ব্যাংক প্রতিষ্ঠার দুই যুগ আগের মৃত ব্যক্তির নামে এল ঋণ পরিশোধের নোটিশ!
প্রকাশ | ১২ জুন ২০২৪, ২২:৫০ | আপডেট: ১২ জুন ২০২৪, ২৩:০৮

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের জবেদ আলী মারা গেছেন ১৯৬০ সালে। অথচ ১৯৮৪ সালে উদ্বোধন করা কৃষি ব্যাংকের বাউফল উপজেলার কেশবপুর শাখা থেকে ২০১৪ সালে তাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের নথিপত্রে সেটিই উল্লেখ রয়েছে। সেই ঋণ পরিশোধের জন্য জবেদ আলীর বাড়িতে নোটিশ পাঠানোর পর বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে।
বিষয়টি জানাজানি হলে সমালোচনার ঝড় উঠে। তবে জাবেদ আলী একা নন। ওই গ্রামের মো. জয়নাল হাওলাদার, হযরত আলী ও রহম আলীর নামেও রয়েছে কৃষি ঋণ।
এদের মধ্যে জয়নাল হাওলাদার মারা গেছেন ১৯৬৯ সালে, হযরত আলী মারা যান ১৯৬৫ সালে এবং রহম আলী মারা যান ১৯৬৬ সালে।
ভুক্তভোগীদের নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ২০১৪ সালে ব্যাংক থেকে বিভিন্ন পরিমাণে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। কারো কারো নামে একাধিক ঋণ উত্তোলন দেখানো হয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ জনের বাড়ি উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে।
সম্প্রতি মৃত ব্যক্তিসহ অন্তত ১৪ জনের ঠিকানায় ব্যাংকের নোটিশ দেওয়ার পর বিষয়টি খোলাসা হয়।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা নোটিশ পেয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েন।
এদিকে নোটিশ পাওয়ার পর ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনেরা কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখায় যোগাযোগ করেন। তারা এটিকে ‘লুটপাটের মহোৎসব’ উল্লেখ করে ব্যাপারটি দ্রুত সুরাহা করার দাবি জানিয়েছেন।
ব্যাংকটির শাখা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ২০১৪ সালে কর্মরত মাঠ কর্মকর্তাকে তলব করার কথা জানিয়েছে। যদিও ওই কর্মকর্তা এখন অবসরে চলে গেছেন। তৎকালীন ব্যবস্থাপকও দেশের বাইরে চলে গেছেন। বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালের ১১ ডিসেম্বর কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখার কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাউফলের সূর্যমনি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের কেতাব উদ্দিন হাওলাদারের তিন ছেলে জবেদ আলী, হযরত আলী ও রহম আলী ২০১৪ সালে ওই শাখা থেকে কৃষিঋণ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে জবেদ আলীর নামে ২৫ ও ৩০ হাজার টাকার দুটি, হযরত আলীর নামে ৪৫ হাজার ও রহম আলীর নামে ৫০ হাজার টাকার ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
জবেদ আলীর নাতি ফখরুল ইসলাম বলেন, তার জন্ম ১৯৬৭ সালের ১ জুন। তিনি তার দাদাকে দেখেননি। ২০১৪ সালে দাদার নামে নেওয়া ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়ে তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা হতভম্ব হয়ে পড়েন।
মো. জয়নাল হাওলাদারের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. আবুল বাশার (৬৪) বলেন, তার বাবার মৃত্যুর সময় ব্যাংকের শাখাই ছিল না। ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়ে তারা বিষয়টি জানতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।
কালিকাপুর গ্রামের মো. বাবুল মৃধা (৪৪) ঢাকায় থাকেন। তিনি কোনো দিন কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নেননি। তার নামে কেশবপুর শাখা থেকে ২০১৪ সালে ১৭ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। তার ছোট ভাই ফারুক হোসেন মৃধার (৪২) নামে ৭৫ ও ১৭ হাজার টাকার দুটি ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। আবদুল করিম মৃধা নামের এক ব্যক্তির নামে ৩৫ হাজার টাকার ঋণ উত্তোলন দেখানো হয়েছে। গ্রাম কালিকাপুর উল্লেখ করা হলেও তার বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে রুস্তম আলী মৃধা। অথচ এ নামের কেউ কালিকাপুর গ্রামে নেই।
ভুক্তভোগী মো. মনির হোসেন বলেন, তিনি কোনো দিন ওই ব্যাংকে যাননি। অথচ তার নামে ২০১৪ সালে ঋণ তোলা হয়েছে। ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যাংক থেকে চিঠি পেয়ে বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর কয়েক দফায় ব্যাংকে গিয়ে যোগাযোগ করেছেন। সেখানে দেখেন, ঠিকানা ঠিক থাকলেও ছবি ও স্বাক্ষর তার না।
কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক হুসাইন মো. তাইফ আলম বলেন, তিনি চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি কেশবপুর শাখায় যোগদান করেছেন। সম্প্রতি ভুক্তভোগী পরিবারের কয়েকজন কার্যালয়ে এসে তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ঋণগুলো ২০১৪ সালে অনুমোদন করা হয়েছে। তৎকালীন দায়িত্বে থাকা মাঠ কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে। সেই সময় যিনি ব্যবস্থাপক ছিলেন, তিনি সম্ভবত দেশের বাইরে চলে গেছেন।
২০১৪ সালে কেশবপুর শাখার মাঠ কর্মকর্তা ছিলেন মো. শফিউর রহমান। পাঁচ বছর আগে তিনি অবসরে চলে গেছেন। তার দাবি, তিনি কোনো মৃত ব্যক্তি কিংবা নামে-বেনামে কারও ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করেননি।
জানতে চাইলে কৃষি ব্যাংকের পটুয়াখালীর মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আশফাকুর রহমান বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/১২জুন/প্রতিনিধি/পিএস)