মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজেরও খোঁজ নেই, ঈদের পর আসেননি নিজ কার্যালয়ে

এক ‘ছাগলে’ খেল হাজার কোটি টাকার সাজানো সংসার। ভেঙে তছনছ করেছে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের বিশাল সাম্রাজ্য। ছেলের ছাগলকাণ্ডে উধাও হয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান। খোঁজ নেই তার প্রথম স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজেরও। ১৯ জুন থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন নিজ কার্যালয়ে। বন্ধ রয়েছে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন।
সর্বশেষ গতকাল সোমবারও (২৪ জুন) আসেননি নিজ কার্যালয়ে।
ঢাকা টাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রায়পুরা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোমেন মিয়া। তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহার পরদিন ওনার বাড়িতে সব চেয়ারম্যানকে দাওয়াত করে খাইয়েছেন। এরপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। অফিসেও আসছেন না। গত রবিবার (২৩ জুন) উপজেলার সমন্বয় সভায়ও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।’
কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও তিনি ছুটি নেননি এবং কাউকে দায়িত্বও দিয়ে যাননি— বলেন মোমেন মিয়া।
সরেজমিন উপজেলা পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, লায়লা কানিজের কক্ষ তালাবদ্ধ। বেলা দুটা পর্যন্ত বেশ কয়েকজন সেবাপ্রার্থী এসে চেয়ারম্যানকে না পেয়ে ফিরে গেছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী লিটন রবিদাসকে নিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে এসেছিলেন পারুল রবিদাস। কিন্তু চেয়ারম্যানকে না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাকেও।
উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ঈদের দুই দিন আগে সর্বশেষ অফিস করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ। ঈদের ছুটি শেষে এ পর্যন্ত একবারের জন্যও কার্যালয়ে আসেননি তিনি।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় অংশ নিতে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী সমন্বয় কমিটির সভায় উপজেলা চেয়ারম্যানেরও থাকার কথা। কিন্তু তিনি যোগ দেননি। নিজের কার্যালয়েও যাননি।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ছেলের ছাগলকাণ্ডের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে উধাও হয়ে গেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ। ঈদের পর থেকে তাকে কোথাও দেখা যায়নি। মুঠোফোনে কল করেও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি তিনি কোথায় আছেন, তাও কেউ বলতে পারছেন না।
স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণে উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজের ব্যবহৃত মুঠোফোনে ঢাকা টাইমসের পক্ষ থেকে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
লায়লা কানিজের অনুপস্থিতির বিষয়ে নরসিংদীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মৌসুমি সরকার রাখির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কোনো উপজেলা চেয়ারম্যান দেশের বাইরে যেতে চাইলে আমাদের মাধ্যমে স্থানীয়র সরকার বিভাগে আবেদন করে সচিব মহোদয়ের কাছ থেকে ছুটি নিতে হয়। তবে দেশের ভেতরে থেকে অনুপস্থিত থাকলে কী করণীয় সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা নেই।’
উল্লেখ্য, রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ। তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। ২০২২ সালে চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন উপজেলা চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন।
(ঢাকাটাইমস/২৪জুন/পিএস)

মন্তব্য করুন