ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: সিরিয়া কি নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হবে?

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৫ | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
দামাস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলা ইসরায়েলের হামলা

গাজা যুদ্ধে প্রভাব এবার সিরিয়ার ওপর খুব বেশি করতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

দামাস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলার এক সপ্তাহ পরের ঘটনা। রমজানের শেষে সিরিয়ার স্বৈরাচারি প্রেসিডেন্ট বাশার আস-আসাদ তার স্ত্রী ও পরিবারকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। তিনি প্রার্থনায় অংশ নিয়েছিলেন এবং শহরের রাস্তায় হেঁটেছিলেন।

তবে কয়েকদিন আগেই একটি বিদেশি রাষ্ট্র (ইসরায়েল) তার দেশে হামলা করে ইরানের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় জেনারেলকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ, তারপরেও তাকে দেখে মনে হয়নি তিনি বিচলিত বোধ করছেন। 

লন্ডন ভিত্তিক থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর অ্যামেরিকা প্রোগ্রামের কনসাল্টিং ফেলো হেইড বলেছেন, ‘এই বার্তাটা দেয়াই আসাদের উদ্দেশ্য ছিল।’

তিনি বলেছেন, ‘আসাদের এটাই দেখাতে চেয়েছেন, সিরিয়ায় সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে। সিরিয়া কোনোরকম প্রত্যাঘাতে যাবে না।

হেইডের মতে, ‘এটা খুব অবাক হওয়ার মতো ঘটনাও নয়। গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই আসাদ তার থেকে একটা দূরত্ব তৈরি করেছেন। তিনি নিজেকে এই বিষয়ে নিরপেক্ষ দেখানোর চেষ্টা করছেন।’

এর পিছনে অনেকগুলো কারণ আছে। দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। স্থানীয় সেনার পক্ষে পাল্টা আক্রমণে যাওয়া সম্ভব নয়। সিরিয়ার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই অবস্থায় গাজা নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিলে পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে আসাদের লাভ হতে পারে।

সিরিয়া ও ইরানের সম্পর্ক

২০১২ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইরান। তারা বিরোধী শক্তিকে হারাবার চেষ্টা শুরু করে। পরিবর্তে সিরিয়া তাদের লেবাননে যাওয়ার জন্য স্থল ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয়।

লেবাননে হেজবোল্লাহ হলো ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সমর্থক। সিরিয়াতেও হেজবোল্লাহের উপস্থিতি আছে। ইরান ও হেজবোল্লাহ মনে করে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের শত্রু।

সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতির ফলে ইসরায়েল চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাদের সীমান্তের কাছে ইরানের সেনা ও পরিকাঠামো নিয়ে ইসরায়েলের চিন্তা বাড়ে। তারা নিয়মিত সিরিয়ায় ইরানের পরিকাঠামোর উপর আঘাত হানতে থাকে।

থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ব্যাখ্যা, ''ইসরায়েলের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, সিরিয়ায় ইরানের সামরিক উপস্থিতি বন্ধ করা। ইরান যাতে সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করতে না পারে তা নিশ্চিত করা। সিরিয়া হয়ে হেজবোল্লাহের সাপ্লাই লাইন বন্ধ করের জন্য ইসরায়েল একশবারেরও বেশি আঘাত করেছে। ২০১৭ সালের পর থেকে এই আক্রমণের সংখ্যা বাড়ে।'' পর্যবেক্ষকদের মতে, ইসরায়েল প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আঘাত হানার চেষ্টা করেছে।

সিরিয়া কেন প্রত্যাঘাত করে না?

সিরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। তারা নিজেদের অস্তিত্বরক্ষার জন্যই ব্যস্ত। তাই তাদের পক্ষে ইসরায়েলকে প্রত্যাঘাত করা সম্ভব নয়। বিশ্লেষকদের মতে, তারা যদি সেই চেষ্টা করে, তাহলে খুব বেশি হলে রকেট ছুড়তে পারে, যা খালি জমিতে গিয়ে পড়বে। আর ইসরায়েল সিরিয়ার সম্পদের উপর আক্রমণ চালায় না, তাদের লক্ষ্য থাকে ইরানের পরিকাঠামো ধ্বংস করা।

তবে ৭ অক্টোবর হামাস ইসারেয়েলে ঢুকে আক্রমণ করার পর সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা আরো নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামাসকে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও অন্য কয়েকটি দেশ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে। অতীতে হেজবোল্লাহ বা ইরানিদের মারার পথে খুব একটা যেত না ইসরায়েল। কিন্তু এখন তারা সেই কৌশল বদলেছে বলে মনে করেন হেইড।

তিনি লিখেছেন, ‘সাত অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েল এখন সিরিয়ায় ইরানের নেতত্বকে মারার কৌশল নিয়েছে।’

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘হিজবোল্লাহ যেখান থেকে অপারেট করুক না কেন, আমরা সেখানেই পৌঁছে যাব। সেটা বৈরুত, দামাস্ক বা অন্য কোনো জায়গা হতে পারে।’

গত ১ এপ্রিল দামাস্কে ইরানের দূতাবাস আক্রান্ত হয়। অভিযোগ, ইসরায়েল এই কাজ করেছে। তারপর ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান।

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি আক্রমণের ঘটনা আপাতত আর হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পরোক্ষ আক্রমণ চলবে বলে তাদের মত।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পরামর্শদাতা দারিন খালিফা বলেছেন, ‘সিরিয়ায় আক্রমণ করতে গেলে খুব বেশি খরচ হয় না বলে একটা কথা চালু আছে। তাই আমি মনে করি, সিরিয়ায় ইরানের পরিকাঠামোর উপর আঘাত চলতে থাকবে। আর সিরিয়ায় হচ্ছে বলে, তার কোনো আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া হবে না, এটা মনে করা ভুল হবে।’

সূত্র: ডয়েচে ভেলে 

(ঢাকাটাইমস/২৫এপ্রিল/এমআর)