ঢাবিতে রমজানের আলোচনায় হামলার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

প্রকাশ | ১৩ মার্চ ২০২৪, ২০:৪৪

​​​​​​​ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পবিত্র রমজান নিয়ে আলোচনা সভায় বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আইন বিভাগের তিনজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন তাদের সহপাঠীরা। বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরের দিকে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের গেটের কাছে এই ঘটনা ঘটে।

 

ভুক্তভোগীরা জানান, রোজার ফজিলত তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করতে ওই শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে জড়ো হয়েছিলেন। নামাজ শেষে রোজার ফজিলত তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করে বের হবার সময় তাদের উপর হামলা করা হয়। 

 

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাফওয়ান, রেজওয়ান রিফাত, শাহীন, সাকিব তূর্য, মাহাদী, কুতুবউদ্দিন।

 

ছাড়াও অনেককে এলোপাতাড়ি চড়-কিল-ঘুষি দেওয়া হয়। এদের মাঝে শাহীন, রেজওয়ান সাকিব গুরুতর আহত হন। শাহীনকে মেরে মুখ থেতলে দেওয়া হয় এবং তাদের হাত মুখে ক্ষত হয়েছে। রেজওয়ানের মুখে উপর্যুপরি ঘুষিতে ঠোঁট কেটে গেছে এবং কোমরে পায়ের চামড়া ছিঁড়ে গেছে। সাকিবকেও রাস্তায় ফেলে মারা হয়। তারও মুখ ফেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম দেখা যায়। তারা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান চিকিৎসার জন্য।

 

অভিযুক্ত মো. তাওহীদুল ইসলাম ওরফে সুজন শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদেরডান হাত’ বলে পরিচিত। রাজনীতিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডুর অনুসারী হিসেবেও পরিচিত সুজন।

 

সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া তথ্য এবং প্রত্যক্ষদর্শী টাওয়ারের কর্মচারী ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আইন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী জোহরের নামাজ পড়তে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে আসেন। এ সময় তারা নামাজের শেষেই রমজানের গুরুত্ব, তাৎপর্য মাসলা মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা করতে চাইলে বাধা দেন বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কর্মচারী সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক। এখানে আলোচনা করাতে উপাচার্য প্রক্টর থেকে নিষেধ করা আছে এবং সেন্ট্রাল মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও রমজানের আলোচনা করা যাবে না বলে তিনি জানান।

একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম সুজন এসে তাদের মসজিদ থেকে বের হতে বলেন৷ এতে শিক্ষার্থীরা মসজিদ থেকে বের হয়ে সেন্ট্রাল মসজিদের দিকে যেতে চাইলে গেটের মুখেই তাওহীদুল ইসলাম সুজন তার অনুসারীরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। তাদেরকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি দিতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

 

গেটের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি গেট বন্ধ করে দিলে তারা বিভিন্ন দিকে দৌড়ে পালাতে থাকেন। পরে কয়েকজন কোনোভাবে গেট দিয়ে ঢুকে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরে আশ্রয় নিয়ে নিজেদের রক্ষা করেন।

 

ভুক্তভোগী আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম শহীদী বলেন, আমার তাবলীগের বন্ধু বড় ভাইয়েরা মিলে রোজার আমল ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করতে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে আসি। আমরা আগেই এটা প্রচার করেছি যে আমরা রোজার ফজিলত, মাসলা মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করবো। কিন্তু হঠাৎ অপরিচিত কয়েকজন মসজিদে এসে আমাদের বের হতে বলে। তাছাড়া টাওয়ারের কর্মচারীরাও আমাদের চলে যেতে বললে আমরা বের হই। এ সময় আমরা গেটের কাছাকাছি আসতেই ৩০/৪০ জন আমাদের উপর হামলা করে। পরে আমরা জানতে পারি তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিল। তাবলীগের উপর ছাত্রলীগ হামলা করবে আমরা ভাবতে পারিনি।

 

আহত শিক্ষার্থী রেজওয়ানকে দেখা যায় ঘটনার ৪০ মিনিট পর বঙ্গবন্ধু টাওয়ার থেকে নামছেন। তার পায়ে কোমরে গুরুতর জখম দেখা যায়, তাছাড়া তার ঠোট ফেটে রক্ত পড়ে তা জমাট বেধে থাকতে দেখা যায়৷ তিনি বলেন, আমরা নামাজের শেষে বের হতে না হতেই আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। আমিসহ আরও কয়েকজন তাবলীগের বন্ধুকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়েছে। পরে কোন উপায় না দেখে বন্ধুর সাথে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের একজনের বাসায় আশ্রয় নেই। আমাদের বন্ধু শাহীন আরও গুরুতর আহত। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে।

 

বিষয়ে অভিযুক্ত তাওহীদুল ইসলাম সুজন বলেন, ঘটনা একেবারে বানোয়াট মিথ্যা। আমার একটা ছবি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আমি অসুস্থ, আমার দাঁতে ব্যাথা, আমি তাদের মারতে যাবো কেন? তাছাড়া তখন আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। তবে হামলার ভিডিও ফুটেজেও সুজনকে দেখা গেছে।

 

হামলায় সুজনকে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হকের বিরুদ্ধে। তবে হামলার বিষয়ে কিছুই জানে না বলে দাবি করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৩মার্চ/এসকে/কেএম)