আলফাডাঙ্গায় সাবেক মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
প্রকাশ | ১২ জুন ২০২৪, ২২:০৯

অর্থ কেলেঙ্কারি, অসুস্থ না হয়ে চিকিৎসা জনিত ছুটি ভোগ করা ও নিজ ক্ষমতা বলে প্রতিষ্ঠানে ছেলেকে সিকিউরিটি গার্ডে হিসেবে নিয়োগের চেষ্টাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিয়ালদী আদর্শ আলিম মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মো. আনিচুর রহমানের বিরুদ্ধে। চাকরিতে থাকাকালীন তিনি এসব অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসব অনিয়মের ঘটনায় মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ আনিচুর রহমান ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত অসুস্থ না থেকেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ভুয়া ডাক্তারি সনদ দিয়ে ছুটি নিয়েছেন।
এদিকে অনিয়মের ঘটনায় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গত ১ জুন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সানোয়ার আহমেদ।
লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি গার্ড পদে নিয়োগে মাদরাসা অধ্যক্ষ আনিচুর রহমান অনিয়ম করে নিজ ছেলেকে নিয়োগের চেষ্টাসহ সুনির্দিষ্ট ৫টি অভিযোগ উঠে। পরে ওই বছর ১১ ডিসেম্বর গভর্নিং বডির মিটিংয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ দিনের সময় দিয়ে অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্তু তিনি বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্য নোটিশের জবাব না দিয়ে পরবর্তীতে দুই ধাপে ২৮ দিনের চিকিৎসা জনিত ছুটির আবেদন করেন এবং অফিস থেকে দাপ্তরিক অনেক ফাইল নিজ জিম্মায় বাড়িতে রেখে ব্যক্তিগত কাজের মধ্যে সময় পার করেন।
এক পর্যায়ে মাদরাসা পরিচালনা কমিটি কর্তৃক গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ৫ দিনের সময় দিয়ে অধ্যক্ষকে মাদরাসায় যোগদান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু অধ্যক্ষ যোগদান না করে ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর আবারও মেডিকেল ছুটি চেয়ে আবেদন করেন।
বাধ্য হয়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে মাদরাসা পরিচালনা কমিটি প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান খানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে অফিসের কার্যক্রম চলমান রাখেন। একই সঙ্গে অধ্যক্ষের ২১ দিনের ছুটি মঞ্জুর করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দপ্তর বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে।
তবে এ সময়ের মধ্যে অধ্যক্ষের চাকরির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় তিনি ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে অবসরে চলে যান।
মাদরাসা সূত্রে জানা যায়, সাবেক অধ্যক্ষ দাপ্তরিক কাগজপত্র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নিকট বুঝিয়ে না দেওয়ায় আলফাডাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার চলতি বছর ৭ মার্চ দাপ্তরিক নথিপত্র, ব্যাংক চেক, জমার বহি, এফডিআর স্লিপ ও আর্থিক একাডেমিক সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র সিজার লিস্ট করে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু সাবেক অধ্যক্ষ আনিচুর রহমান শিক্ষা অফিসারের নির্দেশ উপেক্ষা করে কোনো কাগজপত্র বুঝিয়ে দেননি।
এদিকে মাদরাসা সভাপতির অভিযোগের ভিত্তিতে অনিয়মের ঘটনায় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক অধ্যক্ষ আনিচুর রহমান বলেন, আমি সরকারি বিধি মোতাবেক ছুটি নিয়ে অবসরে গিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজ্জামেল হক বলেন, সাবেক অধ্যক্ষকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করার পরেও বুঝিয়ে দেননি। বিষয়টি লিখিতভাবে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরকে অবগত করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমীন ইয়াসমীন বলেন, ১০ জুন মাদরাসার সভাপতি, সাবেক অধ্যক্ষ ও বর্তমান অধ্যক্ষকে এনে শুনানি করেছি এবং মাধ্যমিক শিক্ষা সুপারভাইজারকে দায়িত্ব দিয়েছি উভয়কে নিয়ে সমাধান করতে।
(ঢাকাটাইমস/১২জুন/এমআই/পিএস)