বাইক চালককে হত্যার পর মুখে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় ছিনতাইকারীরা

প্রকাশ | ১৮ মার্চ ২০২৪, ১৩:৫৪ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪, ১৪:২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

কয়েকদিন আগে ভাগিনার জন্য একটা মোটরসাইকেল কিনে দিতে মাশুক ২৫ হাজার টাকা দেন ফয়সালকে। টাকা নিয়েও বাইক দিতে না পারায় চাপ দিতে থাকেন মাশুক। মাশুকের চাপে ফয়সাল বাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এক মোটরসাইকেল চালককে হত্যা করে মুখমণ্ডল পেট্রোল দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। 

নিহত সাইফুল রাজধানীতে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালাতেন। ঘটনার তিনদিন আগে মাশুক ও ফয়সাল সাইফুলের মোটরসাইকেল ছিনতাই করার পরিকল্পনা করেন। গাজীপুর চৌরাস্তার একটি দোকান থেকে ছিনতাই করার জন্য ছুরি ক্রয় করেন তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাশুক নিহত সাইফুলকে এক সাংবাদিকের তথ্য সংগ্রহ এবং ভিডিও চিত্র ধারণের জন্য নেত্রকোণায় যেতে হবে বলে জানান।

গত ১৩ মার্চ বেলা ৩টায় মিরপুর-১৪ থেকে মাশুক ৩ হাজার টাকা ভাড়ায় সাইফুলকে নিয়ে নেত্রকোণার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পরে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে একই বাইকে ওঠেন ফয়সাল। নেত্রকোণা শহরে পৌঁছার পর সাইফুলকে পেছন থেকে রাস্তার পাশের পাথর দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করা হয়। এতে তিনি মাটিতে পড়ে অচেতন হয়ে গেলে ছুরি দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যান মাশুক ও ফয়সাল। এরপর  শার্ট-প্যান্ট খুলে তার মুখমণ্ডল পেঁচিয়ে মোটরসাইকেলের পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর হাতিয়ে নেওয়া মোটরসাইকেল মাশুক তার ভাগিনাকে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান।

ক্লুলেস সাইফুল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনসহ জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র‌্যাব।

রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১৪ এর একটি দল।

সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “গত ১৪ মার্চ দুপুরে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের দেওরাজান বালুর চরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলাকাটা লাশ দেখে স্থানীয় লোকেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করে। লাশ উদ্ধার ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিহতের নাম সাইফুল ইসলাম। বাবা আব্দুস সামাদ, বাড়ি ঝিনাইদহ।”

ওই ঘটনায় তার বড় ভাই বাদী হয়ে মোহনগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

রবিবার রাতে র‌্যাব-১৪ এর একটি দল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাশুক মিয়া ও আল-ইমরান ফয়সালকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সাইফুল হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার মঈন বলেন, “মাশুক ও ফয়সাল মূলত আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাই/চুরি চক্রের সদস্য। সাইফুল ৩-৪ বছর ধরে রাজধানীর মিরপুরে বসবাস করে আসছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল দিয়ে ভাড়ায় চালাতেন।”

কমান্ডার মঈন জানান, ১০-১৫ দিন আগে গ্রেপ্তার মাশুক গ্রেপ্তার ফয়সালকে জানান, তার ভাগিনার একটা মোটর সাইকেল দরকার। সেই সুবাদে মাশুক তার ভাগিনার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে ফয়সালকে দেন। কিন্তু ফয়সাল বাইক দিতে না পারায় মাশুক চাপ দিতে থাকে। পরে দুজন মিলে ফয়সালের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পিতভাবে তারা গাজীপুর চৌরাস্তার একটি দোকান থেকে ছুরি ক্রয় করেন। এক সাংবাদিকের তথ্য সংগ্রহ এবং ভিডিও চিত্র ধারণের জন্য নেত্রকোণায় যেতে গত ১৩ মার্চ ৩ হাজার টাকায় সাইফুলকে ভাড়া করা হয়। বিকাল ৩টায় মাশুক সাইফুলকে নিয়ে মিরপুর ১৪ থেকে নেত্রকোণার উদ্দেশ্যে রওনা করে। গাজীপুর থেকে ওঠেন ফয়সাল। 

ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছলে ট্রাফিক পুলিশ তাদের মোটরসাইকেল আটকায়। ফয়সাল নিজেকে দৈনিক শেষ খবর পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চলে যান। নেত্রকোণা শহরে গিয়ে  সংবাদের তথ্য সংগ্রহের অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। পরে রাত ৩টার দিকে পাথর দিয়ে প্রথমে মাথায় সজোরে আঘাত করা হয়। অচেতন হয়ে গেলে ছুরি দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় সাইফুলের। পরবর্তীতে পরিচয় গোপন করতে গ্রেপ্তারকৃতরা ভুক্তভোগী সাইফুলের পরনের শার্ট-প্যান্ট খুলে তার মুখমন্ডল পেঁচিয়ে মোটরসাইকেলের পেট্রোল দিয়ে মুখমন্ডলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও সাইফুলের মোবাইল ফোন পানিতে ফেলে তারা বাইক নিয়ে চলে আসেন। বাইকটি মাশুকের ভাগ্নের নিকট মোটরসাইকেল রেখে দুজনেই আত্মগোপনে চলে যায়।

মাশুক সম্পর্কে র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, “রাজধানীর মিরপুর ১৪ এলাকায় বসবাস করতো মাশুক। দিনে রাজমিস্ত্রির কাজ আর সন্ধ্যায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রির আড়ালে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো সে। হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়।”

ফয়সাল রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ছিনতাই করতেন। হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপন করেন। পরে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/এসএস/এফএ)