কেরানীগঞ্জে টিটেনাস দিয়ে তৈরি হতো বিদেশি ব্রান্ডের নকল ভ্যাকসিন

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৪৪ | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৪৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

হেপাবিগ ভ্যাকসিন নামের ইনজেকশনটি ব্যবহৃত হতো হেপাটাইটিস বি রোগ প্রতিরোধে। দেশের বাজারে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা দামের কোরিয়ান এই ভ্যাকসিনটি কেরানীগঞ্জে তৈরি করত একটি চক্র। গর্ভবতী মায়েদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই ওষুধটি মাত্র ১০ টাকার টিটেনাস দিয়ে নকল সিল বসিয়ে বাজারে বিক্রি করত তারা।

শুধু হেপাবিগ নয়, ভিটামিন ডি৩ এ্যাম্পুল ইনজেকশন, রেসোগাম পি, ক্লোপিকজল ডিপোর্ট, ফ্লুয়ানজল ডিপোর্ট, হেপাবিগ হেপাটাইটিস বিসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি নকল এন্টিবায়োটিক ওষুধ তৈরি করত তারা। আর এসব ওষুধ ব্যবহারে সাধারণ মানুষের জীবনহানির মতো ঘটনা ঘটছে।

রাজধানীর কোতোয়ালী ও কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে নকল ভ্যাকসিন ও ওষুধ তৈরির অভিযোগে চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। 

রবিবার ঢাকায় এক বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় কয়েক লাখ নকল ওষুধ, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১ কোটি টাকারও বেশি। 

অভিযুক্তরা হলেন- আনোয়ার হোসেন, অসিম ঘোষ, মশিউর রহমান ওরফে মিঠু ও নূরনবী। 

সোমবার দুপুরে মিন্টু রোডে ডিবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন উর রশিদ। 

তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে ডিবি পুলিশের অভিযানে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের নকল ওষুধসহ একটি বড় চক্রকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এরই মধ্যে আমাদের কাছে খবর আসে, তাদেরই সহযোগী মিটফোর্ড থেকে ওষুধের কাঁচামাল সংগ্রহ করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ইনজেকশন তৈরি করে বাজার করে আসছিল।” 

তিনি বলেন, “চক্রটি টিটেনাস দিয়ে হেপাটাইটিস বি ভেকসিন বানাতো, ভিটামিন বি৩ বানাচ্ছিল এক্টুপিস সকেট দিয়ে এবং ক্লোপিকজল বানায় ইন্ডিয়ান ড্রাইকিজাম এ্যাম্পুল দিয়ে। তার মানে, এই ওষুধগুলো নকল করে অধিক লাভে বিক্রি করছে। টিটেনাস ১০ টাকা দিয়ে কিনে হেপাবিগ বানিয়ে ৪৬০০ চাকায়, ক্লোপিকজল ৫টা দিয়ে বানিয়ে ডেনমার্কের ওষুধ বলে বিক্রি করছে ৪৫০ টাকা। গর্ভবতী মহিলাদের প্রয়োগ করা হয় রোসোগাম পি। এটা জেসন গ্রুপের একট্রোপিন ১০ টাকা দিয়ে কিনে রোসোগাম বানিয়ে সাড়ে চার হাজার টাকা বিক্রি করতো। এভাবে বিভিন্ন ওষুধ নকল করে বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল চক্রটি।”

ডিবি প্রধান বলেন, “এসব নকল ওষুধের কার্যকারিতা না থাকায় সাধারণ মানুষ কোনো সেবা পেত না। বরং নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতো। তারা এমনভাবে এসব ওষুধ হুবহু প্যাকেজ করতো, সাধারণ মানুষের চেনার উপায় নেই, কোনটা আসল আর কোনটা নকল।”

যেসব ওষুধ নকল করা হতো: হেপাবিগ, ভিটামিন ডি৩ এ্যাম্পুল ইনজেকশন, রোসোগামা পি, ফুয়ানজল ডিপোর্ট, ক্লুপিক্সল ডিপোর্ট, হেপাবিগ হেপাটাইটিস বি এবং ডিপথেরিয়া ভ্যাকসিন। আর এসব ওষুধ রাজধানীর মিডফোর্ট মেডিকেলের পাশের ওষুধের বাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হতো।

(ঢাকাটাইমস/০৮এপ্রিল/এসএস/এফএ)