অফশোর ব্যাংকিং আইনের খসড়া অনুমোদন, বিনিয়োগ ও রিজার্ভ বাড়ার আশা

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:৫৯ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

রিজার্ভ বৃদ্ধি, আর্থিক কাঠামোকে সমৃদ্ধ ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশে প্রথমবারের মতো অফশোর ব্যাংকিংয়ের আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এর ফলে অনিবাসী বাংলাদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত ও ঋণ নিতে পারবে দেশের ব্যাংকগুলো। একইসঙ্গে অনিবাসী ব্যক্তি বা বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানও দেশে বিনিয়োগ করতে পারবে। এজন্য অফশোর ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স নিতে হবে।

এদিকে অফশোর ব্যাংকিং চালু হলে দেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, অফশোর ব্যাংকিং লেনদেনে যে সুদ আসবে, তার ওপর কোনো কর আরোপ করা হবে না।

বুধবার ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে আমরা লাভবান হব, সে জন্য আমরা এটি করছি।’

অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বৈদেশিক উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল সৃষ্টি হয় এবং প্রচলিত ব্যাংকিং আইনকানুনের বাইরে আলাদা আইনকানুনের মাধ্যমে এ তহবিল পরিচালিত হয় ও হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের ভেতরে আলাদা এক ব্যাংকিং ব্যবস্থা। স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে নির্ধারিত বৈদেশিক মুদ্রায় অফশোর ব্যাংকিংয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মার্কিন ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরো, জাপানি ইয়েন এবং চায়নিজ ইউয়ান—এ পাঁচটি মুদ্রায় এই ব্যাংকিং কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রস্তাবিত এই আইনের মাধ্যমে অনিবাসী ব্যক্তি কিংবা বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান যারা এখানে বিনিয়োগ করবে, তারা ‘অফশোর অ্যাকাউন্ট’ খুলতে পারবে।

তিনি বলেন, অফশোর ব্যাংকিং করার জন্য বিভিন্ন ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে লাইসেন্স নিতে হবে। তবে যারা ইতিমধ্যে এই লাইসেন্স নিয়েছেন, তাঁদের নতুন করে অনুমোদন নিতে হবে না। তারা এই আইনের আওতায় অনুমোদন নিয়েছেন বলে গণ্য হবে। কিন্তু নতুন করে যারা নিতে চান, তাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে অনুমোদন নিতে হবে।

মাহবুব হোসেন আরও বলেন, এই ব্যবস্থায় ব্যাংকগুলো অনিবাসী বাংলাদেশি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত গ্রহণ করতে পারবে এবং ঋণ দিতে পারবে। ওই আমানত স্বাভাবিক ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারবে। বিদেশে যে বাংলাদেশি (অনিবাসী) আছেন, তার পক্ষে কোনো বাংলাদেশি এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন, সহায়তাকারী হিসেবে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন।

অফশোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো ঋণসীমা বেঁধে দেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘ঋণসীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। যে কোনো পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে।’

সমসাময়িক আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এখন অফশোর ব্যাংকিংয়ে ইন্টারেস্ট দেওয়া হবে। ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে পারলে, ব্যাংকের নরমাল ব্যবসার প্রয়োজনে সে যখন বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তার তুলনায় ব্যয় কম হবে।’

‘বহু দেশ এ পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের বৈদেশিক রিজার্ভ ও আর্থিক কাঠামো সমৃদ্ধ করেছে। তারা বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট পেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশিরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যখন টাকা জমা রাখে। তখন কিন্তু টাকা নিয়ে যেতে পারমিশন নিতে হয়। অফশোর হলে স্বাধীনভাবে এটা অপারেট করা যাবে। এখানে ব্যবসা করে যারা লাভবান হবে তারা এখানে টাকা রাখতে আগ্রহী হবে বলে আমরা আশা করছি।’

‘শুধু রিজার্ভ বাড়াতেই এটি করা হচ্ছে না। অর্থনৈতিকভাবে আমরা লাভবান হব সেজন্য আমরা এটি করছি’—যোগ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিনিয়োগ কতটা হবে এই মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে হবে। এমনিতেও যেসব প্রতিষ্ঠানে বিদেশি ইম্প্রুভমেন্ট আসবে সেসব প্রতিষ্ঠান যদি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সেটাও থাকবে। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজারে এর একটা ইতিবাক প্রভাব পড়বে বলে আমরাও আশাবাদী। তবে এই মুহূর্তে ঠিক বলা যাবে না সেটা কতটুকু হবে।’

ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/ইএস