ঈদবাজার: যানজট ও ভিড় এড়াতে অনলাইন হয়ে উঠছে কেনাকাটার পছন্দের মাধ্যম

প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৫ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৩

​​​​​​​লিটন মাহমুদ, ঢাকা টাইমস

দেশে অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটায় মানুষের ঝোঁক বাড়ে করোনাকালে। ঘরবন্দি সেই সময়ে মানুষ বাইরে না গিয়ে ঘরে বসেই স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করেন। তবে করোনা পরিস্থিতির পর মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে এলেও সেই অভ্যাস আর বদল হয়নি। বরং আরও পাকা হয়ে বসেছে অনলাইন কার্যক্রম। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কেনাকাটার এই মাধ্যমটি নারী-পুরুষ উভয়েরই পছন্দের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। একইসঙ্গে পণ্য বিক্রির নামে প্রতারণার ঘটনাও ঘটছে।

ক্রেতারা বলছেন, সড়কে যানজট এবং শপিং সেন্টারগুলোর ভিড়ের যন্ত্রণায় অনলাইনই হয়ে উঠছে কেনাকাটার প্রথম পছন্দ। অনলাইনে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অথেনটিক শপ, পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখার প্রতি ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিশ্রুতি এবং উন্নত গ্রাহক সেবার কারণে গ্রাহকেরাও আকৃষ্ট হচ্ছেন কেনাকাটার আধুনিকতম এ মাধ্যমে। তবে অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণা ও ভুয়া বিক্রেতার তৎপরতাও রয়েছে বলে জানান অনেকে। এক্ষেত্রে সচেতনতা ও সতর্কতার কথা বলছেন ক্রেতা-ক্রেতারা।

এদিকে ঈদের পণ্যে ক্রেতা টানতে আকর্ষণীয় অফারও দিচ্ছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। পাশাপাশি চমকপ্রদ অফারের ভিড়ে ক্রেতারা যেন প্রতারিত না হয়, এজন্য নজরদারি বাড়ানোর কথা জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল আমিন অনলাইনে কেনাকাটার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘সড়কে এমনিতেই অনেক যানজট। আর শপিংমলগুলোতে মানুষের অনেক ভিড়। সত্যি কথা বলতে এমন অবস্থায় একটি পণ্য কেনার সময় যাচাই করে দেখারও সুযোগ পাওয়া যায় না। তার থেকে ভালো ইন্টারনেট থেকে কেনা। পণ্যের বিস্তারিত দেখা যায়। ক্যাশ অন ডেলিভারিতে বাসায় বসে পণ্য যাচাই করে তারপর দাম পরিশোধ করারও সুযোগ থাকছে। আর অনলাইনে মূল্য পরিশোধ করলে তো আরও ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়। তাই অনলাইনই ভালো।’

ঈদের কেনাকাটায় ঠিক কত টাকার লেনদেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে হয় তার সঠিক হিসাব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-ক্যাবের কাছে নেই। তবে যেকোনো বারের থেকে এবার অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি আর্থিক লেনদেন হবে বলে আশা সংগঠনটির।

অনলাইন মার্কেট প্লেস দারাজের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স হাসিনুল কুদ্দুস রুশো বলেন, ‘রিটার্ন প্রোডাক্ট হয় এক শতাংশের মতো। এই জিনিসটা আমরা সেলারদেরকে জানিয়ে দিয়েছি। আমাদের কোয়ালিটিতে এখন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। এটা খুবই কম। ঈদেও আমরা এটা মেইনটেইন করার চেষ্টা করছি। বলেছে একটা কাপড় দেবে, সেটা না দিয়ে হয়ত অন্য কিছু দিলো। এ ক্ষেত্রে তার শপই আমরা বন্ধ করে দেই।’

ঈদ ঘিরে কেবল ছাড়ই নয়, পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিতের দিকেও এবার নজর বাড়ানোর কথাও বলছেন ব্যবসায়ীরা। অনলাইন মার্কেট প্লেস কিউকমের প্রধান নির্বাহী রিপন মিয়া বলেন, ‘আপনার মার্কেটে গিয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না। বা রাস্তায় সময় নষ্ট করতে হবে না। যতগুলো ব্র্যান্ড আছে, পাঞ্জাবি বলেন বা কসমেটিক বলেন ঈদ উৎসবে যে কেনাকাটা আছে এটা কিন্তু স্বল্প মূল্যে এবং সব ধরনের কাস্টমারদের জন্য। সব ধরনের প্রোডাক্টই আমাদের এখানে পাওয়া যায়।’

অনলাইনে পণ্য অর্ডার করে অনেকেরই সঠিক পণ্য বুঝে না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এক্ষেত্রে বাড়তি ছাড়ের প্রলোভনে কেউ যেন প্রতারণা করতে না পারে সে জন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মিথ্যা অফার বা মিথ্যা বিজ্ঞাপনে আপনারা প্রলোভিত হবেন না। অনেকগুলো ফেইক প্রতিষ্ঠান যখন বিভিন্ন আইডি দিয়ে অনলাইনে অফার দেয়, তখন তাদেরকে কিন্তু আমরা ট্র্যাক করতে পারছি না। কিন্তু যেখানে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এবং যাদের ট্র্যাক করা যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমি বলব যে অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রেও গ্রাহককে সচেতন হতে হবে।’

অনলাইন কেনাকাটায় গ্রাহক সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন খাত সংশ্লিষ্টরাও। যেসব অনলাইন প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের আস্থা হারাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

(ঢাকাটাইমস/০৫এপ্রিল/এলএম/এসআইএস/কেএম)