মধ্যপ্রাচ্যে বৈরী আবহাওয়া: আকস্মিক বন্যার পেছনে আছে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতেরও ভূমিকা

প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:৪৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। ফলে ধুধু মরুভূমির বুকেও দেখা যাচ্ছে নজিরবিহীন বৃষ্টিপাত। এতে বন্যাসহ ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে শুরু করে দাম্মাম শহরে দেখা গেছে ভারী বৃষ্টিপাত। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরেই এসব এলাকায় চলছে বজ্রসহ বৃষ্টি।

 

আবহাওয়ার এই নাটকীয় পরিবর্তনের ফলে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল বা জিসিসিভুক্ত দেশগুলো (অর্থাৎ সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, ওমান, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত) নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে। সাম্প্রতিক এসব ঝড় বৃষ্টিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দেখা দিয়েছে বন্যা। গতকাল মঙ্গলবার ওমানের বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতি সর্বোচ্চ খারাপ থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল দেশটির জাতীয় দুর্যোগ সতর্কীকরণ কেন্দ্র। চলমান প্রতিকূল আবহাওয়ায় দেশটিতে প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ১৬ জনের। এদের মধ্যে বেশিরভাগ স্কুল শিক্ষার্থী। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ বুধবার পর্যন্ত সৌদিআরব, বাহরাইন, কুয়েতে এই পরিস্থিতি চলমান থাকবে।

 

নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ওয়াশিংটন ডিসির মিডলইস্ট ইনস্টিটিউটের পানি জলবায়ু বিষয়ক পরিচালক মোহাম্মদ মাহমুদ। তিনি আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের খুব সাধারণ কারণ উল্লেখ করেন। বলেন, উষ্ণ আবহাওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের জল বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে। এতে তা খুব দ্রুত বাষ্পে রূপান্তরিত হয়ে অধিক বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে।

 

মোহাম্মদ মাহমুদের কথার সঙ্গে মিল রয়েছে বাস্তব পরিস্থিতির। লোহিত সাগর সংলগ্ন সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে দেখা দিয়েছে ভারী বৃষ্টিপাত।

 

আকস্মিক এই বন্যা যে শুধু প্রাকৃতিক কারণে হচ্ছে তা বলা যাচ্ছে না। এতে রয়েছে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ভূমিকা। সাম্প্রতিক সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ওপর জোর দিয়েছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাদের আরও ৩০০ বৃষ্টিপাত ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

 

ক্লাউড সিডিং

ক্লাউড সিডিং হলো এমন এক কৌশল যেখানে ঘনীভবন প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করতে এবং বৃষ্টিপাত বাড়াতে মেঘে রাসায়নিক উদ্দীপক এজেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসদাতাদের বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বৃষ্টিপাতের ধরনের ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত মেঘ শনাক্ত করা হয়।

 

সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৯৮২ সালে প্রথমবারের মতো ক্লাউড সিডিং পরীক্ষা করে দেখে। ২০০০ দশকের গোড়ার দিকে উপসাগরীয় দেশটির কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কর্মসূচি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেরিক রিসার্চ (এনসিএআর), দক্ষিণ আফ্রিকার উইটওয়াটারস্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নাসার সঙ্গে সহযোগিতামূলক বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণার সাহায্যে আরও জোরদার করা হয়।

 

আমিরাতের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের (এনসিএম) পরিচালিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৃষ্টিপাত বর্ধন কর্মসূচির (ইউএইআরইপি) আওতায় এই কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়া হয়। এই কর্মসূচিতে জড়িত বিজ্ঞানীরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের বায়ুমণ্ডলের ভৌতিক ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য, বিশেষত অ্যারোসল এবং দূষণ কণার মেঘ গঠনে প্রভাব বিশ্লেষণে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মেঘের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে এবং শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বাড়াতে একটি কার্যকর এজেন্ট শনাক্ত করা।

 

একবার উপযুক্ত মেঘ শনাক্ত হয়ে গেলে হাইগ্রোস্কোপিক ফ্লেয়ার দিয়ে সজ্জিত বিশেষ উড়োজাহাজ আকাশে পাঠানো হয়। উড়োজাহাজের পাখায় লাগানো এই ফ্লেয়ারগুলোতে লবণজাতীয় উপাদান থাকে। নির্দিষ্ট মেঘে পৌঁছানোর পরে ফ্লেয়ারগুলো ছোড়া হয়, যা বীজ বা সিডিং এজেন্টকে মেঘে ছড়িয়ে দেয়।

 

লবণের কণাগুলো নিউক্লেই হিসেবে কাজ করে, যার আশপাশে পানির কণা ঘনীভূত হতে থাকে। অবশেষে কণাগুলো বৃষ্টিপাত হিসেবে পড়ার জন্য যথেষ্ট ভারী হয়ে ওঠে।

 

প্রক্রিয়াটির বর্ণনায় ইউএইআরইপি বলে, ‘এনসিএম আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য ৮৬টি স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন (এডাব্লুওএস) এর একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। এর মধ্যে ছয়টি আবহাওয়া রাডার পুরো সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করে এবং একটি ওপরের বায়ু স্টেশন পর্যবেক্ষণ করে। সেন্টারটি জলবায়ু ডাটাবেসও তৈরি করেছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে উচ্চ নির্ভুল নিউমেরিকাল ওয়েদার প্রেডিকশনস এবং সিমুলেশন সফটওয়্যার বিকাশে সহায়তা করেছে।

 

এটি আরও বলে, ‘বর্তমানে, এনসিএম আল আইন বিমানবন্দর থেকে চারটি বিচক্রাফ্ট কিং এয়ার সি ৯০ বিমান পরিচালনা করে। এতে ক্লাউড সিডিং এবং বায়ুমণ্ডলীয় গবেষণার জন্য সর্বশেষ প্রযুক্তি এবং ডিভাইস নিযুক্ত করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/কেএম)