যশোরে এমপির মনোনীত প্রার্থী ‘অস্ত্র ব্যবসায়ী’ সোহরাব! আ.লীগ নেতাকর্মীদের ক্ষোভ

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৫৬ | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ২১:০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে যশোরের শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য কর্তৃক একজন চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী করায় মূলত এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

তারা বলছেন, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা পরিষদে প্রার্থী বাছাই ও তাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার প্রতি নিষেধ করেছেন, সেখানে শার্শা আসনের এমপি কীভাবে জনবিচ্ছিন্ন, বিভিন্ন মামলার আসামিকে প্রার্থী ঘোষণা করেন!

 

অবশ্য, যশোর-১ (শার্শা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন তার বিরুদ্ধে আনীত এ সংক্রান্ত সব অভিযোগ ভুল বলে আখ্যা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, একটি মহল তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।

 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২১ মে দেশব্যাপী দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই তালিকায় যশোরের তিনটি উপজেলা পরিষদ- শার্শা, চৌগাছা ও ঝিকরগাছা রয়েছে। এই তিনটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

শার্শা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে কাউকেই চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। উপজেলা আওয়ামী লীগ কোনো সভাও করেনি এই বিষয়ে। অভিযোগ আছে, তার আগেই স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন সাবেক ছাত্রদল নেতা সোহরাব হোসেনকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সোহরাব হোসেন মাদক ও অস্ত্র মামলার চিহ্নিত আসামি।

জানতে চাইলে উপজেলা যুবলীগের ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহেদ জানান, সোহরাবকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী করা আমাদের দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এটি এমপির নিজের পছন্দ। মূলত লুটপাটের ভাগাভাগি করতেই এমনটি করা হয়েছে।

 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইব্রাহিম খলিল ঢাকা টাইমসকে বলেন, টাকা-পয়সা খাইয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাকে (সোহরাব) প্রার্থী করা আমাদের দরীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এটি এমপি সাহেবের মনগড়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলেছেন-কোনো এমপি বা মন্ত্রী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, সেখানে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে অশুভ লোকগুলোকে আজ নির্বাচনের জন্যে মনোনীত করা হচ্ছে। আর এটি এমপি তার নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতেই করছেন।

সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে ১৯৮১ সালে নাভারণ ইউনিয়নে দলীয় সম্মেলনে মতিয়া চৌধুরীর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, গেট পুড়িয়ে দেওয়া, স্টেজ ভাঙা, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়, র‌্যাবের হাতে অস্ত্র-গুলিসহ আটক (২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে), সোনা চোরাচালানসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।

 

এসব বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, সোহরাবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি জেলখাটা আসামি। এখানে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। দলীয় কোনো সিদ্ধান্তে তাকে প্রার্থী করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগকারীদের নাম জানতে চাই না। কিন্তু যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো শতভাগ ভুল। শার্শার ১১টি ইউনিয়নের নেতারা বসেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষয়টি আমাকে জানান। তিনি বলেন, আমাকে নিয়ে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।

সোহরাবের বিরুদ্ধে চোরাচালান ইত্যাদির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, যে কেউ প্রার্থী হলে তার বিরোধীপক্ষ এমন অভিযোগ আনে, এটা তারই নমুনা।

ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/ইএস