রোজা রাখার অসংখ্য ফজিলত, না রাখলে কী ভয়ানক শাস্তি তাও জানুন
প্রকাশ | ১২ মার্চ ২০২৪, ১০:৫২
বছর ঘুরে আবার এসেছে রমজান। আরবী এ মাসব্যাপী রোজা রাখবে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়। আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজা ফরজ ইবাদাত, যা অবশ্যই পালনীয়। রোজা রাখলে যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক পুরস্কার রয়েছে, তেমনই না রাখলে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তির বিধান।
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। যা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। রোজা রাখার অসংখ্য ফজিলত কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এখানে ১৫টি ফজিলত তুলে ধরা হলো। পাশাপাশি রোজা না রাখলে কী শাস্তি তাও জেনে নিন।
রোজা রাখার ফজিলত
১। রোজার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তাআলা দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, বান্দা একমাত্র আমার জন্য তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে। রোজা আমার জন্যই, আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। (বুখারি, হাদিস: ১৮৯৪)।
২। আল্লাহ তাআলা নিজের ওপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তাঁর সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কেয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন। (মুসনাদে বাযযার, হাদিস: ১০৩৯)।
৩। কেয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউজ থাকবে, যেখানে রোজাদার ব্যতিত অন্য কারও আগমন ঘটবে না। (মুসনাদে বাযযার, হাদিস: ৮১১৫)।
৪। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় এক দিন রোজা রাখবে, পরে তার মৃত্যু হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩৩২৪)।
৫। জান্নাতে একটি বিশেষ ফটক রয়েছে, যার নাম রাইয়ান। সেই গেইট দিয়ে কেবল রোজাদাররাই প্রবেশ করতে পারবেন। (বুখারি, হাদিস: ১৮৯৬)।
৬। রোজাদাররা রাইয়ান নামক গেইট দিয়ে প্রবেশ করে জান্নাতের পানীয় পান করবেন। তারপর থেকে আর কখনো তাঁরা পিপাসার্ত হবেন না। (তিরমিজি, হাদিস: ৭৬৫)।
৭। রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল। আল্লাহ তাআলা বলেন, রোজা হলো ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৪৬৬৯)।
৮। রোজা কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব! আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তাঁর ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, অতঃপর তাঁর সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৬৬২৬)।
৯। ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখলে পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস: ৩৮)।
১০। ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখলে ও তারাবিহ পড়লে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবেন, যেদিন বান্দা তার মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। (নাসাঈ, হাদিস: ২৫১৮)।
১১। রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধময়। (বুখারি, হাদিস: ১৯০৪)।
১২। রোজাদারের জন্য বিশেষ দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে; এক. যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সঙ্গে মিলিত হবে তখন তার রোজার (পুরস্কার লাভের) কারণে আনন্দিত হবে। (বুখারি, হাদিস: ১৯০৪)।
১৩। রোজাদাররা পরকালে সিদ্দিকীন ও শহীদদের দলভুক্ত হবে। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩৪২৯)।
১৪। ইফতারের সময় রোজাদার যদি দোয়া করেন, তাহলে তার দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ তার দোয়া কবুল হয়)। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৫৩)।
১৫। রোজা অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩০৭০)।
রোজা না রাখার শাস্তি
ইচ্ছাকৃত রোজা ত্যাগকারী ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারী হিসেবে গণ্য। শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত একটি রোজাও পরিত্যাগ করে, সে নিকৃষ্ট পাপী। দ্বীনের মৌলিক ফরজ লঙ্ঘনকারী এবং ঈমান ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারীরূপে পরিগণিত। এ কারণে তার যে ক্ষতি হবে তা কস্মিনকালেও পূরণ হবে না। এমনকি পরে কাজা করে নিলেও রমজানের রোজার কল্যাণ ও বরকত থেকে সে বঞ্চিত হবে।
হাদিস শরীফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওজর বা অসুস্থতা ছাড়া রমজানের একটি রোজা পরিত্যাগ করবে, সে যদি ওই রোজার পরিবর্তে আজীবন রোজা রাখে, তবুও ওই এক রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না।’ (জামে তিরমিজি: ৭২৩)।
রোজা না রাখা বা ভেঙে ফেলার যে শাস্তি নবীজিকে দেখানো হয়েছে
আবু উমামা বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, একবার আমি ঘুমিয়েছিলাম। এ সময় দুজন মানুষ এসে আমার দুই বাহু ধরে আমাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেল। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে বলল, পাহাড়ে উঠুন। আমি বললাম, আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বলল, আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি।
তাদের আশ্বাস পেয়ে আমি উঠতে লাগলাম এবং পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত গেলাম। সেখানে প্রচণ্ড চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কীসের শব্দ? তারা বলল, এটা জাহান্নামীদের চিৎকার।
এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকের কাছে নিয়ে গেল, যাদের পায়ের টাকনুতে শিকল বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নভিন্ন এবং তা থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা হচ্ছে তারা যারা রোজা রাখতো না এবং রোজা পূর্ণ করার আগেই ইফতার করত।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৭৪৯১)।
কাজেই আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং নিয়ম মেনে সঠিক উপায়ে রমজান মাসের ৩০টি রোজা রাখার তৌফিক দান করুক। তার জন্য শারীরিক সুস্থতা অনেক জরুরি। আল্লাহ সবাইকে সুস্থতা নামক সেই নেয়ামত দান করুক (আমিন)।
(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/এজে)