এমপি আমুর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ
ুঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ তার সমর্থক ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দোয়াত-কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হামলার শিকার সুলতান হোসেন খানের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী রাজা রফিকুল ইসলাম।
বুধবার দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান হোসেন খানের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী রাজা রফিকুল ইসলাম।
তিনি প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান নির্বাচন কমিশনের নিকট প্রার্থীর পরিবার, সমর্থক ও নেতাকর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আবেদন জানিয়েছেন। পাশাপাশি নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রভাব বিস্তার বন্ধের দাবিও জানিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে রাজা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক ঘোষিত নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরই সুলতান হোসেন খান প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকেই সুলতান হোসেন খানের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের ওপর স্থানীয় সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু সাহেবের ঘোষিত প্রার্থী খান আরিফুর রহমান ও তার অনুসারীরা বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছে। যার ধারাবাহিকতায় আমরা বিভিন্ন সময়ে ডকুমেন্টসহ নির্বাচন কমিশন, জেলা রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে এবং মৌখিকভাবে অবহিত করেছি। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কীর্ত্তিপাশা মোড় নামক এলাকায় পূর্ব নির্ধারিত সভায় স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে সাধারণ সমর্থক ও নেতাকর্মীদের আহত করা হয়েছে। ওইসময় পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে থাকলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করে। এদিকে খান আরিফুর রহমানের অনুসারীরা তাদের নিজেদের অফিস ভেঙ্গে আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়েছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবারের হামলার ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা দেওয়া হলেও পুলিশ আমাদের কোনো অভিযোগ আমলে নেয়নি। এ অবস্থায় মামলা দায়ের হলেও হামলাকারীদের কিছুই হবে না বলে দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে রাজা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিপক্ষরা হামলার পর বলছে এ তো শুধুই ট্রেইলার, আসল খেলা হবে নির্বাচনের দিন। এ অবস্থায় আমরা ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কিত আছি। তাই প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তিনি বলেন, প্রার্থী সুলতান হোসেন খান গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, সেই সঙ্গে তার স্ত্রী-স্বজনরাও আতঙ্কে রয়েছেন। তাই তাদের পক্ষে আমাকে সংবাদ সম্মেলন করতে হয়েছে। আবার নানা প্রতিকূলতার কারণে ঝালকাঠিতে সংবাদ সম্মেলন না করে বরিশালে করতে হয়েছে। আমরা চাই নির্বাচনি পরিবেশ বজায় থাকুক, সবার জন্য সমান সুযোগ প্রদানের মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হোক।
এদিকে মঙ্গলবারের হামলার ঘটনায় দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী সুলতান হোসেন খানের ছোট ভাই হেমায়েত উদ্দিন খান বাদী ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা করেছেন। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী খান আরিফুর রহমানসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮০/৯০ জন আসামির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী খান আরিফুর রহমানের নির্দেশে আসামিরা ঝালকাঠি সদরের কীর্ত্তিপাশা মোড়ে অনুষ্ঠিত সুলতান হোসেন খানের উঠান বৈঠকে হামলা চালায়। হামলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান হোসেন খানসহ কর্মী-সমর্থকরা আহত হন।
এ বিষয়ে জানতে প্রার্থী খান আরিফুর রহমানের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে আসামিদের মধ্যে থাকা জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর কাউন্সিলর মো. কামাল শরীফ বলেন, ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। মানুষের কাছ থেকে যেটা জেনেছি, তাতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন আনারস প্রতীকের প্রার্থী খান আরিফুর রহমানের অফিস ভেঙেছে এবং লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে।
একজন প্রার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করতে পারেন জানিয়ে তিনি বলেন, দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী নির্বাচনে পরাজিত হবে জেনেই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি ঘটনা ঘটিয়েছে। যেখানে তারা নিজেরা নিজেরা চেয়ার ছোড়াছুড়ি করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পাঁয়তারা চালিয়েছে এবং নির্বাচনকে ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়েছে।
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় সুলতান হোসেন খানের পক্ষ থেকে একটি মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলায় আলফি সাওরুল শুভ, মো. ইসতিয়াক আহম্মেদ ও মো. তুহিন হাওলাদার নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহা. আ. ছালেক বলেন, যে প্রার্থী গতকাল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন তিনি একটি মামলা দিয়েছেন। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং অভিযান চলমান রেখে বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবারের ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোও হয়েছে, আমরা যে নির্দেশনা পেয়েছি সে অনুযায়ী কাজ করছি। এছাড়া প্রার্থী বিভিন্ন সময়ে যে অভিযোগ দিয়েছেন অথবা বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অসংগতির যে কোনো বিষয়ে জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছি। তবে স্থানীয় সাংসদের আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এখানে আসেন না, থাকেনও না তাই এ কথাটি বলা ঠিকও হবে না।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইলে বলেন, আমি তো ঢাকায় ছিলাম সুতরাং এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
(ঢাকাটাইমস/১৫মে/প্রতিনিধি/পিএস)
মন্তব্য করুন