অতিরিক্ত গরমে খামারে মরছে মুরগি, কমছে ডিমের উৎপাদন

প্রকাশ | ০৫ মে ২০২৪, ১৭:২৩ | আপডেট: ০৫ মে ২০২৪, ১৭:৩৭

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)

চলমান তীব্র দাবদাহে জনসাধারণের পাশাপাশি অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে পশুপাখিও। আর এতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাভার ও ধামরাইয়ের পোল্ট্রি খামারিরা। অত্যধিক গরমে হিট স্ট্রোক করে খামারেই মারা যাচ্ছে অসংখ্য মুরগি। অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে ডিমের উৎপাদন। এমন পরিস্থিতিতে খামারিদের রক্ষায় সরকারি সহায়তার দাবি তাদের।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, চলমান তাপপ্রবাহে হিট স্ট্রোকে সাভার ও ধামরাইসহ সারাদেশে দিনে প্রায় এক লাখ মুরগি মারা যাচ্ছে। যার আনুমানিক ক্ষতি দিনে ২০ কোটি টাকা। গত ১০ থেকে ১২ দিনে সারা দেশে ১০ লাখের বেশি ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগি মারা গেছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ব্রয়লার মুরগি এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লেয়ার মুরগি।

খামারিরা বলছেন, ব্রয়লার মুরগির জন্য স্বাভাবিক সহনীয় তাপমাত্রা ২৪-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সারাদেশে এখন দিনের তাপমাত্রা থাকছে ৩৮-৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এই অবস্থায় পর্যাপ্ত ফ্যান ব্যবহার করেও হিট স্ট্রোকের হাত থেকে মুরগিকে বাঁচানো যাচ্ছে না। তার ওপর দিনের বেশিরভাগ সময় লোডশেডিং থাকে। যাদের জেনারেটর ব্যবস্থা রয়েছে এবং যাদের নেই– দুই ধরনের খামারই অতি তাপমাত্রার সমস্যায় ভুগছে। কারণ ফ্যান চালিয়ে বাড়তি এই তাপ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। কেবল যেসব প্রতিষ্ঠানে কন্ট্রোলড শেড রয়েছে তাদেরকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে না।

হাসান চৌধুরী নামে এক খামারি বলেন, 'গরমে মুরগি হিট স্ট্রোক করছে। স্যালাইন দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। তার ওপর বিদ্যুৎ থাকে না। ঠিক মতো খাবার খাচ্ছে না, এভাবে চললে মুরগির গ্রোথও কমে যাবে। প্রতিদিনই একটা-দুইটা করে মুরগি মারা যাচ্ছে। মুরগির সুরক্ষায় আমাকে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। এতে আমাদের লোকসানে পড়তে হবে।'

হামিদ আলীর খামারে লেয়ার মুরগির সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার। এখান থেকে প্রতিদিন ৯০-৯৫ শতাংশ ডিম পাওয়া যেত, যেটি এখন ৮০-৮৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এই খামারি জানান, 'মুরগি পর্যাপ্ত খাবার খাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি আরও কিছুদিন চলতে থাকলে প্রডাকশন আরও বড় আকারে কমতে পারে।'

আকবর হোসেন নামে এক খামারি জানান, 'আমার খামারে ২ হাজার মুরগি আছে একেকটি মুরগির ওজন প্রায় ১ কেজি। তাপমাত্রা অতিরিক্ত বাড়তে থাকার কারণে গত এক সপ্তাহে হিট স্ট্রোকে আমার ৩০টি মুরগি মারা গেছে। বাকিগুলোও হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছে, কারণ এখানে প্রচুর পরিমাণে লোডশেডিং হচ্ছে।'

এদিকে হিট স্ট্রোকে মুরগি মারা যাওয়া ঠেকাতে নানা ধরনের পরামর্শের কথা জানালেন সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন মো. মামুনুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের পোল্ট্রি খামারগুলোতে মুরগিকে সাধারণত হাই প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়ানো হয়। এই মুরগিগুলোর ওজন যখন ৮০০-১,০০০ গ্রাম হয়, তখন থেকে চর্বি যুক্ত হতে থাকে। ফলে এসব মুরগির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। তাই অতিরিক্ত তাপমাত্রার এই সময়টাতে শেডে পর্যাপ্ত পরিমাণে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা, ধারণক্ষমতার চেয়ে কম মুরগি রাখা, পানিতে ভিটামিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার না করা, স্যালাইন ও লেবুর রসযুক্ত পানি খাওয়ানো, মুরগির গায়ে স্প্রে করা, শেডের ওপর পাটের ভেজা চট রেখে তাতে নিয়মিত পানি দেওয়া এবং দুপুরে খাবার বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে খামারিদের।


(ঢাকা টাইমস/০৫মে/এসএ)