ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন দেওয়া সন্দেহে বিক্ষুব্ধদের হামলায় দুই শ্রমিক নিহত

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪০ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ২১:১১

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস

ফরিদপুরের মধুখালীতে মন্দিরে আগুন দেওয়ার সন্দেহে বিক্ষুব্ধদের হামলায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর হয়েছে। এ ঘটনায় আহত আরও পাঁচ শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরে কয়েক ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ রাখা হতাহতদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের বারোয়ারি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

হামলায় নিহত নির্মাণ শ্রমিকরা হলেন- মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আশাদুল (১৫)।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লী গ্রামের ওই বারোয়ারি মন্দিরের কালী প্রতিমায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা মন্দির থেকে ২০ গজ দূরের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত সাত শ্রমিককে সন্দেহ করে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে অবরুদ্ধ করে গণধোলাই দেয়।

খবর পেয়ে মধুখালী থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধরা তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ফরিদপুর জেলা সদর ও রাজবাড়ী জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কয়েক ঘণ্টা পর অবরুদ্ধদের উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, আহত অবস্থায় উদ্ধার করা সাত শ্রমিকের মধ্যে চারজন অচেতন ছিল। পরে তাদের উদ্ধার করে দুজনকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

জেলা প্রশাসক আরও জানান,  ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. মোরশেদ আলম জানান, শত শত মানুষ এই হামলায় অংশ নেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের ছোঁড়া ইট পাটকেলের আঘাতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, এই ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। 

আহত শ্রমিক লিটন মোল্লা জানান, এলাকাবাসীর সঙ্গে আমরাও আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিই। কিন্তু বিক্ষুব্ধরা শ্রমিকদের সন্দেহ করে তাদেরকে গণপিটুনি দেয়। তারা লাঠি, রড ও ইট দিয়ে হামলা চালিয়েছে বলে জানান তিনি। 

এদিকে ডুমাইন এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশের পাশাপাশি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তিন প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন বলেন, ‘মাগরিবের নামাজ পড়ে আমি মাঠে বসেছিলাম। কিছু সময় পরে ১নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অজিত বাবু আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, আপনি দ্রুত আসেন, এখানে মন্দিরে আগুন দিছে। কে আগুন দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  লেবাররা আগুন দিছে। তাদেরকে ধরে রাখছি।’

আসাদুজ্জামান তপন বলেন, ‘আমি তাৎক্ষণিকভাবে এখানে আসলাম। এসে দেখি হাজার হাজার জনতা। আমি জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু দেখলাম পরিস্থিতি বেগতিক। এখানে প্রশাসন ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব না। আমি সরে গিয়ে প্রশাসনকে ফোন দিই, ইউএনওকে ফোন দেই। পরে প্রশাসন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’

(ঢাকা টাইমস/১৯এপ্রিল/প্রতিনিধি/এসএ)