠে যাওয়া তাকিয়ে দেখলাম
বিদায়ে কি থাকে!
চলে যাওয়া তো শূন্যতাই।
তুমিও বিদায় দিতে আগে
তোমারও হৃদয় কি হতো ক্ষত?
মানুষের পিছনের দিকে লেপটে থাকে বেহালা
মন খারাপের নোট।
কুর্নিশ করে পিছন পায়ে দরবার ছাড়ে যারা
তারা তো জানে না 
বিদায়ের বিপুল ভার, শূন্যতার হাহাকার
নির্লিপ্তের মতো ব্যথা!
সহস্র উপঢৌকন 
ভরাতে পারে না বিদায়বেলার মানুষের মন।
আমাদের কত কত বিদায়!
যদিও প্রস্থান, কোথাও গিয়ে আগমনেরই গান
এক জোড়া চড়ুই পাখির চোখের চঞ্চলায়
বসে আছে অপেক্ষা!
ফুটে আছে লজ্জাবতির রেণুময় বেগুনি ফুল।
মেঠো পথের নির্মলতা ছড়িয়ে রেখেছে স্নিগ্ধ সম্ভাষণ
কাটা তালগাছের গুড়ির নির্মোহ সঙ্গ 
শব্দহীন সাড়াহীন নির্লিপ্ততায়!
পিচের পথ দাপিয়ে 
হর্ন বাজিয়ে ছুটে যাচ্ছে সৌখিন এক্সপ্রেস।

মিরপুর, ঢাকা

======================= 

জননী শেখ হাসিনা

মোসলিমা খাতুন

তোমার দিকে তাকালে 
প্রশান্তির বাতাস বহে ধীরে
তোমার দিকে তাকালে
গোলাপের সৌরভ পাই ফিরে।
তোমার দিকে তাকালে
ছলিমনের একাকীত্ব যায় চলে।
তোমার দিকে তাকালে
সব দুঃখরা পালাই পালাই করে।
তোমার দিকে তাকালে
ঘরহীন বিধবা ভিজে না মেঘজলে।
তুমি পাশে থাকলে
বেঁচে থাকার ইচ্ছেরা সাহসী হয় যে,
তোমার দিকে তাকালে 
ফুল-পাখি শিশুর মতো
বর্ণমালার প্রতিটা বর্ণ
সুখের দোলনায় দোলে।
তোমার দিকে তাকালে
আগামীকাল যে শিশু জন্ম নেবে
রক্তে লাল পতাকা দেখে দেখে
সবুজ বৃক্ষের নিচে বেড়ে উঠবে।
তোমার দিকে তাকালে
স্বপ্ন কিশোরের ঘুম যায় ভেঙে 
পিতার রেখে যাওয়া খেরোখাতার
পাতা উল্টাতে গিয়ে আমাদের ভূগোলের 
গৌরবের ইতিহাস যায় জেনে।
তোমার দিকে তাকালে
ভূমিহীন কৃষানিরা মাঠ-ফসলের 
গান শোনে নতুন উদ্যমে।
তোমার দিকে তাকালে
শীতদুপুরে বস্ত্রহীন পথশিশুর দল
কবোষ্ণ চুম্বনে কানে কানে বলে-
তুমিই আমাদের বস্ত্র আর শেষ আশ্রয়,
আমাদের জননী স্বদেশ
বিশ্বসভার উজ্জ্বল আসনে উড়িয়েছো
একটি পতাকা জাগরণের উন্মেষ;
উন্নয়নের গৌরবগাঁথা 
তুমিই আমার বাংলাদেশ।

চাঁদের হাট, সখিপুর, টাঙ্গাইল

============== 


২০২৪-এর প্রথম প্রহর

মৃত্তিকা মুক্তা

কাল রাতে আকাশে জ্বলেছিল আগুন
সে আগুনের স্ফুলিঙ্গ
মনোহরা বিচিত্র রূপে ঝরে ঝরে পড়ছিল পৃথিবীর হৃৎপিণ্ডে
পৃথিবী তখন পুরোনোকে বিদায়ে ব্যস্ত।
কাল মধ্যরাত পর্যন্ত আমি ছিলাম নির্ঘুম
রাত জাগা খয়েরি পাখির দল ও
লক্ষী-প্যাঁচার প্রণয়ী দল
তাদের বাসায় লুকিয়ে ছিল নীরবে নির্ঘুম,
শিয়ালদম্পতিও তাদের আস্তানা
ছেড়ে একবারের জন্য বাইরে বের হয়নি।
হইহুল্লোড় আর বাজির শব্দ মুহুর্মুহু বিদীর্ণ
করেছিল সময়ের প্রতিটি মূহুর্ত,
আমার বারান্দা, অন্দরমহল, বৈঠকখানা ও
দরজায়-দরজায় ঝুলে থাকা ঘণ্টাগুলোর
আনাচ-কানাচে সর্বত্র
সন্তর্পণে বাজির শব্দ ও আনন্দিত হইহুল্লোড়
ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে আমাকে বারবার জানিয়ে দিল
আজ ২০২৪-এর প্রথম প্রহর।
অতএব আজ ২০২৪
নতুন বছর।

দক্ষিণ হাওয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

==========================