রাজধানীতে থাকবে না ফিটনেসবিহীন বাস, জুন থেকে মাঠে নামছে বিআরটিএ

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১২ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৬

মো. মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম, ঢাকা টাইমস

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সব মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে সড়কের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ও সড়কে শৃঙ্খলা জোরদারে সংস্থাটি কঠোর হতে যাচ্ছে। বিআরটিএ বলছে, আগামী ৩১ মের পর থেকে রাজধানীর সড়কে কোনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলতে পারবে না। থাকবে শুধু দৃষ্টিনন্দন গাড়ি।

এমনটাই জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘আগামী ১ জুন থেকে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় বেসরকারি বাস কোম্পানি পরিচালিত প্রতি পাঁচটি বাসের মধ্যে এক বা একাধিক বাসের কোনো বৈধ ফিটনেস সনদ নেই।

বিআরটিএ’র জুন-২০২৩ তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় চলাচলের জন্য ৭৫টি বাস কোম্পানির ৩ হাজার ৯৭৪টি বাসের রুট পারমিট রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ বাসের কোনো ফিটনেস ছাড়পত্র নেই। এসব ফিটনেসবিহীন বাসের বেপরোয়া চলাচলের জন্য প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধে কঠোর অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১ জুন থেকে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে। সড়কে কোনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলবে না। মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেই আমরা ধরে নেব এটা আনফিট। যতই ফিট থাকুক ভেতরে। যাতে মেয়াদ থাকতেই ফিটনেস সনদ নিয়ে নেয়। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে আমরা ডাম্পিংয়ে দিয়ে দেব। এ ব্যাপারে আমরা আর কোনো ছাড় দেব না এখন থেকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা সিটিতে যাতে দৃষ্টিনন্দন গাড়ি চলে এ ব্যাপারে আমরা মালিক সমিতির সঙ্গে একাধিকবার মিটিং করেছি। তারা দৃষ্টিনন্দন করে বেশকিছু গাড়ি রাস্তায় নামিয়েছেও। কিছু গাড়ি এখনো আছে, তারা আমাদেরকে সময় দিয়েছে এপ্রিল মাসের মধ্যে ২০ পার্সেন্ট গাড়ি ফিট করে এবং দৃষ্টিনন্দন করে রাস্তায় চালাবে। আর বাকি ৩১ মের মধ্যে ঢাকা সিটির সব গাড়ি দৃষ্টিনন্দন থাকবে। সড়কে কোনো রংচটা বা ভাঙাচোরা গাড়ি থাকবে না সে কমিটমেন্ট তারা দিয়েছে। পুরো ঢাকা সিটিতে ৩১ মের পরে আমরা কঠোরভাবে অভিযান পরিচালনা করব। এরকম যদি পাই আমরা সরাসরি ডাম্পিংয়ে দিয়ে দেব।’

তবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা জানান, ঢাকার সড়কে এখন সাড়ে তিন হাজার বাস-মিনিবাস যাত্রী পরিবহন করছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এখন পুরোপুরি ফিটনেস ঠিক করা পর্যন্ত যদি এক থেকে দেড় হাজার গাড়ি বসিয়ে রাখা হয় তবে নগরে গণপরিবহন সংকট তীব্র হবে। মালিকদেরও এক থেকে দেড় লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি হবে।

এর আগে গত ২ এপ্রিল রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ ভবনে ‘ফিটনেসবিহীন, বায়ু দূষণকারী ও রুট পারমিটবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধকরণ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা।

সভায় নূর মোহাম্মদ মজুমদার পরিবহন মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আগামী ৩১ মের পর ঢাকার রাস্তায় কোনো ধরনের রং ওঠা বাস চলতে দেওয়া হবে না। আমরা এর জন্য অভিযানে বের হব। আশা করব, মালিকরা নিজ উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন বাস উপহার দেবেন। আমরা পুরো বিষয়টি মনিটর করব।’

সভায় বিআরটিএ জানায়, রাজধানীতে ৩৯টি কোম্পানির ৫২৮টি ফিটনেসবিহীন গাড়ি ছিল, এর মধ্যে ২৫৭টি ঠিক করা হয়েছে। তবে এ তালিকা পূর্ণাঙ্গ আকারে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার তাগিদ রয়েছে বিআরটিএর। আগামী ৩০ মের মধ্যে ঢাকার সড়কে চলাচলকারী সব বাস-মিনিবাসের তালিকা ও মালিকদের নাম বিআরটিএ-তে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ।

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/এমআই/এসআইএস)