জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষণের ঘটনায় তদন্ত বেশ এগিয়ে নিয়েছে পুলিশ। অভিযুক্তদের ডিএনএ নমুনা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ বাকিদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দেবেন তদন্ত কর্মকর্তা। বর্তমানে আলোচিত এই ঘটনার মামলায় অভিযুক্ত ছয়জনই কারাগারে আছেন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে নয়টার দিকে জাবি ক্যাম্পাসে এক বহিরাগত দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়। যাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানসহ ছয়জন। ঘটনার পরদিন আশুলিয়া থানায় মামলা হলে পুলিশি অভিযানে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান সাগর, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামান। পরে ৭ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বহিরাগত মামুনুর রশীদ মামুন ও জাবি শিক্ষার্থী মো. মুরাদকে গ্রেপ্তার করে। র‍্যাব যাকে প্রধান পরিকল্পনাকারী দাবি করে, সেই মামুনুর রশিদ মামুন এবং তার সহযোগী মো. মুরাদ এরইমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আলোচিত এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (গোয়েন্দা) মিজানুর রহমান মঙ্গলবার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। আর তদন্তে বেশ অগ্রগতি আছে। অভিযুক্তদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে, সেটার অপেক্ষায় (নমুনা রিপোর্ট) আছি। সিআইডি থেকে রিপোর্ট এলেই মামলা শেষ করতে পারব।’

ছয়জন ছাড়া আর কারও সম্পর্কৃততা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি এখনো তদন্ত করা হচ্ছে। এবিষয়ে বলতে আরও সময় লাগবে।’
অন্য প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, আদালতের আদেশে তাদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ছয়জন এখনও কারাগারে আছেন। এরমধ্যে দুইজন (মামুন ও মুরাদ) নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।’
যা ঘটেছিল সেদিন:
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার ওই দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন মামুন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় প্রথমে ওই নারীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডেকে নেয়া হয়। পরে তিনি ক্যাম্পাসে গেলে তাকে মীর মশাররফ হোসেন হলের 'এ' ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন অভিযুক্তরা।
এরপর অভিযুক্ত মামুন সেই ব্যক্তির স্ত্রীকে দিয়ে নিজের (মামুন) রেখে আসা জিনিসপত্র আনাতে বলেন। মামুনের কথার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী নারী তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। মামুন তখন জিনিসপত্র নিয়ে হলের ভেতর একটি কক্ষে রেখে আসেন। এরপর ওই নারীর স্বামী অন্যদিক থেকে আসবেন বলে তাকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যান অভিযুক্তরা। সেখানেই তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন ওই নারী।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামুন ভাই আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান। এছাড়া তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবেন বলেও জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর মামুন আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসে। পরে আমার স্বামী অন্যদিকে থেকে আসবে বলে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে মোস্তাফিজ ভাইও ছিলো। তখন তারা আমাকে ধর্ষণ করে।’ ভুক্তভোগী নারীর এই অভিযোগের সত্যতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজেও ধরা পড়ে। এই ঘটনায় ফুঁসে ওঠে পুরো জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা দোষীদের বিচার দাবিতে সোচ্চার হন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট সভায় বসে। এসময় মূল আসামি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও তার সাহায্যকারী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুরাদ হোসেনের সনদ স্থায়ীভাবে বাতিল এবং বাকিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া ছাত্রলীগ থেকেও মোস্তাফিজুর রহমানকে বহিষ্কার করে সংগঠনটি।
(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/এসএস/ইএস)