ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে সজনে পাতা! দূর হয় রক্তস্বল্পতা

প্রকাশ | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:২১ | আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩০

ফিচার ও স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

প্রকৃতির মধ্যে কিছু ভেষজ গাছ আছে যা খেলে খুব সহজেই আমাদের বিভিন্ন রোগ নিরাময় হয়, এমন একটি ভেষজ গাছ সজনে। যার বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা অলিফেরা। সজনে আমাদের সবার কাছে অতি পরিচিত সুস্বাদু একটি সবজি।

সজিনার মূল, ছাল, ফুল, ফল, বীজ,পাতা সবকিছুতেই মহাঔষধি গুণ বিদ্যমান। এর প্রধান ঔষধি রাসায়নিক পদার্থ হচ্ছে,বিটা- সিটোস্টেরোল, এক্যালয়েডস-মোরিনাজিন। আর ফুলে আছে জীবানুনাশক টিরিগোজপারমিন। এর মধ্যে আছে ভিটামিন এ, বি, সি,প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি।

পুষ্টিগুণ বিবেচনায় সজনে পাতা আর সজনে ডাঁটা দুটিই মুল্যবান। এই দুই ধরনের খাবারের মধ্যেই কিছু বিশেষ গুণাগুণ রয়েছে যা শরীরের জন্য নানাবিধ উপকারিতা বয়ে আনে। তাই আপনার পছন্দমতো যে কোনো একটি খেতে পারেন।

তবে সজনে ডাঁটার মধ্যে পাতার তুলনায় বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি ও ফাইবার রয়েছে। সজনে পাতার মধ্যে ১৮ ধরনের এমিনো এসিড রয়েছে যা প্রোটিন গঠনের মূল উপাদান। প্রোটিনের একটি ভালো উৎস হিসেবে পুষ্টিবিদরা সজনে পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেন।

তাই আর দেরি না করে সজনে পাতার অত্যাশ্চর্য সব উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন-

পুষ্টির পাওয়ার হাউজ

প্রতি গ্রাম সজনে পাতায় একটি কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি, ডিম থেকে প্রায় দুই গুন বেশি প্রোটিন ও দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন, গাজরের চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান। আয়রনের দিক থেকে এটি পালং শাকের চেয়ে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী।। ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতা সহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতি জনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

সজনে পাতার এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং আইসোথিয়োকাইনেটস নামের উপাদানগুলো রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম সজিনার পাতা খেলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আদর্শ সজনে পাতার চা। এই পাতার মধ্যে ফাইটোকেমিক্যাল নামের একটি যৌগ রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এই পাতার চা পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অক্সিডেটিভ চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

রক্তস্বল্পতা দূর করে

সজনে পাতা রক্তল্পতা দূর করে। শাকের তুলনায় পঁচিশ গুন বেশি আয়রন রয়েছে এতে। কলা থেকে তিন গুন বেশি পটাশিয়াম রয়েছে। শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সজনে পাতা দারুণ উপযোগী। তবে ভাল উপকার পেতে বেশ কিছুদিন নিয়মিত সজনে পাতা, ডাঁটা ও ফুল খাওয়া দরকার।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের খনি

সজনে পাতাকে এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি বলা হয়ে থাকে। যা ক্যানসার কোষ সৃষ্টিতে বাধা দেয়। তাছাড়া এ তে রয়েছে বেটা-কেরোটিন, কিউরেকটিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড যা মানবদেহের জন্য উপকারী। ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তের চাপ ও শর্করা কমাতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ করে

সজনে পাতার শাক বা কাঁচা পাতার রস মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারী। সজনে মানব শরীরে যেমন হরমোন বর্ধন করতে পারে, তেমনি পারে মায়েদের বুকের দুধ বাড়িয়ে দিতে। তাছাড়া সজনে পাতা শাক, ভর্তা বা পকোড়া করে খেলে মুখের রুচি আসে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। ডায়ারিয়া, কলেরা, আমাশয়, কোলাইটিস এবং জন্ডিসের সময় ও ব্যাপক কার্যকরী সজনে পাতা। সাজিনার ডাঁটা ও পাতা কৃমিনাশক ও জ্বরনাশক হিসেবে ও কাজ করে।

ব্ল্যাড প্রেসার নিয়ন্ত্রিত থাকে

ব্ল্যাড প্রেসার রোগীদের জন্য খাবার লবণ অর্থাৎ ‘সোডিয়াম ক্লোরাইড’ খুবই ক্ষতিকর। অপরদিকে, ‘পটাশিয়াম লবণ’ কোন ক্ষতি করেনা। সাজনে ডাঁটাতে সোডিয়াম ক্লোরাইড নেই বললেই চলে। তাই এতে ব্ল্যাড প্রেসার নিয়ন্ত্রিত থাকে।

ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে

সজনের তেল এবং সজনে পাতার গুঁড়া ত্বকের বলিরেখা এবং ত্বকের ক্ষত দূর করে। এছাড়াও সজনে আমাদের ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের কুঁচকানো ভাব, বলিরেখা এবং বিভিন্ন দাগ ছোপ দূর করে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বল বজায় রাখতে সাহায্য করে। গুঁড়া কিংবা সজনের বীজ গ্রহণ করলে রক্ত পরিশ্রুত হয় যার ফলে ত্বক পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর হয়।

সজনে পাতার চা ও গুঁড়া যেভাবে বানাবেন

সজনে বা সজিনা পাতা কাঁচা অবস্থায় রান্না করে বা শুকনো করার পর গুঁড়া করে পাউডার হিসাবে সজিনা চা খাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত সজনে পাতার চা পান করলে শরীরে দুর্বলতা, ক্লান্তি আসবে না কখনও। শরীরে এনার্জি জোগাতে এক কাপ সজনে পাতার চা-ই যথেষ্ট। পাশাপাশি এই পাতার মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শরীরকে যে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।

সজনে পাতার চা দুইভাবে তৈরি করা যেতে পারে। এক. সরাসরি কাঁচা সজনে পাতা লাল চায়ের মধ্যে মিশিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে উপকারিতা পাওয়া যায়। দুই. এক্ষেত্রে প্রথমে সজনে পাতা শুকিয়ে নিতে হবে। অতঃপর তা হাতের মুঠোয় নিয়ে যতটুকু সম্ভব গুঁড়া করতে হবে। এবার তা গরম পানিতে মিশিয়ে চা বানাতে হবে। এই চায়ের সাথে পরিমাণ মতো চিনি, কুচি কুচি করে কাটা আদা ও লেবু ব্যবহার করা যেতে পারে।

সজনে পাতা গুঁড়া করে দীর্ঘদিন ঘরে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এক্ষেত্রে প্রথমে পাতা সংগ্রহ করে ধুয়ে নিতে হবে। অতঃপর রোদে দিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নেওয়ার পর শক্ত কিছুর উপর রেখে পিষে অথবা গ্রিন্ডার মেশিনের সহায়তায় গুঁড়া করতে হবে। প্লাস্টিকের বোতল অথবা বাটিতে না রেখে কাঁচের পাত্রে রাখুন। তাতে গুনাগুণ সবচেয়ে ভালো থাকবে। পুষ্টিবিদদের মতে, দৈনিক এক চামচ সজনে পাতার গুঁড়া খেলেই দৈনন্দিন ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ হবে। নিয়মিত ডায়েটে সজনে খান এবং সুস্থ থাকুন।

(ঢাকাটাইমস/২৯ফেব্রুয়ারি/এজে)