মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যানের প্রতিশ্রুতি নেতানিয়াহুর
প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১১ | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৯
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর যেকোনো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে দায়িত্বরত ইসরায়েল সেনাবাহিনীর নেটজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়নের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা করছে এমন খবরের পর তিনি এই অবস্থান জানান। খবর বিবিসির।
রবিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করব।’
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাক্সিওস নিউজ সাইট জানায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর নেটজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ইউনিটগুলোতে মার্কিন সামরিক সহায়তা হ্রাস করা হতে পারে এমন প্রতিবেদন সম্পর্কে গত সপ্তাহে জিজ্ঞাসা করা হলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছিলেন: ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি; আপনারা সামনের দিনগুলোতে সেসব সিদ্ধান্ত দেখতে পাবেন বলে আশা করতে পারি।’
অবশ্য ইসরায়েলের প্রধান মিত্র ওয়াশিংটন এর আগে কখনোই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর বা আইডিএফের কোনো ইউনিটের সহায়তা স্থগিত করেনি।
অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, নেটজাহ ইয়েহুদা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই কাজ করছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তারা বলেছে, ‘ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আইডিএফ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। আইডিএফ কাজ করছে এবং আইন অনুযায়ী কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা তদন্ত করতে কাজ করে যাবে।’
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট নেতজাহ ইয়েহুদার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও ঘনিষ্ঠভাবে দেখছে।
গ্যালান্টের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘একটি সম্পূর্ণ ইউনিটের সমালোচনা করার যেকোনো প্রচেষ্টা আইডিএফের কর্মের ওপর একটি ভারী ছায়া ফেলবে, যা অংশীদার এবং বন্ধুদের জন্য সঠিক পথ নয়’।
প্রসঙ্গত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে দায়িত্বরত ইসরায়েল সেনাবাহিনীর নেটজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়নের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খবর দেয় দেশটির গণমাধ্যম দৈনিক হারেৎজ।
দৈনিক হারেৎজ জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত আইডিএফের নেটজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ, যা প্রথমবারের মতো মার্কিন সরকার আইডিএফ ইউনিটকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।
হারেৎজ জানায়, মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলের পুলিশ ও অন্যান্য সামরিক ইউনিটের বিরুদ্ধেও একই পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলে ওই ইউনিটে মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থানান্তর নিষিদ্ধ হবে এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে প্রশিক্ষণে বা মার্কিন অর্থায়নপ্রাপ্ত প্রোগ্রামগুলোতে সৈন্য ও অফিসারদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করবে।
উল্লেখ্য, নেটজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়ন, কেফির ব্রিগেডের অংশ। মূলত ১৯৯৯ সালে চরমপন্থি বসতিসহ অতি-অর্থোডক্স এবং জাতীয় ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিয়োগকারীদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে মিটমাট করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর এই ইউনিটকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে মোতায়েন করা হয়। পরে পশ্চিম তীর থেকে উত্তর ইসরায়েলে পুনরায় মোতায়েন করা হয়েছিল এবং গাজাতেও মোতায়েন করা হয়।
ইউনিটের সৈন্যরা ৭৮ বছর বয়সি মার্কিন নাগরিক ওমর আসাদের মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত। যিনি ২০২২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইউনিটের সদস্যদের দ্বারা আটক হন। তাকে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়। গলায় শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় বিভাগ থেকে তদন্ত করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২২এপ্রিল/এমআর)