শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ধর্মপাশার যে গ্রাম এখনো অন্ধকারে
প্রকাশ | ০১ জুন ২০২৪, ১৩:১৯ | আপডেট: ০১ জুন ২০২৪, ১৪:০৩
৪ বছর আগে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের নূরপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ সুবিধা পায়নি ২৬টি পরিবার। ফলে সৌরবিদ্যুৎসহ অন্যান্য আলোক উৎসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের।
নিজেদের গ্রাম বিদ্যুতায়িত করার জন্য দালাল চক্র ও স্থানীয় মাতব্বরদের খপ্পরে পড়ে বেশ কিছু টাকাও গচ্চা দিতে হয়েছে ভুক্তভোগীদের। তবু মেলেনি বিদ্যুৎ।
জানা যায়, সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। ইতোমধ্যে নূরপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়িঘর হারানো মানুষেরা গত ৭-৮ বছর ধরে নূরপুর গ্রামের দক্ষিণে ধানকুনিয়া হাওরে নূরপুর দক্ষিণপাড়া গ্রাম গড়ে তুলেছেন। এই গ্রামে এখন ২৬টি পরিবারে দেড় শতাধিক মানুষের বসবাস। নদী ভাঙনে গৃহহারা আরও ১০-১২টি পরিবার মাথা গোঁজার জন্য ভিটা জাগিয়েছেন সেখানে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির অধীনে সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের নূরপুর, বাবুপুর, দিগজান, ফাজিলপুর, রহমতপুর, সরিষাকান্দা, ইসলামপুর, সুখাইড়, বাগবাড়ি, নোয়াগাঁও, জাড়ারকোনা ও জাড়ারকোনা নোয়াগাঁও গ্রাম বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসে। এর আগে একই বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে ধর্মপাশা উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুয়াতি উপজেলা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২০২০ সাল থেকেই নূরপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের মানুষেরা বিদ্যুৎ সংযোগের দাবি জানালেও তাদের দাবি বাস্তবায়িত হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, ধর্মপাশা উপজেলার ধর্মপাশা সদর, সেলবরষ, পাইকুরাটি, জয়শ্রী ইউনিয়ন ও সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের কিছু অংশ নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে বিদ্যুতায়িত হয়েছে আর ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের একটি অংশ ও সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
নূরপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এহসান হাসান হাবিব বলেন, স্থানীয় মাতব্বরদের মাধ্যমে গ্রাম থেকে টাকা তুলে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য একাধিবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেন এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছি না তা বুঝতে পারছি না।
একই গ্রামের মাজেদা আক্তার বলেন, গ্রামটি গড়ে উঠতে ৭-৮ বছর সময় লেগেছে। এখনো অনেকেই আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই গ্রামকে বিদ্যুতায়িত না করার কারণে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাব উদ্দিন বলেন, নূরপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে একটি প্রতারক চক্র ১৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
নেত্রকোণা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির অধীনে থাকা ধর্মপাশা উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের এজিএম হাফিজুর রহমান বলেন, সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জামালগঞ্জ উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীনে। এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির অধীনে থাকা জামালগঞ্জ উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের এজিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, নূরপুর দক্ষিণপাড়া গ্রাম থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করা হয়েছিল কি না তা এখন বলতে পারছি না। আবেদন করেও থাকতে পারে।
তিনি বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়নের প্রকল্প শেষ হওয়ায় প্রকল্পের অধীনে এখন আর নতুন গ্রাহক নেওয়া হবে না। তবে বিদ্যুৎ বঞ্চিতরা চাইলে তাদের নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারবে।
(ঢাকাটাইমস/০১জুন/প্রতিনিধি/পিএস)