সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম

দেশেই চিকিৎসা, শ্রবণশক্তি ফিরে পাওয়া জন্মবধিররা করল আবৃত্তি গাইল গান

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:০০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

জন্মবধির শিশুরাও এখন কানে শুনছে। সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় চিকিৎসা শেষে শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়েছে এই শিশুরা। দেশেই কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের মাধ্যমে জন্মগত মূক ও বধিরতা দূর করা হয়েছে তাদের। এমন ৪০ শিশুকে নিয়ে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নব জীবন পেয়ে নাচ-গানসহ স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি উপহার দিয়ে অতিথিদের বিস্মিত করেছে তারা।

বুধবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার হলে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট গ্রুপ অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ইয়ার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শ্রবণশক্তি ফিরে পাওয়া শিশুদের নিয়ে এই ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের মাধ্যমে কানে শোনার সুযোগ করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রত্যেক শিশু।

কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি অন্যতম প্রধান কাজ উল্লেখ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘এটি সরকারের সমাজসেবামূলক একটি কার্যক্রম। এই কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের মাধ্যমে জন্মগত বধির শিশুদেরকে সমাজে একজন সক্ষম স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে তৈরির সুযোগ। প্রতিবছর ভালো একটি বরাদ্দ থাকে এখানে যা প্রত্যেকটি সেন্টারে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া হয়। দেশে এখন পর্যন্ত যত কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট হয়েছে অধিকাংশই হয়েছে সরকারের সহযোগিতায়। কারণ পিতামাতার পক্ষে সেই খরচটা বহন করার মতো সামর্থ্য ছিল না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে খুবই কম হয়েছে। সরকার এটি সবসময় করে যাবে।’

অনুষ্ঠানে সবার পক্ষ থেকে আসা একটি দাবি প্রসঙ্গে সমাধান দিয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘সবার পক্ষ থেকে একটি দাবি এসেছে যে, কক্লিয়ার ডিভাইসটি নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে সেটির রিপ্লেসমেন্ট খুবই ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। পরিবারের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে আলাদা একটি ফান্ড হতে পারে, যেখান থেকে রোগীর পরিবারকে কক্লিয়ার ডিভাইস রিপ্লেসমেন্ট করা যেতে পারে। যদিও এটি পুরোপুরি সরকারের সিদ্ধান্ত।’

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘যেসব পরিবারের একেবারেই সক্ষমতা নেই, তাদের জন্য একটা ফান্ড হতে পারে। তবে সরকার যদি একটু সুবিধা করে দেয়, তারপরও রোগীদের পক্ষ থেকে কিছুটা খরচ বহন করতে হবে। কারণ পুরো ব্যয় যদি সরকার বহন করে তাহলে ডিভাইসের ওপর কারও নজর থাকে না। এছাড়া সবসময় সবকিছু বিনামূল্যে দেওয়া বোধহয় ভালো কোনো রীতি নয়। ফলে যার যতটুকু সক্ষমতা আছে, তিনি ততটুকু বহন করবেন। আর যার একেবারেই নেই, তারপাশে অবশ্যই রাষ্ট্র থাকবে।’

এদিকে স্বাগত বক্তব্যে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট গ্রুপ অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ইয়ার ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মনি লাল আইচ লিটু বলেন, ‘বিদেশী সার্জনের মাধ্যমে ২০০৫ সালে দেশে প্রথম কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট শুরু হয়। এর আগে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হয় ১৯৮৫ সালের দিকে। আর প্রতিবেশী দেশ ভারতে শুরু হয় ১৯৯৫ সালের দিকে। বর্তমানে  বিশ্বে চারটি কোম্পানি মানসম্পন্ন কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট তৈরি করে। তাদের মধ্যে অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা- এ তিন দেশের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট আমাদের দেশে ব্যবহার করা হয়।’

ডা. মনিলাল আইচ লিটু আরও বলেন, ‘গবেষণা জরিপ অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যার ৮% হেয়াররিং লস আছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ২ হাজার রোগীর অপারেশন করেছি। একটি বেসিক মডেলের কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের গড় মূল্য দাঁড়ায় নয় থেকে দশ লাখ টাকা। উচ্চতর মডেলের ক্ষেত্রে এর মূল্য বিশ ত্রিশ লাখ টাকা হয়ে থাকে। এই মূল্য আমাদের মতো দেশে বেশিরভাগ পরিবারেরই নাগালের বাইরে হওয়ায় সরকারি সহযোগিতায় নামমাত্র মূল্যে আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম সেখ, কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট গ্রুপ অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ইয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এইইচএম জহুরুল হকসহ অনেকে।

(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/টিএ/ইএস)