জীবন যুদ্ধের গল্প

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৯ | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৮

রেজাউল মাসুদ

হেলাল মুন্সি সিআইডির কনস্টেবল, কাজ করেন মালিবাগ হেডকোয়ার্টার্সে। তার ছেলে উবায়দা গাজীপুর আইআইটিতে চান্স পেয়েছে। নটরডেম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়েছে। সে বছর পুরো ফরিদপুর জেলায় এসএসসিতে প্রথম হয়েছিল। তার মেয়েটাও ভিকারুন্নিসায় ক্লাশ এইটে পড়ছে ।

জীবনের পথ কুসুম বিছানো থাকে না অনেকের। আজন্ম তাদের যেতে হয় কণ্টকময় পথ পাড়ি দিয়ে। অনেকে যেতে যেতে থেমে যায়। কেউ কেউ আবার দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ায়, ভাগ্য নামের কুহেলিকার তোয়াক্কা না করে প্রবল প্রাণশক্তিতে এগিয়ে চলে আপন অভীষ্টের দিকে। তৈরি করে নেয় নিজের ভবিষ্যৎ।

 “আমি একজন কনস্টেবল। আমার চাকরি ৩০ বছর। আমি বিসিএস কিংবা সরাসরি এসআই পরীক্ষা দেয়ার পূর্বেই আর্থিক  অসচ্ছলতার কারণে আঠার বছর বয়সে পুলিশে জয়েন করতে হয়। কিন্ত আমার লালিত স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হওয়া, আমি আমার ছেলেকে দিয়ে তা পূরণ করাতে চাই। আমার ছেলে নটরডেম থেকে পাস করে বাংলাদেশের এমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই সে চান্স পায়নি। ঢাকা ভার্সিটি, মেডিকেল, বুয়েট, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি, এম আই এস টি সহ সকল জায়গায় চান্স পেয়েছে।”

জীবনপথের সেই সব দুর্দম অভিযাত্রী হেলাল এসেছিল আজ সিআইডি অডিটরিয়ামে। শুনিয়েছে তার ছেলের মেধার কাহিনী, এতে স্ত্রীর অবদানের কথা গর্বভরে স্বীকার করেন কনস্টেবল হেলাল। সে জানায় ক্লাশ ওয়ান থেকে তার ছেলে সবসময় প্রথম হতো। এসএসসিতে রেকর্ড মার্কস পেয়েছে । কনস্টেবল হেলাল বেশী পড়ালেখা করতে পারেনি! বিরুদ্ধ প্রতিবেশের সঙ্গে তাদের নিরুপায় সংগ্রামের কাহিনিও বলেছে। বলেছে সাহস ও স্বপ্নের কথা। বলেছে নামাজ পড়ার ইতিবাচক কথা। তিনি আরো বলেছেন মোবাইল ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খারাপ নেশার কথা। পুরো হল জুড়ে ছিল পিনড্রপ সাইলেন্ট! এত সিনিয়র অফিসারদের ভীড়ে একজন কনস্টেবলের কথায় এতটা আত্মবিশ্বাস! আমি এই প্রথম দেখলাম। আমি যেন হাওয়ায় উড়ছিলাম! বাষ্পরুদ্ধ হয়েছে অনেকের কণ্ঠ। নেমেছে অশ্রুধারাও।

তবে এসব অসহায়ের অক্ষম কান্না নয়, বরং তা ছিল গৌরবের মহিমায় ভাস্বর। বাংলদেশ পুলিশে কর্মরত সদস্য এবং তাদের মেধাবী ছেলেমেয়েদের জীবন যুদ্ধের কথা শুনেছি ভীষন মনোযোগ দিয়ে। আবেগী হয়েছি, হয়েছি আপ্লুত। জেনেছি তারা হাল ছাড়ার কথা ভাবেনি। ব্যক্ত করেছে কঠিন বাস্তবতার বিরুদ্ধে কঠোর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অটল সংকল্প। তাদের অনুপ্রেরণা দিতে এসে নিজেরাই অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা বলেছি আমরা সিনিয়র অফিসাররা।

বাংলাদেশ পুলিশ মেধাবৃত্তি ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের গল্প এটি।

 

লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা