ঈদ ঘিরে সদরঘাটে নেই সেই চিরচেনা ভিড়

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৫১ | আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:২৬

আহম্মেদ মুন্নী, ঢাকা টাইমস

ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কর্মব্যস্ত ঢাকা শহর ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে রাজধানীবাসী। সড়ক, রেল আকাশপথ ও জলপথে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে ছুটছেন তারা। তবে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সেখানেই নেই আগের সেই চিরচেনা ভিড়।

রবিবার সকালে সরেজমিনে ঢাকার একমাত্র লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঈদ ঘিরে সেখানে নেই সেই চিরচেনা রূপ। নেই সেই বাড়ি ফেরার তাড়া, নেই হকারের হাঁকডাক, নেই যাত্রী টানাটানির প্রতিযোগিতা। একটা সময় এই সময়টায় সাধারণত ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে থাকতো মানুষের উপচে পড়া ভিড়, থাকতো যাত্রীদের ভীষণ চাপ—আজ সেরকম  কিছুই দেখা যায়নি।

অন্য সব বছরের তুলনায় এ বছর যাত্রী অনেক কম বলে হতাশা প্রকাশ করে এমভি ফারহান-৭ লঞ্চের ম্যানেজার মো. হৃদয় ঢাকা টাইমসকে বলেন, যাত্রীরা বাসরুট হয়ে যাওয়ায় বরিশালের লঞ্চ যাত্রীশূন্য। এখন প্রায় ৩০ শতাংশ যাত্রী রয়েছে, আর বাকি ৭০ শতাংশ যাত্রী বিকল্প পথে গ্রামের বাড়ি পাড়ি দিয়েছেন।

যাত্রীরা কেন লঞ্চ ছেড়ে সড়ক রুট বেশি ব্যবহার করছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাসে বরিশাল যেতে সময় কম লাগে, আর লঞ্চে লাগে বেশি সময়। আবার সদরঘাট লঞ্চঘাটে আসতে গুলিস্তান ও পুরান ঢাকায় সৃষ্টি হয় যানজট। এতে যাতায়াতে অনেক সময়ও  লেগে যায়। এছাড়া যেখানে সেখানে বাসের কাউন্টার—এটাও একটা কারণ। 

তিনি আরও বলেন, ‘সিঙ্গেল কেবিন সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১৮০০ টাকা ও ডাবল কেবিন ৩৬০০ টাকা। সেখানে আমরা সিঙ্গেল কেবিন রাখছি ১২০০ টাকা ও ডাবল কেবিন ২২০০ টাকা। আমরা ভাড়া অনেক কম নিচ্ছি, তবু যাত্রী পাচ্ছি না। তবে এখনও গার্মেন্টস ও সরকারি ছুটি ঘোষণা হয়নি, তাদের ছুটি হলে আশা করি কিছুটা টিকিট বিক্রয় ও যাত্রী বাড়বে। 

ভোলাগামী লঞ্চের যাত্রী রিমা এলাহী (৩৩) ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের সঙ্গে আমার বৃদ্ধ দাদা-দাদি যাচ্ছে, তারা তো বাস জার্নি সহ্য করতে পারবে না তাই আমরা লঞ্চে যাচ্ছি। না হলে গাড়িতে যেতাম। তবে, এখন সদরঘাটে আগের মতো যাত্রীদের চাপ নেই।

বরিশালগামী তানজিল আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়িতে যাচ্ছি। বাচ্চাদের নিয়ে গাড়িতে ভ্রমণ একটু কষ্টকর। তাই, লঞ্চে যাচ্ছি। তবে, আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখন বাসে করে ঢাকায় যাতায়াত করে। পদ্মা সেতু হওয়ায় আমরা তিন ঘণ্টায় বাড়িতে যেতে পারি।

সদরঘাটে লঞ্চ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, আমাদের আগের মতো এখন আর যাত্রী নেই। দক্ষিণাঞ্চলের সবাই এখন পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে করে বাড়িতে যাচ্ছে। কিছু লোক লঞ্চে যাচ্ছে। এভাবে চললে আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। যাত্রী নেই বললেই চলে । বিশ্বাস না হলে লঞ্চের ভেতরে ঘুরে দেখেন, যান দেখেন গিয়া বলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি।

বোরহান-৭ লঞ্চের ব্যবস্থাপক মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, দুদিন পর যে একটা ঈদ তার কোনো লক্ষণ নাই। এই সময় লঞ্চ থাকতো যাত্রীতে টইটম্বুর, হুঁইসেল বাজলে জুতা ব্যাগ রেখে যাত্রী টার্মিনালে চলে আসতো, মানুষের চিৎকারে লঞ্চের হুঁইসেল শোনা যেত না- আর এখন লঞ্চের ভেতরে যাত্রী নেই। সারা বছর যাত্রী যাই থাকুক ঈদে আমরা আশায় থাকি দুটো পয়সা বেশি রুজি হবে, কিন্তু এবার সে পথও প্রায় বন্ধ।

এদিকে, ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের   যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসন ঢাকা টাইমসকে বলেন, এবার ঈদে নৌপথে যাবে আনুমানিক ২২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। ১০ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হবে। তবে ঘরমুখী মানুষের স্রোত কার্যত শুরু হবে ৮ এপ্রিল থেকে। ওইদিন থেকে ঈদ স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস চলাচল করবে। ঈদের আগের দুদিনসহ সাত দিনে সাড়ে ২২ লাখ মানুষ নৌপথে ঢাকা ছাড়ছে। এই হিসেবে প্রতিদিন ৩ লাখের বেশি যাত্রী সদরঘাট টার্মিনাল হয়ে গন্তব্যে যাবে বলে আশা করা যায়।

তিনি বলেন, নৌযানের কোনো স্বল্পতা নেই, আজ (রবিবার) ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে গেছে সারাদিনে ৫৮টি, রাতে আরও বেশ কিছু লঞ্চ ছাড়বে। আমরা গড়ে প্রতিদিন ১০০টি লঞ্চ প্লাটুনে রেডি রাখছি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে নৌপথ মোট ৪১টি। তবে তীব্র নাব্যসংকট ও যাত্রীস্বল্পতার কারণে বড় আয়তনের ও বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল না করায় অন্তত ১০টি নৌপথ ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। বাকি ৩১টি নৌপথে ঈদ উপলক্ষে আসা-যাওয়া মিলিয়ে ছোটবড় ১৭৫টি লঞ্চ চলাচল করবে।

(ঢাকাটাইমস/৭এপ্রিল/এএম/এআর)