গারো পাহাড়ে ঝর্ণায় পানি নেই, কৃত্রিম লেকে গঙ্গাস্নান

প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৭

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী বা গঙ্গাস্নান মূলত বিভিন্ন নদীর মোহনায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের গজনী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী কোচ, হাজং ও ক্ষত্রিয় জনগোষ্ঠীর মানুষ গঙ্গাস্নান করে আসছে।

সেই রীতি অনুযায়ী প্রতি বছরের মতো মঙ্গলবার দিনব্যাপী পূণ্য তিথিতে তারা সেই গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেন।

জানা যায়, বর্তমানে পাহাড়ি এলাকার সেই ঝর্ণায় পানি না থাকায় জেলা প্রশাসনের তৈরি করা কৃত্রিম লেকে গঙ্গাস্নানের কাজ সারেন পূণ্যর্থীরা।

আদিবাসী কোচ, হাজং ও ক্ষত্রিয় জনগোষ্ঠীর মানুষরা জানাযন, ভারতের আসামের ব্রহ্মপুত্র নদীর একটি শাখা ধুবড়ি এলাকা থেকে বের হয়ে মেঘালয় রাজ্য হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সেই নদীর একটি শাখা ঝর্ণা এই গজনী অবকাশ হয়ে বয়ে গেছে। সে কারণে শত বছর আগে থেকেই স্থানীয় আদিবাসী সনাতনী ধর্মের মানুষ এখানে গঙ্গা পূজা ও স্নান করতেন।

তারা আরও জানান, গঙ্গা পূজার জন্য অবকাশের একটি পাহাড়ের টিলার উপর অস্থায়ীভাবে মন্দির নির্মাণ করতেন।‌ পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে স্থানীয় কিছু উদ্যোক্তা একটি স্থায়ী মন্দির নির্মাণ করেন। যদিও সেটি এখনো সেই জরাজীর্ণভাবেই পড়ে আছে। শুধু স্নানের আগে এটিকে পরিষ্কার করা হয়।

এদিকে স্নান করার জন্য ঝর্ণাটাও শুকিয়ে গেছে। তাই গঙ্গা মন্দিরের পাশেই জেলা প্রশাসকের নির্মিত অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রে লেকের পানিতেই পূণ্যার্থীরা স্নানের কাজ সারেন। এরপর পাহাড়ের চূড়ায় সেই গঙ্গা মন্দিরে পূজার কাজ শেষ করে মন্দির কর্তৃপক্ষের আয়োজনে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

আদিবাসী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গা পূজা ও গঙ্গাস্নানের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক এবং এখানে নেই কোনো সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা। নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক, নেই কোনো গণশৌচাগার ও বিশ্রামাগার।

শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী এবং জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি এলাকার আদিবাসী সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখানে প্রতি বছর গঙ্গাস্নান ও পূজা করতে আসেন। তাদের সুবিধার্থে মন্দিরের উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

সম্প্রতি শেরপুর শহর থেকেও অনেক বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা এ গঙ্গাস্নানে আসেন পূণ্য লাভের আশায়।

স্থানীয় মন্দির কমিটির সভাপতি নীল কান্ত হাজং জানান, শত বছর আগে থেকেই এই পাহাড়ি জনপদে আদিবাসী কোচ, হাজংসহ ক্ষতিত্রজনগোষ্ঠির সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখানে স্নান ও পূজা করে আসছে। ১৯৯৮ সালে একটি ছাপরা ঘরে মন্দির প্রতিষ্ঠার পর ২০০৬ সালে তৎকালীন এমপি মাহমুদুল হক রুবেল এখানে মন্দিরে উন্নয়নে একটি ভিত্তি স্থাপন করলেও পরবর্তীতে ওই মন্দিরে কাজ আর অগ্রগতি হয়নি। তাই সরকারের এবং স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে এ মন্দিরটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া প্রয়োজন।

মন্দির কমিটির উপদেষ্টা প্রদীপ রায় চৌধুরী জানান, মন্দিরের পাশেই জেলা প্রশাসনের অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। তার পাশে রয়েছে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের খ্রিস্টান গির্জা এবং মুসলমানদের মসজিদ। তাই এই অবকাশ কেন্দ্রের আশপাশে মসজিদ, মন্দির ও গির্জাগুলো উন্নয়ন করা হলে শুধু ধর্মীয় কাজেই নয়, দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটকদের কাছেও সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/এজে)