হরিরামপুরে ঠিকাদার লাপাত্তা, দেড় বছরের কাজ তিন বছরেও অসমাপ্ত

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে রাস্তার উন্নয়ন কাজ ফেলে লাপাত্তা রয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ফলে দেড় বছর মেয়াদের একটি কাজ তিন বছরেও শেষ হয়নি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। অথচ নীরব রয়েছে কর্তৃপক্ষ।
উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের নয়াবাজার থেকে ডেগির চর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করণের কাজ ফেলে পালিয়েছেন ওই ঠিকাদার। এতে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
সরেজমিন ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, কাজের শুরুতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তার মাটি খুঁড়ে বক্স করে নামমাত্র কিছু বালু ফেলেছে। এরপরই কাজ বন্ধ। বর্তমানে সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যায় হাঁটু পানি। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। এ সময়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন বয়স্ক মানুষ ও রোগী। এছাড়া স্থানীয় দুটি বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর চলাচলেও চরম অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০/২১ অর্থ বছরে জিডিবি-৩ প্রকল্পের আওতায় বাহাদুরপুর সড়কের নয়াবাজার থেকে ডেগির চর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তার পিচ ঢালাইয়ের জন্য ২০২০ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এক কোটি ৭৯ লাখ ২৫ হাজার ২৮১ টাকায় মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটির দায়িত্ব পায়। ২০২১ সালের মার্চ মাসে রাস্তার কাজ শুরু করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিন বছরে শুধুমাত্র রাস্তা খুঁড়ে বক্স করে কিছু কিছু স্থানে বালু ফেলে রাখা হয়েছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাস্তাটির কাজ বন্ধ রাখা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তাটি প্রায় তিন বছর আগে মাটি খুঁড়ে রাখায় এ রাস্তা দিয়ে কোনো যানবাহনই চলাচল করতে পারছে না। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে কাঁদার সৃষ্টি হয়। এতে করে মানুষের পায়ে হাঁটাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এ রাস্তা দিয়ে কৃষিপণ্যসহ কোনো মালামালই আনা নেওয়া করা যায় না। ফলে এ এলাকার কৃষকেরা কৃষিপণ্য নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। কেউ অসুস্থ হলে তাকে জরুরিভাবে হাসপাতালেও নেওয়া যায় না।
ইজিবাইক চালক রোমান বলেন, এই রাস্তাটি দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত খুঁড়ে ফেলে রেখেছে। আমরা গাড়ি চালাতে পারি না। গতকাল ১০-১২ মন ভূট্টা নিয়ে আমার গাড়ি উল্টে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই যাতায়াত করা যায় না। অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।
ডেগির চর গ্রামের বাসিন্দা আরজু প্রামাণিক জানান, আমাদের এই রাস্তাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু চার বছর ধরে রাস্তাটি এভাবে পড়ে আছে। কাজ বন্ধ করে রাখছে। এ রাস্তা দিয়ে কৃষকেরা কৃষিপণ্য নিয়ে হাটে বাজারে যেতে পারে না। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যায়। তখন গাড়ি তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেই চলাচল করা যায় না। রাস্তার এই বেহাল দশা দেখারও কেউ নেই।
একই গ্রামের ভ্যান চালক আব্দুল বারেক জানান, এই রাস্তা দিয়ে ভ্যানে করে মালামাল নেওয়ার সময় ভ্যান উল্টে আমার হাত ভেঙে গেছে। আজ আমি পুঙ্গ। তিন বছরের বেশি হইল এই রাস্তা দিয়ে হাজার মানুষ অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করছে। বিভিন্ন সময় রোগী নিয়েও বিপদে পড়তে হয়। কোনো গাড়ি আসতে পারে না।
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মোজাফফর হোসেন জানান, তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তাটি খুঁড়ে কাজ বন্ধ রয়েছে। রাস্তা খুঁড়ে রাখায় একটু বৃষ্টি হলেই মানুষের চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভ্যান, রিকশা কিংবা নসিমনে এই এলাকার কৃষিপণ্যও হাট বাজার নেওয়া যায় না। রাস্তাটি নিয়ে এই এলাকার জনগণ খুব ভোগান্তিতে আছে। রাস্তাটি এখন এলাকার জনগণের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মাজহারুল হক আকন্দ জানান, আগের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে অনুমোদন হয়েছে। এখন জেলা থেকে টেন্ডার দিলে কাজ শুরু হয়ে যাবে।
(ঢাকাটাইমস/০৭জুন/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন