কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, যান চলাচল বন্ধ

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৬:০৪ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৬:৪৪

​​​​​​​ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস

কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরের পর সড়ক অবরোধ করে শাহবাগ মোড়ে তারা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এতে বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। 

 

অন্যদিকে দুপুর থেকে নিজেদের হলের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে।

 

শিক্ষার্থীরাসংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুর আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, “কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’'- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: ঢাকা টাইমস

এবার শিক্ষার্থীরা দফা দাবিতে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবিগুলো হলো২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী ব্যাতীত); সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।  

এদিকে একই দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা বিকাল সোয়া ৫টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবেন। শিক্ষার্থীদের অবরোধে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। 

প্রজ্ঞাপন বাতিল এবং আন্দোলনের সূত্রপাত 

চলতি বছরের ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে। হাইকোর্টের এই রায়ের পর থেকেই উত্তাল হতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় ২০১৮ সালের শুরুতে। দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, ‘সরকার সকল সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৭/০৩/১৯৯৭ তারিখের সম(বিধি-১)এস-৮/৯৫(অংশ-২)-৫৬(৫০০) নং স্মারকে উল্লিখিত কোটা পদ্ধতি নিম্নরূপভাবে সংশোধন করিল:

(ক) ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হইবে; এবং

(খ) ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হইল।’

এদিকে ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট দায়ের করেন অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন, যার শুনানি নিয়ে আজ রায় দিলেন আদালত।

রিটের বিবাদীরা ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, পাবলিক সার্ভিস (পিএসসির) চেয়ারম্যানসহ ছয়জন।

সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি ৩০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলাগুলোর জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৫ শতাংশ মিলিয়ে শতকরা ৫৬ ভাগ কোটা পদ্ধতি চালু ছিল। ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, আধাসরকারি, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয়করণ করা প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময় এ কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করে সরকার। কিন্তু কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা প্রথা বাতিল করে সে ব্যবস্থা পুর্নমূল্যায়ন করতে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ও দুইজন সাংবাদিক। ৫ মার্চ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আবেদনে ভুল রয়েছে মর্মে রিটটি খারিজ করে দেন। এর পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপ ‘কোটা সংস্কার চাই’ এর মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয় ছাত্রসমাজ। যা একপর্যায়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র আন্দোলনের রূপ নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা বাতিলের ঘোষণাও দিতে হয়।

 (ঢাকাটাইমস/০৩জুলাই/এসকে/কেএম)