কঠিন দুঃসময় চলছে: মির্জা ফখরুল
প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২৪, ২১:১৪ | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৪৩
দেশে ‘কঠিন দুঃসময় চলছে’ মন্তব্য করে এই অবস্থার পরিবর্তনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার বিকালে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নাগরিক স্মরণ সভায় দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আজকে একটা দুঃসময়, কঠিন সময় আমরা অতিক্রম করছি। রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহভাবে আমাদেরকে আক্রমণ করেছে। এখানে বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ হয়ে গেছে, এখানে অর্থনীতিকে পুরোপুরিভাবে নিজেদের মতো করে তারা সেখানে লুটপাট চালাচ্ছে। আজকে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে, নির্বাচনি ব্যবস্থাকে একেবারে উপড়ে ফেলা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিছু নেই এখন, অবশিষ্ট নেই। ঐক্যের কথা আমরা বলি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা আমরা বলি সেই চেতনার লেশমাত্র অবশিষ্ট নেই এখন। যার জন্য জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেবরা লড়াই করছিলেন। সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যদি আবার আমাদের ফিরিয়ে আনতে হয়, বাংলাদেশকে যদি সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমরা পরিণত করতে চাই তাহলে আমাদেরকে এখন অবশ্যই সবাইকে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। নতুনভাবে আবার বলীয়ান হয়ে জাফরুল্লাহ ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন আমরা এই প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করি, কে কি বললো সেটা ভাবার দরকার নেই, আমাদের মধ্যে যে আশা, যে আকাঙ্খা আছে আমরা যারা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছি, আমরা যারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছি, যারা গুম হয়েছে তাদের সকলকে সেই সম্মানটুকু দেওয়ার জন্যে আমাদের আজকে একটা মাত্র দায়িত্ব সেটা হচ্ছে… আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
‘আজকে এই ভয়াবহ দুঃশাসন যারা আমাদের সমস্ত ভালো অর্জনগুলোকে কেড়ে নিয়েছে, আমাদেরকে প্রতিমুহূর্তে পঙ্গু করে ফেলেছে। আমাদেরকে পুরোপুরি একটা দাসে পরিণত করছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’
মির্জা ফখরুল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এই দুঃশাসনের অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমরা হাত-পা ছুড়ছি। আমরা যারা রাজনীতি করি, রাজনৈতিক কর্মী আছি তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। আমি নিজেই নির্বিচারে নির্যাতিত হচ্ছি, অনেকে তাদের জীবন দিচ্ছেন…প্রাণ দিচ্ছেন। তারপরেও এই দানবকে সরানো যাচ্ছে না, এটাই বাস্তবতা।’
‘এই কিছুক্ষণ আগে আলাপ হচ্ছিল… একজন কৌশলের কথা বলেছেন। আসলে এখানে প্রয়োজন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। সব নাগরিক যারা দেশকে ভালোবাসেন, সব রাজনৈতিক দল যারা দেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করতে চান তাদের এখন সবাইকে এক হয়ে সোচ্চার কন্ঠে শুধু রাজপথে বেরিয়ে নয়, সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঝাঁকি দিতে হবে। তাহলেই হয়তবা ডা. জাফরুল্লাহর যে স্বপ্ন সেই স্বপ্নকে আমরা কিছুটা বাস্তবায়িত করতে পারব।
সরকারের অপশাসনের চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা ভয়াবহ শাসনের মধ্যে পড়েছি। অবলীলায় এখানে হত্যা করা হয়, খুন করা হয়…এই যে মেয়ে সানজিদা ইসলাম তার ভাইকে গুম করেছে প্রায় ১২ বছর পার হয়ে গেছে…তার ভাইসহ ৭/৮ জন, আমাদের সেই ছোট্ট মেয়েটা বাবা ১২/১৩ বছর হলো এখন পর্যন্ত তারা ফিরে আসে না।
গুম হওয়ারা লুকিয়ে আছে বা পালিয়ে গেছে সরকারের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য দেওয়া জানিয়ে তিনি বলেন, যখন এই মেয়ে সানজিদা এই কথা শুনে তখন তার মনে অবস্থা কি দাঁড়ায়… রাষ্ট্রের ওপর তার যে আস্থা সেটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
ডা. জাফরুল্লাহ সারাটা জীবন দেশের জন্য যুদ্ধ করে গেছেন উল্লেখ করে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
শনিবার বিকালে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই নাগরিক স্মরণ সভার আয়োজন করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ সভা উদযাপন কমিটি।
গত বছরের ১১ এপ্রিল ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ডা. জাফরুল্লাহ’র জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম জিএস ডা. এমএ মবিনকে নিয়ে আগরতলার বিশ্রামগঞ্জের মেলাঘর এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল- ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোগিতায় তিনি সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে জনগণকে কম মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কাজ করেন।
গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জুলহাস নাইম বাবুর সঞ্চালনায় নাগরিক সমাজের মধ্যে ব্র্যাকের হোসেন জিল্লুর রহমান, সুজনের বদিউল আলম মজুমদার, ব্রতীর শারমিন মুরশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, এফবিবিআইয়ের আবদুল হক, মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বেলা’র সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ‘মায়ের ডাক’ এর সানজিদা ইসলাম বক্তব্য দেন।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের নূরুল হক নূর, মিয়া মশিউজ্জামান এবং প্রয়াত জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মেয়ে বৃষ্টি চৌধুরী এই স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন।
প্রয়াত জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ‘আজীবন মুক্তিযোদ্ধা’ এবং ‘অকুতভয় দেশপ্রেমিক’ অভিহিত করে দেশের মানুষের জন্য তার বর্ণাঢ্য কর্মকাণ্ডের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বিভিন্ন পেশার নাগরিকরা।
এই নাগরিক স্মরণ সভায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সহধর্মিণী শিরিন হক ও ছেলে বারিশ চৌধুরীসহ আত্বীয়-স্বজনরা এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/জেবি/ইএস