সাদা রঙের পোশাক হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়!
প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৫
গ্রীষ্মের গরমে সবাই অতিষ্ঠ। মানূষ্য সৃষ্ট বিভিন্ন গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণে প্রকৃতি গরম হয়ে উঠছে। গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশের তুলনায় শহরের ইট-পাথরের কৃত্রিম পরিবেশের কারণে বিপর্যয়ের সম্মুখীন সবাই। কালের বির্বতনে পৃ্থিবী প্রচন্ড গরমের অবস্থার দিকে প্রবেশ করছে। প্রাকৃতিকভাবে নিকট ভবিষ্যতে শীতল পরিবেশ পাওয়ার আশা নেই। পরবর্তী ৩০ হাজার বছরেও আর একটি বরফ যুগ আসার সম্ভবনা নাই।
তীব্র গরমে বেড়েছে মানুষের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি। প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলে। হিট স্ট্রোকের লক্ষণ হিসেবে মাথা ঝিমঝিম, বমি, চোখে ঝাপসা দেখা, অবসাদ ও দুর্বলতা, মাথাব্যথা, মাংসপেশির খিঁচুনি দেখা দেয়। এছাড়াও হিট স্ট্রোক হলে চামড়া খসখসে ও লাল হয়ে যাওয়া, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাসকষ্ট, দৃষ্টিবিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন হতে পারে।
প্রচণ্ড গরমে শরীরে পানিশূন্যতা এবং বিভিন্ন ওষুধের প্রভাবেও হিট স্ট্রোক হয়। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে এই গরমে দেহে পানি কমে গিয়ে যেন ডিহাইড্রেশন না হয় তা নিশ্চিত করা। এছাড়াও রোদে যারা দীর্ঘক্ষণ পরিশ্রম করেন, তাদের হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
চিকিৎসকের মতে, হিট স্ট্রোক এড়াতে হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। কাপড় সাদা বা হালকা রঙের হতে হবে। সুতি কাপড় হলে ভালো হয়। যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন। বাইরে বের হলে টুপি, ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করুন। প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করুন। গরমে ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুটোই বের হয়ে যায়। তাই পানির সঙ্গে রক সল্ট মিশিয়ে খেতে পারেন। এর পাশাপাশি খাবার স্যালাইন, ফলের রস, শরবত ইত্যাদিও পান করতে হবে।
গরমে হিট স্ট্রোক এড়াতে আরামদায়ক পোশাক পরার বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি গরমে কোন রঙের পোশাক বিশেষ উপযোগী তা জানতে হবে। যদিও এ বিষয়ে তেমন মাথা ঘামান না অনেকেই, ফলে বাইরে বের হলে গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠতে হয়। কিছু রঙের পোশাক পরলে শরীর ঠান্ডা থাকে ও গরমও কম লাগে এমনটিই জানাচ্ছে এক গবেষণা। গবেষকরা গরমে নীল, হালকা সবুজ, গাঢ় সবুজ ও কালো রংয়ের পোশাক পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। এই রংগুলো অধিক তাপমাত্রা শোষণ করে।
তীব্র রোদে স্বস্তি পেতে অনেকেই সাদা রঙের পোশাক পরার পরামর্শ দেন। কিন্তু রং কি আসলেই এসব ক্ষেত্রে কাজ করে?
শুনতে কিছুটা খাপছাড়া মনে হলেও তাপ নিয়ন্ত্রণে পোশাকের রঙের সামান্য ভূমিকা আছে। বিশেষ করে আলোকিত পরিবেশে রঙের কারণে তাপমাত্রা কমে-বাড়ে—এ কথা আসলেই সত্য।
কোনো কিছুর ওপরে আলো এসে পড়লে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। কিছু আলো প্রতিফলিত হয়, অর্থাৎ বস্তুর গায়ে লেগে আবার উল্টো পথে চলা শুরু করে। কিছু আলো বস্তুর অণু-পরমাণুর ফাঁক গলে খানিকটা বেঁকে ওপাশে বেরিয়ে যায়, অর্থাৎ প্রতিসরণ ঘটে। আর কিছুটা আলো বস্তুতে শোষিত হয়। আলোর কণা ফোটন যেহেতু কিছুটা শক্তি বহন করে, তাই বস্তু আলো শোষণ করলে এর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যত বেশি আলো শোষণ করবে, তত তাপ বাড়বে। সহজ হিসাব।
কোনো বস্তু (অণু-পরমাণু) থেকে কী পরিমাণ আলো প্রতিফলিত হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে তার উজ্জ্বলতা। আর বস্তু থেকে কোন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে, সেটা হলো বস্তু রঙ। সব রঙের আলো মিশ্রিত হলে তৈরি হয় সাদা রং। অন্য যেকোনো রঙের চেয়ে এ রঙের উজ্জ্বলতাও অনেক বেশি।
রঙের দিকে নজর কেবল তখনই দিতে পারেন, যখন পোশাকটি এমনিতে আপনার কাছে আরামদায়ক হবে। আর কৃত্রিম সুতোয় বোনা পোশাকের চেয়ে প্রাকৃতিক সুতোর পোশাক অপেক্ষাকৃত কম তাপ ধরে রাখে।
অর্থাৎ সাদা কাপড় থেকে সবচেয়ে বেশি আলো প্রতিফলিত হয়। এর আরেক অর্থ, সাদা কাপড় সবচেয়ে কম আলো শোষণ করে। এজন্যই রোদের মধ্যে অন্য রঙের কাপড়ের চেয়ে সাদা রঙের পোশাক কম উত্তপ্ত হয়।
এ পর্যন্ত সব ঠিকই আছে। সমস্যা হলো, কেবল রংই শেষ কথা নয়। আপনি কী ধরনের কাপড় পরছেন, পোশাকটা কেমন—এটাও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের একটা বড় বিষয়। সাদা রঙের আঁটোসাঁটো পোষাক পরলে রোদের মধ্যে তা আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেবে। রং তখন সুবিধা দিতে পারবে না। তা ছাড়া স্বস্তিও পাবেন না। আবার কৃত্রিম সুতোয় বোনা কাপড়ের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। তাই রঙের দিকে নজর কেবল তখনই দিতে পারেন, যখন পোশাকটি এমনিতে আপনার কাছে আরামদায়ক হবে। আর কৃত্রিম সুতোয় বোনা পোশাকের চেয়ে প্রাকৃতিক সুতোর পোশাক অপেক্ষাকৃত কম তাপ ধরে রাখে। এসব দিক ঠিক করে সাদা পোশাক পরলে গরম কম লাগবে এবং হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে।
(ঢাকাটাইমস/২৯ এপ্রিল/আরজেড)