যে কারণে মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রী সংকট

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:২৭

হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমস

এবার ঈদে মহাখালী বাস টার্মিনালে নেই আগের মতো উপচেপড়া ভিড়। নেই টিকিট বিক্রেতাদের হাঁকডাক। অলস সময় কাটাচ্ছেন কাউন্টারের লোকজন। যাত্রী সংকটে অনেক পরিবহনের বাস বিলম্বেও ছাড়ছে।

সরেজমিনে সোমবার বেলা ১১টা থেকে কয়েক ঘণ্টা মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

টার্মিনালের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় ভুতুরে পরিবেশ। যাত্রীদের বসার স্থানে বেশকিছু যাত্রী বসে থাকতে দেখা গেলেও কাউন্টারগুলোতে যাত্রী না থাকায় অনেকেই অলস সময় পার করছেন। আবার অনেকেই যাত্রী সংকটের কারণে টিকিট কাউন্টার বন্ধ করে রেখেছেন।

মহাখালী বাস টার্মিনালের প্রবেশমুখেই রয়েছে এনা পরিবহনের কাউন্টার। সেখানে কয়েকজন লোককে দেখা গেছে টিকিট কাটতে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. মামুন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ঈদের জন্য গ্রামে (সিলেট) যাচ্ছি। আমার জীবনে এই ঈদের সময় মহাখালী টার্মিনাল এমন ফাঁকা আর দেখি নাই। যাত্রী কম থাকায় বাস অনেক দেরিতে ছাড়ছে।

কিশোরগঞ্জগামী অনন্য ক্লাসিক পরিবহনের ম্যানেজার মো. আমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাগো মহাখালী টার্মিনালে যাত্রী সংখ্যা নাই কইলেই হয়। মানুষ এইবার লম্বা ছুটি পাইছে। তাই আগে থেইকাই অনেকে চইলা গেছে। সকাল থেইকা এহন পর্যন্ত (বেলা ১১টা ৪৫মি.) মাত্র ৫ জন যাত্রীর কাছে টিকিট বেচছি।’

টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরগামী কাউন্টার হাই চয়েজ এর ম্যানেজার হারুনর রশিদ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যাত্রী নাই তাই বইসা আছি। মানুষ লম্বা ছুটি পাইছে তাই ধীরে ধীরে চলে গেছে। ঈদের আগে এমন অবস্থা আমার ৫০ বছর বয়সেও আর দেহি নাই।’

পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অনেকেই বলছেন, একই মাসে শবই কদর, ঈদুল ফিতর এবং পহেলা বৈশাখকে ঘিরে এবার লম্বা ছুটি মেলায় অনেকেই আগেভাগে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন। ফলে ঈদের আগ মুহূর্তে এসে যাত্রীর তেমন চাপ নেই।   

তবে টার্মিনালে যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ার ভিন্ন কারণও জানা গেছে। এবার ঈদের কয়েক মাস আগে থেকেই বিভিন্ন বাস কোম্পানি সায়দাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালের বাইরেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে কাউন্টার বসিয়েছে। এতে করে যাত্রীদের একাংশ তাদের বাড়ির কাছে এই সুবিধা পাওয়ায় কষ্ট করে বাস টার্মিনালে যাচ্ছেন না। তাই ঈদের দুদিন আগেও ফাঁকা টার্মিনাল।

তবে টার্মিনালের বাইরে থাকা কাউন্টারগুলোতে ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত ভাড়া রাখার অভিযোগ উঠেছে। টার্মিনালগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি করলেও টার্মিনালের বাইরে থাকা কাউন্টারগুলোতে কোনো ভূমিকা নেই বলে অভিযোগ।

মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক ঢাকা টাইমসকে বলেন, মহাখালী টার্মিনালে ঈদের যাত্রী অধিকাংশ গার্মেন্টস শ্রমিক হয়ে থাকে। আগামীকাল থেকে ঢাকার সব গার্মেন্টস ছুটি থাকবে। এরপরই যাত্রী বাড়বে বলে আশা তার।

তিনি আরও বলেন, এবার ঈদে তো মানুষ লম্বা ছুটি পেলো। অনেকেই ধীরে ধীরে ঢাকা ছেড়েছে। তাই শেষ মুহূর্তে টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ হচ্ছে না।

আব্দুল মালেক বলেন, সিলেট ও ময়মনসিংহ থেকে বেশি যাত্রী যায় এই টার্মিনাল দিয়ে। যাতায়াতের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত গণপরিবহন রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে গাড়িগুলো টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। আমাদের এখানে অতিরিক্ত কোনো ভাড়াও নাই। আর কোনো কালোবাজারির সিস্টেমও নাই। যাত্রী আসবে টিকিট কাটবে চলে যাবে।

প্রতিদিন এই টার্মিনাল থেকে ১ হাজার বাস ঢাকা ছেড়ে যায় এবং টার্মিনালে ১ লাখ যাত্রীর ধারণক্ষমতা আছে বলেও জানান তিনি।

টার্মিনালে নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাবের ক্যাম্পও রয়েছে। ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা র‍্যাব-২ এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) খালেদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, মহাখালী টার্মিনালে মানুষ নির্বিঘ্নে যাত্রীসেবা নিচ্ছে। সকাল থেকে যাত্রী সংখ্যা কম। তবে কারও কোনো অভিযোগ নেই। আমরা যাত্রী ও টার্মিনালে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছি।  
ঢাকাটাইমস/০৮এপ্রিল/এমএইচ/ইএস